Editorial News

বিজ্ঞাপনের বাসা এখন আমাদের মস্তিষ্কেও, ফাঁদ নয় তো!

বেঙ্কাইয়া নায়ডুর এক হাজার টাকা খোওয়ানোর ঘটনায় সারদা-কাণ্ডের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল লক্ষ টাকা খোওয়ানো মানুষের কথা। এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁরা, ভুল পথেই করেছিলেন, কেন করেছিলেন? তাঁরা সুদিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share:

বেঙ্কাইয়া নায়ডুর এক হাজার টাকা খোওয়ানোর ঘটনায় সারদা-কাণ্ডের কথা মনে পড়ে গেল। ছবি: পিটিআই।

ভুবনজোড়া পাতা ফাঁদ, এবং সেই ফাঁদে পড়ার অবকাশ তৈরি হয় প্রতি মুহূর্তেই, এই আর্ষবাক্যের পটভূমিকাতেও বিশিষ্ট এক ফাঁদ নিয়ে লেখার অবসর এল। এল উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর একটি কথার সূত্র ধরে। উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান নিজেই সভার সদস্যদের জানিয়েছেন, কী ভাবে ভুয়ো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়েছেন তিনি, খুইয়েছেন টাকা। ভুয়ো বিজ্ঞাপনের এই সর্বগ্রাসী সময়ে বড় প্রাসঙ্গিক এই ফাঁদের আলোচনা।

Advertisement

ভুয়ো বিজ্ঞাপনের ফাঁদ যে কী রকম মৃত্যুস্পর্শী হয়, এই দেশ তথা এই রাজ্যের মানুষ তা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জানেন। চিটফান্ডের চমকদার চটক, মন্ত্রী সান্ত্রীদের অবাধ আনাগোনা, ঢালাও সার্টিফিকেট, অমুকের উদ্বোধন আর তমুকের শিলান্যাস— এই গোটা ব্যাপারটাই যে একটা বিজ্ঞাপন, এটা বুঝতেই অনেক সময় লেগেছে লক্ষ লক্ষ ভুক্তভোগীর। সেই বিজ্ঞাপনও যে আসলে ভুয়ো, সেটা বুঝলেন তাঁরা তখনই, যখন সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসলেন। সে ছিল প্রথম ফাঁদ। সেখান থেকে বেরোনর জন্য রাজধর্মের বাহকদের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা। এবং দেখলেন, চমকপ্রদ সব উল্লম্ফন, কমিশন-পুলিশ-জেল ইত্যাদি নানান প্রতিষ্ঠানের ভারী বুটের শব্দে থরহরিকম্প এই ভারতভূমে শেষ পর্যন্ত কত জন টাকা ফেরত পেলেন, সেই প্রশ্ন আপাতত নতুন কোনও বিজ্ঞাপনের আড়ালে। রাত কত হল, এই প্রশ্নগুলো সম্ভবত করাই হয় এটা জেনে যে, উত্তর মেলে না। কিন্তু উত্তর না-দেওয়ারও একটা ধরিত্রীনিনাদি বিজ্ঞাপিত পথ আছে, না হলে বিপদ থাকে।

বেঙ্কাইয়া নায়ডুর এক হাজার টাকা খোওয়ানোর ঘটনায় সারদা-কাণ্ডের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল লক্ষ টাকা খোওয়ানো মানুষের কথা। এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁরা, ভুল পথেই করেছিলেন, কেন করেছিলেন? তাঁরা সুদিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। হিন্দিতে বললে, অচ্ছে দিন। এই মুহূর্তে গোটা দেশের আপামর মানুষের সামনে যে ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নের মায়াজাল। কেমন হবে সেই দিন? সেই স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই। বিজ্ঞাপনের সামনে আমরা। অতএব, বিমুদ্রাকরণ-পরবর্তী লম্বা লাইনের ধকল বা জিএসটি-র ধাক্কা অথবা মূল্যবৃদ্ধির নৈমিত্তিক চাপকে আমরা সহ্য করে নিচ্ছি হাসিমুখে। ধার করে নিচ্ছি বিজ্ঞাপনের ভাষাই, টুডেজ পেন, টুমরোজ গেন। হে ভারত, ভুলে যেও না, আমরা অচ্ছে দিন-এর যাত্রী। সে যাত্রা কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বিপদঝঞ্ঝা আছে সেই পথে, কিন্তু শেষে নতুন সূর্যের কিরণ অপেক্ষা করছে, এই কথা নিশ্চিত। ঢালাও ঢক্কানিনাদে এই বিজ্ঞাপনের বাসা এখন আমাদের মস্তিষ্কেও।

Advertisement

আরও পড়ুন
ভুয়ো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে টাকা খোয়ালেন উপরাষ্ট্রপতি

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভারতবাসী আশা করবেন, এই বিজ্ঞাপন ভুয়ো নয়। আশা করবেন, তাঁরা ফাঁদে পড়ছেন না। মুখ ঢেকে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনে। কিন্তু সেই মুখে যদি অন্নদানা শেষ পর্যন্ত না পৌঁছয়, তা হলে বড় বিপদ। সেখানে কিন্তু কোনও বিজ্ঞাপনই কাজ করবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন