Editorial News

আবার বীভত্সতা! স্কুল প্রশাসন দায় এড়াবে কী ভাবে?

বীভৎসতা এবং বিকৃতি কী ভাবে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে। চার বছরের শিশুরও রেহাই নেই যৌন বিকারের হাত থেকে। আর জঘন্য অপরাধটার অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বড় দুঃসময় আজ। পর পর দু’দিন কলম ধরতে হল ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির বীভৎসতার আবহে। কলম ধরতেই হল আজও এই বিষয়েই। নিরাপদ কেন বোধ করবেন না নাগরিক নিজেকে? প্রশ্ন তুলতে হয়েছিল আগের দিন। আজও একই প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে, কিন্তু পটভূমিটার অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে। কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন? প্রশ্নটা তুলতে হচ্ছে আজ এই ভাবে।

Advertisement

চণ্ডীগড়ের ক্ষত সামলে উঠতে পারেনি দেশ এখনও। কলকাতা রক্তাক্ত হল তার মধ্যেই আবার। চার বছরের শিশুর উপর যৌন নির্যাতন, অভিযোগের আঙুল দুই শিক্ষকের দিকে।

বীভৎসতা এবং বিকৃতি কী ভাবে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে। চার বছরের শিশুরও রেহাই নেই যৌন বিকারের হাত থেকে। আর জঘন্য অপরাধটার অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে? দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে! কল্পনাতীত অধঃপতন, অবক্ষয় এবং অন্ধকার।

Advertisement

আরও পড়ুন

স্কুলেই যৌন নির্যাতন, দুই শিক্ষককে চেনাল ছাত্রী, গ্রেফতার

কলকাতার নামী এবং দামি স্কুলের এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা গোটা শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কে কতটা নিরাপদ? আদৌ কি নিরাপত্তার কোনও স্পষ্ট আশ্বাস রয়েছে? কোনও আশ্বাসেই কি আর আস্থা রাখা যাচ্ছে? ঘরে ঘরে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আবহে আতঙ্কের ধ্বনি টের পাওয়া যাচ্ছে যেন।

প্রশ্ন হল, নিরাপদ বোধ করতে পারব না কেন আমরা? পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে না কেন? কেন ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্ক মাথাচাড়া দেবে? কেন বীভৎসতা দুঃস্বপ্নের মতো হানা দেবে বার বার? কেন প্রতিরোধ করতে পারব না আমরা? এই বীভৎস ঘটনাগুলো ঠিক কতটা নিন্দনীয়, সে নিয়ে তর্ক বা আলোচনার তো কোনও অবকাশই নেই। কিন্তু ঘটনাগুলো যে পর পর ঘটছে এবং দেশের নানা প্রান্তে ঘটছে, সেও তো আমরা সকলেই জানি। অতএব আরও সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত। এত বড় প্রতিষ্ঠান চলছে, এত পড়ুয়া, এত শিক্ষক, এত কর্মী, এত মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ হচ্ছে— সেখানে উপযুক্ত নজরদারিটা থাকবে না? স্কুল কর্তৃপক্ষ তথা স্কুল প্রশাসন সকলের উপযুক্ত খেয়াল রাখবে না? কর্মীরা কে কেমন, জানবেন না ঊর্ধ্বতন? পড়ুয়ারা ঠিক কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে, সে নিয়ে যথেষ্ট ভাবিত থাকবে না স্কুল প্রশাসন? স্কুল জুড়ে সর্বত্র সিসিটিভি নজরদারি থাকবে না, নিরাপত্তারক্ষীরা থাকবেন না? এ সব যে ছিল না পর্যাপ্ত এবং কাঙ্খিত মাত্রায়, সে কথা স্পষ্ট। দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাই স্কুল প্রশাসনও দায় এড়াতে পারবে না।

চণ্ডীগড় গণধর্ষণের প্রেক্ষিতে কিরণ খের প্রশ্ন তুলেছিলেন, আক্রান্ত তরুণী আরও বেশি সতর্ক হননি কেন? চণ্ডীগড়ের জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের তরফ থেকে কিরণ খেরের প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল— প্রশাসন কেন শহর জুড়ে পর্যাপ্ত নজরদারি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে পারেনি? দক্ষিণ কলকাতার নামী এবং দামি স্কুলটির পড়ুয়াদের হয়েও ঠিক এই রকমই একটা প্রশ্ন তোলা দরকার— স্কুল প্রশাসন কেন পড়ুয়াদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারছে না? শুধু পঠন-পাঠন নয়, স্কুল চত্বরে পড়ুয়াদের সুরক্ষিত রাখাও স্কুল প্রশাসনেরই দায়িত্ব। অভিযোগ হয়তো দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিন্তু আবার বলছি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটার দায় স্কুল প্রশাসনও এড়াতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন