মুকুলের রাতের ঘুম নিশ্চয় আগের চেয়ে নির্বিঘ্নেই হবে

মুকুল রায়কে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন শুধু দলের বাইরে নয়, অন্দরমহলেও। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালমুকুল রায়কে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন শুধু দলের বাইরে নয়, অন্দরমহলেও। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

প্রশ্ন তবু উঠছেই। ফাইল চিত্র

মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে বলতে চাইছেন যে তিনি ভ্যানিশ নন। তিনি এ বার দেখিয়ে দেবেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি কী ভাবে বাড়াতে হয়। মুকুল রায় এখন বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে আর সাম্প্রদায়িকতা বলবেন না, গোরক্ষা এবং হিন্দুত্ববাদের মুখপাত্র হবেন, গুজরাতে গোধরা দাঙ্গার জন্য অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করবেন না, আর পশ্চিমবঙ্গটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য গোল্লায় গেল এ কথাটাই বলবেন। তা তিনি বলুন। সে হল মুকুল রায়ের রাজনীতি। রাজনীতিতে ‘নীতি’ নামক শব্দটি আছে, তবে সম্ভবত আজ ‘নীতি’ শব্দটির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘রাজ’ শব্দটি, যেখানে রাজ মানে শাসন, শাসন মানে শাসক ও শাসক দল। মুকুল রায় তাঁর নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের সম্ভাবনাকে সমূলে নাশ করেছেন। রাতে তাঁর ঘুমটাও এ বার নিশ্চয়ই আগের চেয়ে নির্বিঘ্নে হবে।

Advertisement

কিন্তু মুকুল রায় নন, আজ আমার আলোচনার বিষয় হল বিজেপি। যে বিজেপি দ্বিধাগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সব বাধাবিপত্তি দূর করে মুকুলকে দলে গ্রহণ করে।

বিজেপির এই অন্যের দল থেকে নেতা নিয়ে এসে নিজের দলকে শক্তিশালী করা, এ তো নতুন নয়। মনে আছে একদা আডবাণীও কুমারমঙ্গলম এবং কে সি পন্থের মতো নেতাদের দলে আনলেন। মুম্বইয়ের ফিল্মজগত থেকে তো সিরিয়ালের রাম-রাবণ-সীতা-কৃষ্ণকে পর্যন্ত একে একে দলে আনলেন, ভোট প্রার্থী করে জেতালেন। হনুমান এলেন, তারপর ফিল্মস্টার বিনোদ খন্না, ধর্মেন্দ্র থেকে স্মৃতি ইরানি— এ সবই তো আডবাণীর নিয়ে আসা। দলের ভিতর আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অথবা ছাত্র সংগঠন এবিভিপি থেকে ধাপে ধাপে দলের শীর্ষস্তরে তুলে নিয়ে আসা এ একটা ক্রমিক প্রক্রিয়া আর একটা হল বাইরে থেকে অনুপ্রবেশ। একে বিজেপিতে বলা হয় ‘ল্যাটারাল এন্ট্রি’। সুষমা স্বরাজও আরএসএস থেকে আসেননি, তিনি দেবী লালের হরিয়ানা সরকারের কনিষ্ঠতম মন্ত্রী ছিলেন। লোকদল করতেন। হরিয়ানার মেয়ে সুষমাকে বিজেপিতে আনেন আডবাণী। অরুণ জেটলি যেমন বিজেপিতে এসেছেন এবিভিপি-র ছাত্র সংগঠন থেকে, আরএসএস কখনও করেননি। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে সক্রিয় রাজনীতি করে অরুণ জেল খেটেছিলেন।

Advertisement

মুকুলকে নিয়ে উন্মাদনা। ফাইল চিত্র।

আরএসএসের জন্ম ১৯২৫ সালে। জনসঙ্ঘ তৈরি হল ১৯৫১ সালে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই সংগঠনের জন্মদাতা। ’৭৭ সালে মোরারজি সরকারের গঠন পর্যন্ত জনসঙ্ঘের স্থায়ী অস্তিত্ব ছিল। পরে জনসঙ্ঘ জনতা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়, কিন্তু তারপর প্রশ্ন ওঠে জনতা দলে যে আরএসএস সদস্য হয়েও কী ভাবে জনতা দলের সদস্য থাকা যায়? এর পর পৃথক বিজেপি গঠিত হয় ১৯৮০ সালে। তার পর বার বার এই প্রশ্ন আরএসএস থেকে উঠেছে যে দলের মধ্যে কত জন সঙ্ঘের প্রচারক? কত জন শাখায় কাজ করা কর্মী ও নেতা? আর কত জন বহিরাগত? দলের মধ্যে এই প্রশ্ন নিয়ে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির সংঘাত সমস্যা থেকেই গেছে। এক জন রাম মাধব বিজেপিতে যোগ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আরএসএস থেকে এসে, অন্য দিকে সুখরাম থেকে বুটা সিংহ, এমনকী আজ কর্নাটকে কৃষ্ণা, মহারাষ্ট্রে রানে, উত্তরপ্রদেশ থেকে হেমবতীনন্দন বহুগুণাকে নিয়ে আসা হল। সুখরামের বিরুদ্ধেও টেলিকম দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। মনে পড়ে তখনও সুখরামকে নেওয়া হয়েছিল হিমাচল প্রদেশের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য। সুষমা স্বরাজকে সংসদেও সুখরাম নিয়ে প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয়। সুষমা বলেছিলেন, তোমরা ওর জীবনের সমস্ত ‘সুখ’ কেড়ে নিয়েছ, এখন শুধু ‘রাম’টুকুই পড়ে আছে, তাই তো আমরা নিয়েছি।

আজ মুকুল রায়কে দলে নেওয়া নিয়েও সেই প্রশ্ন উঠেছে। দলের বাইরে শুধু নয়, দলের অন্দরমহলে, সঙ্ঘ পরিবারেও। এই অনুপ্রবেশ কৌশল, না কি আসলে বিজেপির রাজনৈতিক ও নৈতিক দুর্বলতার পরিচায়ক?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন