Poltics

ধর্মকে রাজনীতিতে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা করা অনুচিত

স্বাধীন ভারতের মানুষের কি এত ভয় মানায়? প্রশ্ন তুলছেন জয়ন্ত ঘোষালদেশের কতগুলো স্বাধীনতা দিবস এর আগে আমরা পেরিয়ে এসেছি| এখন মোটেরামের সত্যাগ্রহের দিন অতিবাহিত| তবু আজও নানা ভাবে গোটা দেশ জুড়ে নানা ধরনের প্রতিবাদ চলছে| সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে, অথবা দিল্লির যন্তুরমন্তর থেকে রাজ্যে রাজ্যে| ধর্মতলা থেকে পটনার গাঁধী ময়দান, গোলঘর! ২০১৮ সালের ১৫ অগস্টে এসেও প্রশ্ন, আমরা কতটা স্বাধীন?

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share:

জয়প্রকাশ নারায়ণ ব্রিগে়ডে। ফাইল চিত্র।

লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের অধ্যাপিকা অর্পিতা ভট্টাচার্য লিখেছেন, আপনার লেখা পড়ে হাবিব তনবীরের নাটক ‘মোটেরাম কি সত্যাগ্রহ’-র কথা মনে পড়ে গেল!

Advertisement

আমি গত বার টনি ব্লেয়ারের মতো আস্তিক এবং সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচেন্স-এর বিখ্যাত বিতর্ক নিয়ে লিখেছিলাম। ২০১০-এর ২৬ নভেম্বর ম্যানক বিতর্কে বিষয় ছিল ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে! ধর্ম কি মানুষের উপকারে লাগে?

অর্পিতার প্রশ্ন শুনে মনে হল, প্রেমচাঁদের এই কাহিনি আর হাবিব তনবীরের এ নাটকের সঙ্গে আমার লেখার সম্পর্কটা কী? আবার নাটকটা পড়লাম। স্বাধীনতার আগের বারাণসী। ব্রিটিশ ভাইসরয় আসবেন। গোটা শহর জুড়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে। রাস্তার দু’ধারে বস্তি, হকার, তাদের কী করে সরানো যাবে? জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সে সব নিয়ে ব্যস্ত। আর এ সবের মদতে চলছে মোটেরামের সত্যাগ্রহ। সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লড়াই। লড়াই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। দেশের জন্য লড়াই! কেলেঙ্কারি! ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন, ওকে সত্যাগ্রহ থেকে সরাতেই হবে! তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলে যাবে! শেষ পর্যন্ত সত্যাগ্রহ কিন্তু উঠছে না!

Advertisement

দেশের কতগুলো স্বাধীনতা দিবস এর আগে আমরা পেরিয়ে এসেছি। এখন মোটেরামের সত্যাগ্রহের দিন অতিবাহিত। তবু আজও নানা ভাবে গোটা দেশ জুড়ে নানা ধরনের প্রতিবাদ চলছে। সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে, অথবা দিল্লির যন্তুরমন্তর থেকে রাজ্যে রাজ্যে। ধর্মতলা থেকে পটনার গাঁধী ময়দান, গোলঘর! ২০১৮ সালের ১৫ অগস্টে এসেও প্রশ্ন, আমরা কতটা স্বাধীন?

হিন্দু ধর্ম মানে হঠকারিতা নয়।

১৮৭০ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যোগ হলো সিডিশান। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরতে ব্রিটিশ যোগ করল ১২৪এ ধারা! ১৮৯৭ সালে সিডিশন চার্জ হল বাল গঙ্গাধর তিলকের বিরুদ্ধে। দেখুন, ১৯৭৩ সালে সেভ সাইলেন্ট বললে একটা আন্দোলনের কথাই মনে পড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল চিপকো আন্দোলন। ১৯৭৪-এ দেখুন জয়প্রকাশ নারায়ণ নিজে তখন ৭২ বছর বয়সের বৃদ্ব। কিন্তু, এক সম্পূর্ণ বিপ্লবের কথা বললেন। আর এই ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে মোট ১৬৫ জনকে সিডিশন চার্জ দিয়ে জেলে পোরা হয়েছে! সব মিলিয়ে আমাদের মনের মধ্যে ভয় ঢুকেছে! কীসের ভয়? স্বাধীন ভারতের মানুষের কি এত ভয় মানায়?

স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর চলছে এখন। আমার মনে হয়, স্বামীজীর জীবনে এই বক্তৃতা শুধু একটি বক্তৃতা নয়, এটি তার সমাজ সংস্কারক জীবনের এক নতুন অধ্যায়। শিকাগো আসার আগে তিনি চার বছর ধরে সমগ্র ভারত ঘুরে বেড়ান। তার পর আসেন শিকাগো। সেখানে শুধু ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নস নয়| তিনি শিকাগোর পরেও প্রায় চার বছর বিদেশের নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান| সে সময় তিনি প্রচুর চিঠি লিখেছিলেন| শশী মহারাজকে, স্বামী বিজ্ঞানানন্দকে— আরও কত জনকে! তিনি বার বার বলছেন, ভারতে আমি ঘুরে ঘুরে দারিদ্র-বেকারির কী সমাধান হতে পারে তা-ও খুঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু উত্তর পাইনি। এর পর আমি আমেরিকা আসতে চাইছিলাম এদের জাগতিক উন্নতি দেখতে। স্বামীজী বলছেন, পৃথিবীর মানুষকে আমি আমাদের ধর্মের কথা জানাবো। কিন্তু আমাদের শিখতে হবে তাদের জাগতিক এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সাফল্য।

বহু বছর পর সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবার বললেন, প্রোটেস্টান্ট ধর্ম আর পুঁজিবাদ— দুটো মিলে ব্রিটেনের সামাজিক বিকাশে সাহায্য করেছিল। এমনটাই ছিল স্বামীজীর মডেল— এক দিকে ধর্মের মাধ্যমে প্রাচীন কুসংস্কার দূর করে এক বিশেষ নৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠা করা, অন্য দিকে ভারতের আর্থিক সংস্কার। স্বামীজীর সঙ্গে জামশেদজির কথোপকথন তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে স্বামীজী ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যর কথা বলেছেন।

আলোচনা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম। ধর্মের ইতিবাচক সামাজিক ভূমিকা কতখানি সম্ভব? আদৌ সম্ভব কি? শিকাগো বক্তৃতায় তিনি বার বার যা বলেছেন তা উপনিষদের কথা! সেখানে বলা হয়েছে এক সত্তার কথা! এক ঈশ্বর। এক আত্মা। অখণ্ড জীবন স্রোত। এরই নাম দেওয়া হয় প্রাক্টিকাল বেদান্ত। হিন্দুধর্ম মানে হঠকারিতা নয়। এ এক জীবনচর্যা।

এখন বার বার বলা হচ্ছে হিন্দু ধর্মের কাউন্টার ন্যারেটিভ, যা নিয়ে এত দিন সে ভাবে আলোচনা হয়নি, তাতে একটা আবহ গড়ে উঠছে। তার চেয়ে আমার ভাবনা হল, হিন্দু ধর্ম ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে চিরকালই যুক্ত! এটা আছে। নতুন কিছু নয়। তবে এখন ধর্মকে রাজনীতিতে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বোধ হয় করা অনুচিত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন