বন্ধ এটিএমের সামনে লাইন গ্রাহকদের। —নিজস্ব চিত্র।
টানটান রাজনৈতিক চিত্রনাট্য নোট সঙ্কট ঘিরে। চূড়ান্ত জনবিরোধী, স্বৈরাচারী, অঘোষিত জরুরি অবস্থা— এই ভাষাতেই তীব্র আক্রমণে বিরোধী। ঝাঁঝালো প্রত্যাঘাতে সরকার বলছে— চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত, কালো টাকার কারবারি আর লুটেরা বলেই ওঁরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতায়।
কিন্তু সরকার আর বিরোধীর এই তুমুল স্পর্ধা-প্রতিস্পর্ধার মাঝে সেই হরিপদ কেরানি কোথায় গেলেন? তাঁকে ঘিরেই তো সব। তাঁর কল্যাণে সরকারি পদক্ষেপ, তাঁর হয়রানি লাঘবেই বিরোধীর শোরগোল। কিন্তু হরিপদ কেরানি বুঝতে পারছেন না, দিনটা কখন শুরু হচ্ছে আজকাল, কখনই বা শেষ হচ্ছে তাঁর। সাতসকালে উঠে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর তোড়জোড় বেশি জরুরি, না মধ্যরাতে এটিএম-এর সামনে সারিবদ্ধ হওয়া অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ, গুলিয়ে যাচ্ছে। রোজ সকালে থলে হাতে বাজারে যাওয়ার অভ্যাসটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কি না ভাবতে হচ্ছে। বাজার-দোকানে গিয়েও হাত খুলবেন কতটা, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, তাঁর কাছে ভবিষ্যতটা স্পষ্ট নয়। আর কতগুলো দিন এমন কাটবে, নোট সঙ্কটের সঙ্গে আর ক’টা দিন যুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নেওয়া সময়সীমাটা শেষ হলে পরিস্থিতির কতটা বদল হবে, স্পষ্ট নয় তাঁর কাছে।
নোট সঙ্কট ঘিরে জনজীবনে যে দৈনন্দিন বিভ্রাট, তা নিয়ে কিন্তু নাগরিক এখনও অসন্তোষ সে ভাবে দেখাননি। বরং সহযোগিতার পথেই হেঁটেছেন। হরিপদ কেরানিদের এই অকুণ্ঠ সহযোগিতার প্রতি সুবিচারটা এ বার সরকারকে করতে হবে। নাগরিকের জীবনে সুস্থিতি ফেরাতে হবে, নোট সঙ্কট শুরু হওয়া ইস্তক নাগরিকের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ওঠা অস্বস্তিটা কাটাতে হবে। তার জন্য হয় অবিলম্বে নগদের সমস্যা সম্পূর্ণ মিটিয়ে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফেরাতে হবে। না হলে, নাগরিকের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জাগাতে হবে যে তাঁর এই লড়াই শুধুমাত্র পঞ্চাশ দিনের। বিশ্বাস জাগাতে হবে যে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নেওয়া সময়সীমাটার ও পারে অপেক্ষায় রয়েছে এক টানটান ভবিষ্যৎ।
সরকারের কাছে তাঁর গন্তব্য এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর পথনির্দেশটা স্পষ্ট। কিন্তু সাধারণ নাগরিকের কাছে এর অনেকটাই ধোঁয়াশায় ঢাকা। তাই নাগরিকের মনে দৃঢ় বিশ্বাস বা অগাধ প্রত্যয় তৈরি করার কাজটা এ মুহূর্তে বেশ কঠিন।
কঠিন হলেও এ দায়িত্বটুকু সরকারকে নিতেই হবে। কোন পথে এই প্রত্যয় জাগানো সম্ভব, তা সরকারকেই খুঁজে বার করতে হবে।