National news

রাজনীতির প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাও কি অবশিষ্ট থাকবে আর?

বিধানসভার ভিতরেই চলল দেদার অনিয়ম। কেউ দলের হুইপ অমান্য করলেন, কেউ ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপার অন্য দলের প্রার্থীকে দেখালেন, কেউ নেতৃত্বের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৮
Share:

আহমেদ পটেল। —ফাইল চিত্র।

একে আর যা-ই বলা যাক, রাজনীতি বলা যাবে না। গুজরাতের রাজ্যসভা নির্বাচন ঘিরে যে কদর্য নাট্যরঙ্গ চলল, তার নাম যদি রাজনীতি হয়, তা হলে রাজনীতির প্রতি অবশিষ্ট যৎসামান্য শ্রদ্ধাটুকুও হারিয়ে ফেলবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র।

Advertisement

দল ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, বিধায়কদের মধ্যে দলত্যাগের প্রবণতা, দলের উপর নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের সমূহ অভাব, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভিনরাজ্যে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, দিনের পর দিন রিসর্টে লুকিয়ে রাখা, আচমকা রিসর্ট-মালিকের অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হানাদারি, রুচিহীন কাদা ছোড়াছুড়ি— রাজ্যসভার একটি মাত্র আসনের দখল নেওয়ার জন্য এত রকমের বেনজির টানাপড়েন তো চললই। নির্বাচনটাও নির্বিঘ্নে, নিরুপদ্রবে মিটল না। বিধানসভার ভিতরেই চলল দেদার অনিয়ম। কেউ দলের হুইপ অমান্য করলেন, কেউ ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপার অন্য দলের প্রার্থীকে দেখালেন, কেউ নেতৃত্বের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলেন। সকালে শুরু হওয়া নির্বাচন প্রক্রিয়া ঝুলে রইল মধ্যরাত পর্যন্ত।

অত্যন্ত কদর্য একটা ছবি তৈরি করল গুজরাতের রাজ্যসভা নির্বাচন। জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটদানের ভিত্তিতে এই নির্বাচন হয় না। জনপ্রতিনিধিদের ভোটে রাজ্যসভার প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতীকে এবং সুনির্দিষ্ট মতাদর্শ তথা ইস্তেহারের ভিত্তিতে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন যাঁরা, তাঁরাই ভোট দেন রাজ্যসভা নির্বাচনে। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনও টানাপড়েন থাকারই কথা নয়। এই নির্বাচনে সব পক্ষ আগে থেকেই জানেন, বিধানসভার কত শতাংশ আসন তাঁদের দখলে রয়েছে এবং তার ভিত্তিতে রাজ্যসভায় ক’জনকে পাঠানো সম্ভব। সেই হিসেবকে ভেঙেচুরে দেওয়ার বা গুলিয়ে দেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টাই যে আসলে জনমতের অসম্মান, তা-ও সকলেরই জানা। তবু সেই অনৈতিক কাজটাই করার চেষ্টা হল, নীতি-নৈতিকতা ভুলে বিধায়করা ছোটাছুটি শুরু করলেন, নিদারুণ কুনাট্যরঙ্গ মঞ্চস্থ হল।

Advertisement

রাজ্যসভা নির্বাচনকে ঘিরে ক্রস ভোটিং-এর খেলা এই প্রথম নয়। জনাদেশ ভুলে গিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতাও এই প্রথম নয়। কিন্তু যাবতীয় রাখঢাক ভুলে, রাজনৈতিক সৌজন্যের ন্যূনতম সীমাগুলো লঙ্ঘন করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বেপরোয়া টানাহেঁচড়ার মুখে ফেলে যে দৃষ্টান্তের জন্ম দিল গুজরাত, তা ক্ষমতা প্রদর্শনের নির্লজ্জ উচ্চাকাঙ্খা ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাজনীতিকদের বড় অংশের প্রতিই জনসাধারণের শ্রদ্ধা এখন অন্তর্হিত। রাজনৈতিক অলিন্দের অধিকাংশ ঘটনাপ্রবাহের দিকেই নাগরিক আজ তাকান চোখে সংশয়ের চশমা পরে। সে সব যে রাজনীতিকরা জানেন না, তেমনও নয়। তা সত্ত্বেও যদি গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শনের কথা খেয়াল না থাকে, তা হলে এ গণতন্ত্রও অচিরেই চলতি রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে সম্মান করতে ভুলে যাবে। সে দিনটা খুব একটা সুখকর হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন