National News

বৃহতের অসম্মানে ক্ষুদ্রতাই প্রকট হয়

ধর্ম-বর্ণ-জাতি-সম্প্রদায়-ভাষার ঊর্ধ্বে সমগ্র দেশের নেতা যাঁরা, তাঁদের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে টেনে আনার প্রয়াসে বৃহতের মহত্ত্ব কোথাও খর্ব হয় না, শুধু নিজের ক্ষুদ্রতাই প্রকট করে ফেলা হয়, এটা বোঝার বোধহয় প্রয়োজন রয়েছে। ‘বানিয়া’ শব্দের অর্থ ব্যবসায়ী, এ ভাবেও তার ব্যাখ্যা সম্ভব, গাঁধীজিকে সেই দৃষ্টিতে দেখানোর সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখা উচিত ছিল অমিত শাহের।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৪:২৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

ম্যাডিসন স্কোয়ারের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, গাঁধীজি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, আমরা তাঁকে কী দিয়েছি? প্রশ্নটার উত্তরের সন্ধান নানান জনে নানান ভঙ্গিতে হয়ত করেছেন। কিন্তু মোদীর সতীর্থ, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ শনিবার গাঁধীজির উদ্দেশে যে সম্ভাষণ করলেন, যে ‘সম্মান’ দিলেন, তাতে গোটা দেশ স্তম্ভিত। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, এ দেশের আপামর মানুষের কাছে জাতির জনক, অমিত শাহের সম্ভাষণে হয়ে গেলেন ‘চতুর বানিয়া’!

Advertisement

সংশয় নেই, গাঁধীজির জন্ম হয়েছিল গুজরাতের বানিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে। কিন্তু সেইটুকুই মাত্র। গাঁধীজি গোটা দেশের কাছে কোনও এক সম্প্রদায়, কোনও এক ধর্ম, কোনও এক প্রদেশের প্রতিভূ নন। শুধু তিনি কেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হিন্দু বাঙালি নেতা ছিলেন না, ভগৎ সিংহ পঞ্জাবি শিখ প্রতিনিধি নন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মুসলিম নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-সম্প্রদায়-ভাষার ঊর্ধ্বে সমগ্র দেশের নেতা যাঁরা, তাঁদের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে টেনে আনার প্রয়াসে বৃহতের মহত্ত্ব কোথাও খর্ব হয় না, শুধু নিজের ক্ষুদ্রতাই প্রকট করে ফেলা হয়, এটা বোঝার বোধহয় প্রয়োজন রয়েছে। ‘বানিয়া’ শব্দের অর্থ ব্যবসায়ী, এ ভাবেও তার ব্যাখ্যা সম্ভব, গাঁধীজিকে সেই দৃষ্টিতে দেখানোর সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখা উচিত ছিল অমিত শাহের। ‘চতুর’ বিশেষণও যে ইতিবাচক ভঙ্গিতে ব্যবহার হয় না, ধুরন্ধর রাজনীতিক কি সেটাও বোঝেন না?

অমিত শাহ কী বলতে চেয়েছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল, সেই চর্চা এখন গৌণ হয়ে পড়েছে। দেশ জুড়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া নিশ্চয়ই শাহের উদ্দেশ্য ছিল না, এ কথা যদি ধরে নেওয়া যায়, তবে একই সঙ্গে এটাও আবার স্পষ্ট হয়, ভাষার উপর নিয়ন্ত্রণ সর্ব স্তরে তো বটেই, রাজনীতিকের জন্য কতটা জরুরি। এই দেশ যাঁকে বাপু বলে ডেকেছে, তাঁর সম্পর্কে একটি শব্দের উল্লেখেও যে সম্ভ্রম ও সম্মান থাকা দরকার, সেটা বিজেপি সভাপতি নিশ্চয়ই জানেন। ‘চতুর বানিয়া’ সম্ভাষণ তার উল্টো পথে হাঁটতে বাধ্য করল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন