নয়াদিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতর। ছবি: পিটিআই।
এই পরিস্থিতি অভূতপূর্ব। এমন গভীর সঙ্কটের ঘেরাটোপে আগে কখনও পড়েনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই-এর অন্দরে যা ঘটল, সংস্থার মর্যাদা, শৃঙ্খলা এবং ভাবমূর্তির জন্য তা অত্যন্ত নেতিবাচক।
সিবিআই সঙ্কটে পড়েছে বলেই পরিস্থিতিকে নেতিবাচক বলতে হচ্ছে, এমন নয়। সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়া বা সঙ্কটের মোকাবিলা করা আমাদের দৈনন্দিনতারই অঙ্গ। কিন্তু যে সঙ্কটে সিবিআই পড়ল, প্রকৃতিগত ভাবেই তা অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
সত্যানুসন্ধান যে সংস্থার মূল কাজ, সেই সংস্থার অন্দরমহলে এত অস্বচ্ছতা? ঠিক এ ভাবেই উঠে আসছে প্রশ্নটা এ বার। সিবিআই-এর নিরপেক্ষতা বা স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় এই প্রথম বার তৈরি হল, এমন নয়। আগেও অনেক বার সংশয় প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন শিবির থেকে। সিবিআই-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও একাধিক অবকাশে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি বা অপরাধের বিরুদ্ধে অতন্দ্র থাকা যে সংস্থার কর্তব্য, সেই সংস্থার দুই শীর্ষ কর্তা পরস্পরের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন, সিবিআই-এর এক আধিকারিককে আর এক আধিকারিক গ্রেফতার করছেন, সংস্থা আড়াআড়ি বিভাজনের মুখে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে— এমনটা আগে ঘটেনি।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
অলোক বর্মা ঠিক বলছেন, নাকি রাকেশ আস্থানা, তার ফয়সলা এখনও হয়নি। কিন্তু দু’জনেই ভুল বলছেন, এমনটা তো হতে পারে না। দু’জনের মধ্যে কোনও এক জন নিশ্চয়ই ঠিক বলছেন। এটুকু বুঝলেই তো খুব স্পষ্ট করে অনুধাবন করা যায় যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একেবারে শীর্ষস্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে দুর্নীতি। হয়তো অনেক আগেই দুর্নীতি সিবিআই-এর শীর্ষস্তর স্পর্শ করেছে। কিন্তু এমন পাথুরে প্রমাণের মুখোমুখি হওয়া তো অভূতপূর্ব। অতএব সরকারের অস্বস্তিটাও অভূতপূর্ব।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের স্বশাসন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক অভিযোগ অলোক বর্মার
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ‘অভ্যুত্থান’ সিবিআই দফতরে, কী ভাবে কী হল...
পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। বিলম্বে হলেও হস্তক্ষেপ যে হল, সে ভাল কথা। কিন্তু সেই হস্তক্ষেপ নিয়েও তো গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অলোক বর্মা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁকে যে ভাবে দায়দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য আদালতকে জানিয়েছেন অলোক বর্মা। আরও একটা বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরেছেন সিবিআই কর্তা এবং সে বক্তব্য অত্যন্ত গুরুতর। সিবিআই-এর স্বশাসনের সঙ্গে বার বার আপোস হচ্ছে এবং উচ্চ পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগের তদন্ত যখনই সরকারের পছন্দের পথ ধরে এগোচ্ছে না, তখনই স্বশাসন ধাক্কা খাচ্ছে— সর্বোচ্চ আদালতে পেশ করা আবেদনে এমনই অভিযোগ তুলেছেন ছুটিতে থাকা সিবিআই কর্তা।
অলোক বর্মার এই বক্তব্য বা এই অভিযোগের সত্যাসত্য এখনও বিচার্য, সে কথা ঠিক। সুপ্রিম কোর্ট নিশ্চয়ই সঠিক দিশায় নিয়ে যাবে এ বিতর্ককে। কিন্তু সিবিআই-এর মতো সংস্থার সর্বোচ্চ পদটি এত দিন সামলাচ্ছিলেন যে ব্যক্তি, তিনিই সরকারের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ আনছেন— এই পরিস্থিতির তাৎপর্য অপরিসীম। সরকারের জন্য মোটেই স্বস্তিতে থাকার মতো নয় পরিস্থিতিটা।
যে অভিযোগটা উঠল এবং সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ সঙ্কটটার নেপথ্যে শাসক দলের তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের তত্ত্ব নিয়ে যে ভাবে জোরদার চর্চা শুরু হল, তা যে সরকারের মুখটাকে উজ্জ্বল করছে না, সে কথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। স্বচ্ছতার প্রমাণ দেওয়ার দায়টা তাই এ বার সরকারের কাঁধেই বর্তাচ্ছে।