পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদব।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করল নিঃসন্দেহে। ক্ষমতাশালী হলেই আইনের ঊর্ধ্বে, প্রভাবশালী হলেই বিচারালয়ের রায়কে পক্ষে টানা যায় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে— এমন অভিযোগ যে অনেকাংশেই সত্য নয়, সে কথা আরও এক বার প্রমাণ হল। সুপ্রিম কোর্ট জানাল, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি তছরুপের মামলায় লালুপ্রসাদ যাদব এক বার জেল খেটেছেন বলে ওই কাণ্ডের অন্য কোনও তছরুপে আর তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা যাবে না, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যতগুলি তছরুপের অভিযোগ সামনে আসবে, প্রয়োজনে তত বারই বিহারের যাদব কুলপতিকে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে, স্পষ্ট করে দিল সর্বোচ্চ আদালত।
বিহারে পশুখাদ্য সরবরাহের নামে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ তছরুপের যে অভিযোগ নব্বই-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ভারতের রাজনীতিকে, সেই অভিযোগই আবার কাঁপিয়ে দিচ্ছে লালুপ্রসাদকে। তছরুপ নাকি হয়েছিল জেলায় জেলায়। একটি তছরুপ মামলায় বিহারের যাদব কুলপতি ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাতেই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ সম্পন্ন হয়নি সম্ভবত। পশুখাদ্যের নামে হওয়া আরও এক তছরুপ অস্বস্তির নতুন কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। লালুপ্রসাদের দোষ বা অপরাধের প্রশ্ন যদি দূরে সরিয়েও রাখা হয়, তা হলেও প্রশ্ন ওঠে, বিচারের মুখোমুখি হতে সমস্যা কোথায়? অপরাধ যদি না ঘটে থাকে আদৌ, আদালতের পরীক্ষায় সসম্মানে উতরে যেতে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কাঠগড়ায় দাঁড়াতে রাজি নন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়াই থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তিনি। সন্দেহের উদ্রেক হবে বই কি!
সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু বলিষ্ঠ পদক্ষেপই করল। অভিযুক্ত কে, তা বড় হয়ে দাঁড়াল না। অভিযোগ কী, তা-ই প্রাধান্য পেল। আইনের চোখে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকই যে অভিন্ন, সে বার্তা স্পষ্ট ভাবেই এল। শুধু বিচারবিভাগের নয়, গণতন্ত্রের বলিষ্ঠতাও আরও এক বার প্রমাণিত হল।