News Letter

বিরোধটাকে পিষে দেওয়া যাচ্ছে, তবে ক্ষোভটাকে নয়

গলা টিপে ধরার চেষ্টা হল আবার বিরোধী স্বরের, গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেখলাম আরও এক বার। প্রমাণ হল, অসহিষ্ণুতা শুধু সাম্প্রদায়িকতার রূপ ধরে আসে না, রাজনৈতিক আক্রোশের রূপ ধরেও অসহিষ্ণুতা আসে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩১
Share:

আক্রান্ত: ধাক্কাধাক্কির চোটে রাস্তায় পড়ে বিকাশ ভট্টাচার্য। শনিবার উল্লাসপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

গলা টিপে ধরার চেষ্টা হল আবার বিরোধী স্বরের, গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেখলাম আরও এক বার। প্রমাণ হল, অসহিষ্ণুতা শুধু সাম্প্রদায়িকতার রূপ ধরে আসে না, রাজনৈতিক আক্রোশের রূপ ধরেও অসহিষ্ণুতা আসে।

Advertisement

কোনও বিরোধী স্বর সহ্য করা হবে না, সরকার তথা শাসক দলের কোনও বিরোধিতা চলতে দেওয়া যাবে না, বিরোধের অঙ্কুর উঁকি দেওয়া মাত্র তার বিনাশ ঘটাতে হবে, বিরোধকে মহীরূহ হয়ে উঠতে দেওয়া চলবে না— এই রাজনীতিও আসলে এক নিদারুণ অসহিষ্ণুতাই। তারই শিকার হলেন বামপন্থী নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সেভ ডেমোক্র্যাসি সংগঠনের অন্য সদস্যরা। ভাবাদিঘিতে রেল প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে যে অসন্তোষ, তার প্রতি সংহতি জানাতে যাচ্ছিলেন বিকাশরঞ্জনরা। পথে উল্লাসপুরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের উল্লাস হল, বিরোধী নেতাকে আক্ষরিক অর্থেই ধরাশায়ী করা হল, পুলিশ কার্যত অসহায় দর্শক হয়ে রইল।

বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর দাঁড়িয়ে সরকার গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে তৃণমূলের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের কথা শাসক দলের নেতারা সদর্পে উচ্চারণ করছেন বার বার। তাও বিরোধী স্বর দেখলেই এত আতঙ্ক কীসের? রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যদি কেউ আইনি লড়াইয়ে নামেন, তা হলেই বা আপত্তি কেন?

Advertisement

দুর্নীতি বা অপশাসন বা প্রশাসনিক ভ্রান্তি না থাকলে সরকারকে আদালতে টেনে নিয়ে গিয়ে অপদস্থ করার সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ কোনও সরকার যদি আদালতে বার বার অপদস্থ হয়, তা হলে তার আয়নার সামনে দাঁড়ানোর দরকার পড়ে। ঘরে আয়না না থাকলে, বিরোধী কণ্ঠস্বরের প্রতিফলনে আয়নাটা খুঁজে নেওয়া যায়। কিন্তু বিরোধীর স্বরে জেগে থাকা সেই আয়নাটাকেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল গোঘাটে।

হালফিলের কিছু ‘তাত্ত্বিক’ বলেন, দাপট ধরে রাখাই রাজনৈতিক সাফল্য। সেই তত্ত্বে শাসকের বিশ্বাস রয়েছে বলেই বোধ হয় বিধানসভার ভিতরে আক্রান্ত হন বিরোধী দলনেতা, বাইরে আক্রান্ত হন নেতা-আইনজীবী। এই ‘রাজনৈতিক দাপট’ বিরোধের অঙ্কুরগুলোকে দেখা মাত্র পিষে দিতে পারবে হয়তো। কিন্তু ক্ষোভের অঙ্কুরগুলো অলক্ষ্যেই মহীরূহ হয়ে উঠবে ক্রমশ। সে মহীরূহের ছায়া কিন্তু বনস্পতির মতো সুশীতল হবে না, সে ছায়াপাত অন্ধকার নামাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন