রাজস্ব নেই, বিদেশি লগ্নি নেই, আর্থিক ঘাটতি ভয়াবহ

একদা সিঙ্গল ব্র্যান্ড বিলগ্নিকরণের ঘোরতর বিরোধী মোদী এখন সে পথেই হাঁটলেন। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালএকদা সিঙ্গল ব্র্যান্ড বিলগ্নিকরণের ঘোরতর বিরোধী মোদী এখন সে পথেই হাঁটলেন। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share:

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, টাকার দাম কমার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। টাকার দাম কমে গেলে বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ এখনই ভারতীয় বাজার থেকে প্রত্যাহৃত হয়ে যাবে। ফাইল ছবি।

কেমন আছেন প্রধানমন্ত্রী? নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। সাড়ে তিন বছর পর প্রতিটি শাসনের মতোই এ বার ইন্টারভেলের পর তিনি হ্যাপি আওয়ার্স শেষ করে এ বার প্রতিকূল অধ্যায় শুরু করেছেন। ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট। অর্থনীতির অবস্থা ভাল নয়। সে দিন সাউথ ব্লকে গিয়েছিলাম, অনেক দিন পর আড্ডা হচ্ছিল এক আমলার সঙ্গে। বলছিলেন, দেশের অর্থনীতি নিয়ে তিনি এখন বেশ উদ্বিগ্ন। রাজস্ব নেই। রাজস্ব কোথায়? বিদেশি লগ্নি নেই। দেশের ভিতর রাজস্ব নেই। আর্থিক ঘাটতি এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। এমনও প্রস্তাব আসে তবে কি আবার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভারতকে ঋণ নিতে হবে? যেমন মনমোহন নিয়েছিলেন আইএমএফ-এর কাছ থেকে। একদা প্রণববাবুও তো নিয়েছিলেন। এই প্রস্তাবে নাকি প্রধানমন্ত্রী খুবই অসন্তুষ্ট হন। তিনি বলেছেন, আমি গুজরাতি। গুজরাতে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে উত্সাহী হয় না। সাবেক রক্ষণশীল মানুষ আমরা।

Advertisement

তা হলে? প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, টাকার দাম কমার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। টাকার দাম কমে গেলে এই বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ এখনই ভারতীয় বাজার থেকে প্রত্যাহৃত হয়ে যাবে। সে-ও এক প্রবল আশঙ্কা। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী তাড়াহুড়ো করে সিঙ্গল ব্র্যান্ড পণ্যে বিদেশি বিলগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তও তো এই একই কারণে করা হয়েছে। এর আগে হোটেল জনপথের বেসরকারিকরণ হল। নগরোন্নয়ন মন্ত্রক কিনে নিল জনপথ হোটেল। সে-ও কিন্তু মাছের তেলে মাছ ভাজা। সরকারের এক দফতর অন্য দফতরের প্রতিষ্ঠান কিনছে। এতে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ছে কোথায়?

ওই আমলা বলছিলেন দুর্নীতির প্রশ্নেও নরেন্দ্র মোদী খুবই সংবেদনশীল। তাই যে কোনও প্রতিষ্ঠান দুমদাম বিক্রি করতে চান না। নানা দিক থেকে তার বিচার বিশ্লেষণ করেন। টেন্ডার হবে, আবার সেই টেন্ডারও দশ জনের কমিটি তদন্ত করবে। যদি ২০১৯ সালের আগে কোনও ডিল নিয়ে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায় তবে সে-ও তো এক বড় বিপদ। তবে প্রধানমন্ত্রী একদা রিটেলে বিলগ্নিকরণের ঘোরতর বিরুদ্ধে ছিলেন। শুধু মাল্টি ব্র্যান্ড নয়, সিঙ্গল ব্র্যান্ডেও বিলগ্নিকরণের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন তিনি। বলেছিলেন, গুজরাতি ব্যবসায়ীরা নিজেদের চর্মশিল্পে চোখে সরষে ফুল দেখবে যদি গুচির মতো কোম্পানিকে এ দেশে লাল কার্পেট দেখানো হয়। আর সেই মোদী যিনি ইউপিএ-র চিদম্বরম-আনন্দ শর্মার বিরোধিতা করেন, আজ তিনিই এই সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ একটাই— টাকা চাই। টাকা…টাকা!

Advertisement

কী করা যায়?

উন্নয়নের জোয়ার পৌঁছবে তো এই মানুষগুলোর কাছ?

আবার গরিব মানুষের সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো বন্ধ করে ফিসকাল ডেফিসিট আটকানো সম্ভব নয়। কারণ এই টাকার ব্যবস্থা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, মানুষ চাকরি পাবে। এখন তো ভারতের মানুষ কর্মহীনতায় ভুগছে। এ দিকে এই সামাজিক দায়বদ্ধতার খরচ বাড়ায় অনেকে বলছেন সরকার ভর্তুকি-সংস্কৃতিতেই আটকে আছে।

তবু তো জগদীশ ভগবতী নয়, অমর্ত্য সেনের নীতিই কার্যত মানতে বাধ্য হচ্ছেন মোদী।

তবে আমেরিকার পক্ষ থেকে সম্প্রতি আশ্বাস এসেছে, ২০১৮-র শেষে তেলের দাম কমবে। আমেরিকার টেক্সাসে মাটির নীচে সঞ্চিত তেলের অভূতপূর্ব সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি শেল তেল সংস্থার কর্ণধার দিল্লি আসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন যে তাঁরাও জানতেন না এখনও এতটা তেল মজুত আছে। মাটির নীচে তাঁদের বিজ্ঞানকর্মীরা গিয়ে গবেষণা করে জানতে পেরেছেন। তাই আশা করা হচ্ছে এ বছরের শেষে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে। আর এই দাম কমলে ভারতের বাজারেও তার সু-প্রভাব পড়বে। এখন তেলের দাম কমলে বিক্রি করলে বেশি দাম পাবে ভারত। তাতে বাজার সংগ্রহও বাড়বে সরকারের।

হতাশ মোদী আপাতত এই আশায় বুক বাঁধছেন। ২০১৮-র শেষে এটা সম্ভব হলে ২০১৯-এর ভোটে তার সুফল পাবেন তিনি। সম্ভবত এই কারণেই মোদীর মার্কিন নির্ভরশীলতা আরও বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন