National news

যাত্রী নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিটাও কি শুধু বাগাড়ম্বরেই সীমাবদ্ধ?

আড়ম্বরে অপরাধ নেই, কিন্তু আড়ম্বর শুধু বাগ্‌যন্ত্রের ক্রিয়াকলাপে সীমাবদ্ধ থাকলে অনেক সময়ই তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ভারতীয় রেল তার প্রমাণ দিল আরও এক বার। কানপুরের কাছে আবার একটা রেল দুর্ঘটনা। ঘুম ভাঙতেই মৃত্যুর খবর, রক্তপাতের খবর।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৯
Share:

রেল দুর্ঘটনা। কানপুরে।

আড়ম্বরে অপরাধ নেই, কিন্তু আড়ম্বর শুধু বাগ্‌যন্ত্রের ক্রিয়াকলাপে সীমাবদ্ধ থাকলে অনেক সময়ই তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ভারতীয় রেল তার প্রমাণ দিল আরও এক বার।

Advertisement

কানপুরের কাছে আবার একটা রেল দুর্ঘটনা। ঘুম ভাঙতেই মৃত্যুর খবর, রক্তপাতের খবর। এক মাসের ব্যবধানে দু’বার। দু’বারই কানপুরের আশেপাশে। এটুকু বললে অবশ্য সামগ্রিক চিত্রটা ফুটে ওঠে না। সম্পূর্ণ ছবিটা খানিকটা ধরা পড়ে, যখন পরিসংখ্যান জানায়, গত আড়াই বছরে ছোট-মাঝারি-বড় মিলিয়ে ২৪৩ বার দুর্ঘটনার মুখে ভারতীয় রেল!

নরেন্দ্র মোদী-সুরেশ প্রভু জমানার প্রথম রেল বাজেটেই যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা শোনা গিয়েছিল। বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে সে সব শোনানো হয়েছিল। কিন্তু বাজনা যতটা শোনা গিয়েছে, খাজনার পরিমাণটা যে তার তুলনায় অকিঞ্চিৎকরই, সে কথা আজ আর প্রমাণ করার দরকার পড়ে না।

Advertisement

বুলেট ট্রেনের অনুকরণে ব্যাগ্রতা রয়েছে, রেলের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে বাগাড়ম্বর রয়েছে, পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভাগুলির জমানায় রেলের শুধু ‘সর্বনাশ’ই হয়েছে, এমন একটা বার্তা চারিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ তাড়না রয়েছে। কিন্তু কথা, প্রতিশ্রুতি আর পরিকল্পনার সাগরের মাঝে নিয়ত যে যাত্রীদের সর্বনাশ চলেছে, সে নিয়ে উদ্বেগ চোখে পড়ে না। আত্মপ্রসাদজনিত এক অদ্ভুত নির্লিপ্তি যেন গ্রাস করছে গোটা সরকারকে!

আসলে বাগাড়ম্বরটাই মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক বা নোট বাতিল, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক বা রেল বিকাশ— সবেতেই কথা অশেষ, প্রচারাকাঙ্খা অনন্ত, রাজনৈতিক লভ্যাংশ অর্জনের তাগিদ বল্গাহীন। কিন্তু রূপায়ণের প্রক্রিয়ায় এক দুর্বোধ্য নির্লিপ্তি। এ ভাবে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা কী করে মেনে নেওয়া যাবে? ভারতীয় রেল তথা ভারত সরকারের দায়বদ্ধতার বোধ কি নিঃশেষে লোপ পেয়েছে? তা না হলে এই নিদারুণ ঔদাসীন্য সম্ভব নয়!

প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার প্রমাণ রাখতে পারছেন না আজ। কেন পারছেন না, তার জবাব দেওয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে বলেও সম্ভবত মনে করছেন না। এ দায়টা শেষ পর্যন্ত সর্বৈব এড়িয়ে যেতে কিন্তু পারবেন না নরেন্দ্র মোদী, সুরেশ প্রভুরা। মানুষ আজও জবাব চাইছেন। কিন্তু এক দিন আর জবাব চাইবেন না, জবাব দেবেন। গণতন্ত্রে তেমনটাই কিন্তু হয়ে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন