State news

আলো দেখা যায়নি, তবে আঁধার ফিকে হয়েছে

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই। ক্রিয়া থাকবে, প্রতিক্রিয়া সাংঘাতিক হবে, সঙ্ঘাতও হয়তো বিরাট রূপ নেবে, কিন্তু আলোচনার দরজাটা কখনও বন্ধ হবে না। আইনের শাসন বহাল রাখার প্রশ্নে সব পক্ষ সমান দায়বদ্ধতা দেখাবে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৯
Share:

উত্তরকন্যায় চলছে বৈঠক।— নিজস্ব চিত্র।

জট এখনও জটিল। তবু আবহটা ইতিবাচকই ঠাহর হল। সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসাই দুরূহ বিষয় ছিল কিছু দিন আগে পর্যন্ত। পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে ২৯ অগস্ট নবান্নে যে সর্বদল বৈঠক হয়েছিল, সে বৈঠকে যোগই দিতে চায়নি বিমল গুরুঙ্গ-রোশন গিরি শিবির। বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারা আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন বলে তাঁদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে দেগে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর উত্তরকন্যায় যখন দ্বিতীয় সর্বদল বৈঠক, তখন আকাশ-পাতাল ফারাক হয়ে গিয়েছে পরিস্থিতিতে। সর্বদল বৈঠক বয়কটের কোনও প্রশ্নই ছিল না কোনও তরফে। বরং এত দিন বৈঠকের বিরোধিতা করে আসা শিবির এবারের বৈঠকে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব তৎপরতা দেখাল। ইতিবাচক সাড়া দিল রাজ্য সরকারও। বিমল গুরুঙ্গদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক যতই তলানিতে পৌঁছক, গুরুঙ্গ-পন্থীদের জন্য বৈঠকের দরজা উদার হস্তে খুলে দেওয়া হল। সাধুবাদ অতএব সব পক্ষকেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাহাড় নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক, ফের বৈঠক পুজোর পর

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই। ক্রিয়া থাকবে, প্রতিক্রিয়া সাংঘাতিক হবে, সঙ্ঘাতও হয়তো বিরাট রূপ নেবে, কিন্তু আলোচনার দরজাটা কখনও বন্ধ হবে না। আইনের শাসন বহাল রাখার প্রশ্নে সব পক্ষ সমান দায়বদ্ধতা দেখাবে।

Advertisement

এই আইনের শাসন বহাল রাখার দায়বদ্ধতাকেই কোনও কোনও পক্ষ অস্বীকার করছিল পাহাড়ে। সঙ্ঘাত সেই কারণেই যাবতীয় গণতান্ত্রিক সীমাকে লঙ্ঘন করছিল। চাপে পড়ে হোক বা উপলব্ধি থেকে, সীমা লঙ্ঘনের সেই চেষ্টা কিন্তু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি। উত্তরকন্যায় আয়োজিত সর্বদল বৈঠকের আবহটা তাই আগের সর্বদলের চেয়ে ইতিবাচকই ঠেকল দিনের শেষে। বন্‌ধ বহাল রাখতে এখনও মরিয়া গুরুঙ্গরা। পৃথক গোর্খাল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনও কিছুর প্রতিশ্রুতিতেই আন্দোলন প্রত্যাহারে তাঁরা নারাজ। রাজ্য সরকারও পাল্টা অনড় অবিভাজ্য বাংলা তত্ত্বে। তবু আলোচনা হল, সব পক্ষই অংশ নিল, সবাই স্পষ্ট করে নিজের নিজের মত প্রকাশ করলেন, রফা মিলল না বলে পরবর্তী সর্বদল বৈঠকের তারিখও স্থির হল।

পাহাড়ে ভোরের আলো ফুটল, এমনটা বলছি না। তবে গাঢ় অন্ধকার ফিকে হল অনেকটাই, রাত বহাল থাকলেও আকাশে আভা দেখা দিল। পাহাড় সমস্যার সমাধানে সব পক্ষই যে এখন আলোচনার প্রয়োজনীয়তাকে মান্যতা দিচ্ছে, উত্তরকন্যার বৈঠকের পর তা স্পষ্ট। গণতন্ত্রে আলোচনার ভিত্তিতে অভিন্ন গন্তব্য খুঁজে নেওয়াই যে শেষ পথ, তা অস্বীকার করার কোনও চেষ্টা আর দেখা গেল না। অসহিষ্ণু আস্ফালন নয়, ধৈর্যের সঙ্গে পা ফেলার নীতিতেই সিলমোহর পড়ল সব তরফ থেকে। সাধুবাদ অতএব সব পক্ষকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন