নিয়োগনাট্য

অনিশ্চয়তার চিত্র অবশ্য শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে নহে, সরকারি চাকুরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচিত-চিত্র হইয়া দাঁড়াইতেছে। গত মাসে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করিবার দাবিতে সল্টলেকের স্কুল সার্ভিস কমিশন অফিসের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করা হইয়াছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share:

এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের অনশনে সন্তানকে জল খাওয়াচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা সোমা প্রামাণিক।

অনশন আন্দোলন— স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকুরিপ্রার্থীদের চাকুরির দাবিতে অনশনকারীর সংখ্যাটিও নগণ্য নহে, চারশত’র কাছাকাছি। কিন্তু সপ্তাহ পার হইল, উপযুক্ত সমাধানসূত্র মিলে নাই। সম্প্রতি এসএসসি-র পক্ষ হইতে এই মাসেই তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হইয়াছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরে নাই। এ হেন অনাস্থার কারণ কী? উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ তো সাধারণ নিয়ম অনুসারেই হইবার কথা। শূন্য শিক্ষকপদের সংখ্যা বিচার করিয়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারি হইতে আরম্ভ করিয়া যোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ পর্যন্ত একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি বর্তমান। কিন্তু যাহা স্বাভাবিক ও নিশ্চিত, ক্ষেত্রবিশেষে তাহাও অ-নিশ্চিত হইয়া পড়ে। অনাস্থার জন্ম সেইখানে। কিছু বৎসর যাবৎ এসএসসি-র ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতিটি সাধারণ নিয়ম মানিতেছে না বলিয়া অভিযোগ। অভিযোগ একটি নহে, অনেকগুলি। যেমন, মেধা তালিকা প্রকাশে স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রহিয়াছে। পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হইতেছে না। কিছু জেলায় মেধা তালিকা প্রকাশ না-করিয়াই নবম ও দশম শ্রেণির কাউন্সেলিং হইতেছে বলিয়া গত বৎসর মামলাও হইয়াছে। নবম হইতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বহু শিক্ষকপদ শূন্য। শিক্ষামন্ত্রীও শূন্য পদ দ্রুত পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করিতে বলিয়াছেন। অথচ তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং এখনও শুরু হয় নাই। প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা নিয়োগপত্র পাইবার আশায় দীর্ঘ অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছেন। আবার, শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র হাতে পাইয়াও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে চাকুরিপ্রার্থীরা কাজে যোগ দিতে পারেন নাই। অর্থাৎ অব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তার ছবিটি প্রকট।

Advertisement

অনিশ্চয়তার চিত্র অবশ্য শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে নহে, সরকারি চাকুরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচিত-চিত্র হইয়া দাঁড়াইতেছে। গত মাসে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করিবার দাবিতে সল্টলেকের স্কুল সার্ভিস কমিশন অফিসের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করা হইয়াছিল। সম্প্রতি সেখানে নথি যাচাইয়ের কাজটি শুরু করিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হইয়াছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এসএসসি-র ওয়েবসাইটে ঘোষিত প্রার্থী-তালিকায় বিস্তর গরমিলের অভিযোগ উঠিয়াছে। একই ভাবে, কলেজ সার্ভিস কমিশনের অবস্থাও অতিরিক্ত দীর্ঘসূত্রতার ভারে জর্জরিত।

ইহা তো শিক্ষাক্ষেত্রের অবস্থা। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিয়োগ চিত্রটিও আদপেই আশাব্যঞ্জক নহে। সম্প্রতি নার্সিং-পদে ওবিসি-বি শ্রেণির প্রার্থীরা নিয়োগ-তালিকায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলিয়া স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁহাদের দাবি, রেজিস্ট্রেশন নাই, এমন অনেকে নিয়োগ সংক্রান্ত তালিকায় স্থান পাইয়াছেন, অথচ বৈধ রেজিস্ট্রেশনধারীরা পান নাই। অর্থাৎ, দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ। দাবির সত্যতা বিচারের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু অভিযোগ, তজ্জনিত বিক্ষোভ, ঘেরাও, মামলার চাপে পরিষেবার নাভিশ্বাস উঠিবার জোগাড়। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও, শিক্ষার ক্ষেত্রেও। অথচ, যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের মাধ্যমে যাহাতে পরিষেবার মান উৎকৃষ্ট হয়, সে জন্যই নানা সময় বিভিন্ন বোর্ড, কমিশন তৈরি হইয়াছিল। উদ্দেশ্যটি সফল হয় নাই। নিয়োগ সংক্রান্ত অব্যবস্থায় বহু পদ ফাঁকা থাকিবার ফলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মান ক্রমশ তলানিতে নামিতেছে। এবং এক আপাত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির শিকড়ও বৃদ্ধি পাইতেছে। পরিস্থিতি সামলাইবার দায়িত্ব প্রশাসনের। বোর্ড অথবা কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ জমা পড়িলে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককেই রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠিয়া দ্রুত ব্যবস্থা করিতে হইবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে অব্যবস্থা চলিতেই থাকিবে আর যোগ্য প্রার্থীরা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য পথে নামিবেন— ইহা দীর্ঘ দিন চলিতে দেওয়া যায় না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন