Editorial News

এই দৃষ্টান্ত কিন্তু খুব একটা স্বাস্থ্যকর হল না

যে সময়ে এবং যে পরিস্থিতিতে অলোক বর্মাকে সিবিআইয়ের শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা একগুচ্ছ প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য। অপসারণের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অলোক বর্মাকে সরানোর জন্য যে তাড়াহুড়োটা দেখালেন প্রধানমন্ত্রী, তার কী প্রয়োজন ছিল?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৪
Share:

অলোক বর্মা। ফাইল চিত্র।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পদ ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পর ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সিবিআই প্রধান পদ থেকে ফের অপসারিত অলোক বর্মা। যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ায় অলোক বর্মাকে এ বার সরানো হল, তাতে গলদ খুঁজে বার করা কঠিন। তিন জনের যে কমিটি সিবিআই প্রধানকে নিয়োগ করে, সেই কমিটির বৈঠক ডেকেই বর্মার অপসারণের সিদ্ধান্ত পাকা করা হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়া যাই হোক, সামগ্রিক পরিস্থিতিটা মোটেই সুখকর হল না।

Advertisement

যে সময়ে এবং যে পরিস্থিতিতে অলোক বর্মাকে সিবিআইয়ের শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা একগুচ্ছ প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য। অপসারণের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অলোক বর্মাকে সরানোর জন্য যে তাড়াহুড়োটা দেখালেন প্রধানমন্ত্রী, তার কী প্রয়োজন ছিল?

অলোক বর্মা যে খুব মসৃণ ভাবে সিবিআই থেকে বিদায় নিলেন, তা কিন্তু নয়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো তোপ দেগেই তিনি বিদায় নিয়েছেন। সমস্যাটা এখানেই। সিবিআই দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির একটি। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান আঙুল তুলে দিচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিকে, প্রধানমন্ত্রীও তড়িঘড়ি অপসারণের ব্যবস্থা করছেন সিবিআই প্রধানের— এই দৃশ্যপট মোটেই কোনও ইতিবাচক দৃশ্যপট নয়। বর্তমান শাসকের জমানায় দেশের বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থার স্বশাসন বা আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ উঠছে। এ দেশের শাসন কাঠামোর জন্য এটা ঠিক নয়। সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানগুলো বা দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা যদি এ ভাবে পরস্পরের সঙ্গে লড়তে থাকে বা থাকেন, তা হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোটার মর্যাদা সাংঘাতিক ভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভারতের শাসন কাঠামোয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। এই সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্যতম বড় শক্তি। প্রতিটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাই নিজেদের গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করে। পরস্পরের সঙ্গে সঙ্ঘাত এড়িয়েই চলার চেষ্টা করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হল এই ভারসাম্য। কিন্তু মোদী জমানায় যে ভাবে সরকার সর্বময় কর্তৃত্বসম্পন্ন হওয়ার চেষ্টা করছে, যে ভাবে নিজের গণ্ডির বাইরেও সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে, যে ভাবে বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে বার বার যেন একটা সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে কখনও সঙ্ঘাত তৈরি হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, কখনও সঙ্ঘাত তৈরি হচ্ছে সিবিআইয়ের, কখনও অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই পারস্পরিক সঙ্ঘাত দেশের জন্য অশনিসঙ্কেতই বয়ে আনে।

ভারতীয় উপমহাদেশে বা তার আশপাশে থাকা অন্যান্য দেশগুলোয় গণতন্ত্রের চেহারা খুব সুসংহত নয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সঙ্ঘাত অথবা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা সংবিধান লঙ্ঘন এই পরিস্থিতির অন্যতন প্রধান কারণ। প্রায় গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে এই প্রবণতার মাঝে ভারত একা অন্য রকম। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় গণতন্ত্র মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছে এবং ক্রমশ পরিণত হয়েছে কারণ, সর্বোচ্চ রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আচরণগত ভারসাম্য বহাল রেখেছে। আবার বলি, সিবিআই প্রধানের পদ ঘিরে যে অপ্রীতিকর কুনাট্যরঙ্গটা চলল, তা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে বা ভারতীয় রাষ্ট্রের পক্ষে কোনও স্বাস্থ্যকর দৃষ্টান্ত তৈরি করল না।

আরও পড়ুন: বদলি নিয়ে কামান দেগে ইস্তফা বর্মার

আরও পড়ুন: মোদীর মাথাব্যথা হচ্ছেন অলোক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement