নির্মল মাজি নিজে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ধমক বা শাসানি দেননি তিনি, যা বলার তা গল্পচ্ছলে বলছিলেন— দাবি নির্মল মাজির। —ফাইল চিত্র।
যা দেখা যাচ্ছে, তা রোগের উপসর্গ নয়, অসুখ গভীরতর হয়ে ওঠার লক্ষণ। সাংবিধানিক সীমারেখাগুলো রোজ যেন একটু একটু করে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনের মধ্যে একটা স্পষ্ট ভেদরেখা রয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু সে রেখাটাকে রোজ একটু একটু করে মুছে দিচ্ছেন রাজনীতিকরা। সাংবিধানিক অধিকারের গণ্ডি ছাড়িয়ে অতিসাংবিধানিক চরিত্র হয়ে উঠছেন নেতারা। গত কাল এ বিষয়ে কলম ধরতে হয়েছিল বঙ্গ বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের কল্যাণে। আজ ফের একই বিষয়ের নিন্দায় সরব হতে হচ্ছে তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির সৌজন্যে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মসূচিতে ভাষণ দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের রীতিমতো শাসালেন তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা তথা বিধায়ক নির্মল মাজি। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মীর বদলির বিষয়ে তিনি যে সব সুপারিশ করেছিলেন, সে সবের রূপায়ণ এখনও হল না কেন? শাসানির সুরে জানতে চাইলেন নির্মল। তিনি যে বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির প্রধান, নির্মলবাবু তাও সদর্পে মনে করিয়ে দিলেন। ক্ষমতা জাহির করে বার্তা দিতে চাইলেন, তাঁর কথা না শুনলে বেকায়দায় পড়তে হবে।
এই প্রথম বার নয়, আগেও বহু বার অতিসাংবিধানিক হয়ে উঠতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন নির্মল। কিন্তু সতর্ক, সংশোধিত বা সংযত যে হননি, মেডিক্যাল কলেজে তা ফের প্রমাণ করে দিলেন।
নির্মল মাজি নিজে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ধমক বা শাসানি দেননি তিনি, যা বলার তা গল্পচ্ছলে বলছিলেন— দাবি নির্মল মাজির।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে ‘ধমক’ কর্তাদের, ফের বিতর্কে নির্মল
মেনে নিলাম, নির্মল মাজি ‘গল্পচ্ছলেই’ বলছিলেন ওই সব কথা। মেনে নিলাম, নির্মল মাজি কাউকে শাসাননি। কিন্তু প্রশ্নচিহ্ন তা সত্ত্বেও পিছু ছাড়ছে না। কার বদলি কোথায় হবে, ‘গল্পচ্ছলেও’ কি সে নির্দেশ স্বাস্থ্যকর্তাদের দেওয়ার অধিকার আছে নির্মল মাজির? তিনি কে? তিনি শাসক দলের চিকিৎসক নেতা। তিনি শাসক দলের টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক। তিনি বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির প্রধান। কিন্তু এই সব ভূমিকা বা এই সব পদ তো কোনও ভাবেই তাঁকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দেয় না। তা হলে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ পদাধিকারীদের তিনি কোনও নির্দেশ দেন কোন অধিকারে? নির্দেশ পালিত না হলে ‘গল্পচ্ছলেই’ বা সে কথা মনে করান কোন অধিকারে?
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার সংবিধান নির্মল মাজিকে দিক বা না দিক, অলিখিত ভাবে অনেক কিছুই যে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সে কথা খুব ভাল ভাবেই জানেন। যাঁরা স্বাস্থ্য দফতরের কেউ নন, তাঁরাও অনেকেই নির্মল মাজির এই ‘সক্ষমতা’ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু যা এত দিন অলিখিত ভাবে জানা ছিল এবং অপ্রকাশ্য ছিল, তা ক্রমেই এমন বেপরোয়া ভাবে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে যে, চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন অনেকেই। এই প্রকাশ্য অতিসাংবিধানিকতা গণতন্ত্রের বিপদ ক্রমেই বাড়াবে।