Newsletter

এই ভাবে পাহাড়ের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে?

বছর ছয়েক ধরে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংকে। মুখ্যমন্ত্রী বলতেন, পাহাড় হাসছে। রাজনীতির বিভিন্ন শিবির মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তির্যক ব্যাখ্যা এনেছে, কটাক্ষ করেছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

পুলিশ-মোর্চা খণ্ডযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত এলাকা।—নিজস্ব চিত্র

ঠিক কী কারণে এত উত্তাপ, বোঝা গেল না। মোটের উপর সব ঠিকঠাকই চলছিল পাহাড়ে, পর্যটনের ভরা মরসুম ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল, রাজনীতিও তার স্বাভাবিক গতিতেই ছিল। আচমকা দার্জিলিঙের এমন আগুন হয়ে ওঠার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ কোথাও ছিল না। তবু আগুন জ্বলল, বোমা পড়ল, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটল, পর্যটকে ঠাসা দার্জিলিং ম্যাল-এর ফুরফুরে মেজাজ নিমেষে উধাও হল, চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ঢাকল, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ হল, সেনা নামল। শেষ হচ্ছে না এতেই। বন্‌ধের ডাকও দেওয়া হল পাহাড়ে। ফিরিয়ে আনা হল অগ্ন্যুৎপাতের স্মৃতি।

Advertisement

বছর ছয়েক ধরে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংকে। মুখ্যমন্ত্রী বলতেন, পাহাড় হাসছে। রাজনীতির বিভিন্ন শিবির মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তির্যক ব্যাখ্যা এনেছে, কটাক্ষ করেছে। কিন্তু ব্যঙ্গ যতই ভেসে আসুক, পাহাড়ে যে স্বাভাবিকতা ফিরেছিল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সমতলের থেকে বিচ্ছিন্নতার যে বাষ্প পাহাড়ের আকাশে মেঘ হয়ে জমে থাকত, সে বাষ্পের অনুপস্থিতি সম্প্রতি খুব স্পষ্ট ভাবেই ঠাহর হচ্ছিল। স্বাভাবিক কারণেই অতএব ফের পর্যটনের জোয়ার দেখতে শুরু করেছিল শৈলশহর, ফের বাড়ছিল ব্যবসা, ফের চাঙ্গা হচ্ছিল পাহাড়ের অর্থনীতি। কিন্তু অনেকগুলো দশক পেরিয়ে যে দিন দার্জিলিঙে বৈঠকে বসল রাজ্য মন্ত্রিসভা, সে দিনই ফের আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল পাহাড়ে। ফিরিয়ে আনা হল ধ্বংসাত্মক অশান্তির ভ্রূকুটি, ফিরিয়ে আনা হল দীর্ঘ অনিশ্চয়তার আবহ।

পর্যটনের ভরা মরসুমে অশান্তি দেখল দার্জিলিং। হাজার হাজার পর্যটক পাহাড়ে। সকলেই আতঙ্কে। যত দ্রুত সম্ভব পাহাড় ছাড়ার তাগিদ তাঁদের মধ্যে। বার্তাটা কিন্তু ভাল গেল না। অবিলম্বে স্বাভাবিকতা ফিরুক পাহাড়ে, কাম্য এমনই। কিন্তু অশান্তিটা যে চেহারা নিয়ে শুরু হল এবং যে অনমনীয় আবহ তৈরি হল, তাতে খুব প্রত্যয় নিয়ে বলা যাচ্ছে না যে স্বাভাবিকতা অবিলম্বেই ফিরবে। পাহাড় শান্ত না হলে ভ্রমণেচ্ছু বাঙালিকে আপাতত দূরে থাকতে হবে তাঁর প্রিয় শৈলশহর থেকে। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় সঙ্কটের মুখ দেখতে হবে পাহাড়কে। রমরমিয়ে ওঠা ব্যবসা হঠাৎ থমকে যাবে। দীর্ঘ অশান্তির দিন পিছনে ফেলে এসে গত কয়েক বছর ধরে যে ভাবে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল পাহাড়ের অর্থনীতির লেখ, তা ফের নিম্নগামী হবে। সমৃদ্ধির আশা ফের শুকিয়ে আসবে।

Advertisement

যদি ফের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়ে পাহাড়ের অর্থনীতিকে, দায় কে নেবে? রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ফের যাঁরা জঙ্গিপনা ফিরিয়ে আনলেন পাহাড়ে, দায়ভাগটা কিন্তু মূলত তাঁদেরই বহন করতে হবে। যে মাপের অশান্তি দেখল পাহাড়, সেই মাপের কোনও সমস্যার কথা তুলে ধরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পথে নেমেছিল, এমনটা কিন্তু প্রতীত হয়নি। অশান্তি ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল, এমনটাই বরং মনে হয়েছে অনেকাংশে। পরিস্থিতির এই অবনতিকে তাই অকারণ এবং দুর্ভাগ্যজনক বলেই আখ্যায়িত করতে হচ্ছে।

বিমল গুরুঙ্গরা বলছেন, লড়াই তাঁদের পাহাড়ের স্বার্থে। কিন্তু তথাকথিত এ লড়াইয়ে পাহাড়ের স্বার্থই যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি যে রকম, তাতে রাজনৈতিক প্রতারণা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তেমন বিপদ যদি সত্যিই ঘটে, বিমল গুরুঙ্গদেরই কিন্তু জবাবদিহি করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement