Newsletter

আর কোথাও এই বীভৎসতা লালিত হচ্ছে না তো? সতর্ক হওয়া জরুরি

সব অপরাধের বিচার আদালতের কাঠগড়ায় হয় না। কারণ সংবিধানে তার সংস্থান নেই। কিন্তু কোনও অপরাধমূলক বিষয়কে সংবিধান সৃষ্ট আদালত যদি বিচার্য বলে মনে না করে, তা হলে সে বিষয়ের বিচার হবে না, এমন কিন্তু নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪২
Share:

সব অপরাধের বিচার আদালতের কাঠগড়ায় হয় না। কারণ সংবিধানে তার সংস্থান নেই। কিন্তু কোনও অপরাধমূলক বিষয়কে সংবিধান সৃষ্ট আদালত যদি বিচার্য বলে মনে না করে, তা হলে সে বিষয়ের বিচার হবে না, এমন কিন্তু নয়। সামাজিক পরিসরেও একটা বিচার-বিশ্লেষণ থেকেই যায়। সেই সামাজিক বিচারটাও কিন্তু আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই চরম অস্বস্তির বিষয় হয়ে উঠতে পারে। উদয়ন দাসের ঘটনায় সে কথা প্রমাণিত হয়ে গেল।

Advertisement

দিন দিন বাড়তে থাকা অযৌক্তিক আবদার মেটাতে মা রাজি হননি। তাই মাকে খুন এবং মাটিতে পুঁতে দেওয়া। মাকে দীর্ঘক্ষণ দেখতে না পেলে বাবার মনে সন্দেহ জাগতে পারে। তাই বাবাকে খুন এবং মাটিতে পুঁতে দেওয়া।

প্রায় সাত বছর আগে ঘটে গিয়েছে এই ভয়ঙ্কর এবং বীভৎস ঘটনাগুলো। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি। উদয়ন তৃতীয় খুনটাও করে ফেলার বেশ কিছু দিন পরে প্রকাশ্যে এল বীভৎসতা।

Advertisement

তা হলে কি উদয়নের মানসিকতার এই বীভৎসতা এত দিন প্রকাশ পায়নি? তা তো হতে পারে না। আশপাশের মানুষগুলোর কাছে নিশ্চয়ই এ মানসিক বৈকল্য গোপন ছিল না। মনোবিদ এবং মন-চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়ঙ্কর মানসিক বিকার না থাকলে একের পর এক খুন এবং দেহ লোপাট করে জীবনকে এমন নির্লিপ্ত রাখা অসম্ভব। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এই ধরনের মানসিক বিকার ‘ক্রিমিনাল পার্সোনালিটি ডিজর্ডার’ নামে কুখ্যাত। কিন্তু মনের এই সাংঘাতিক বৈকল্য এক দিনে দেখা দেয় না। অনেক দিন ধরেই উপসর্গ ফুটে উঠতে থাকে, লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে। উপসর্গগুলো যখন পরিস্ফুট হচ্ছিল, লক্ষণগুলো যখন স্পষ্ট হচ্ছিল, অভিভাবকরা তখন কী করছিলেন? গুরুত্ব দেননি? নাকি পাড়া-পড়শির সামনে সত্যটা প্রকাশিত হতে দিতে চাননি?

উদয়ন দাসের মতো ছেলে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে এমন নয় মোটেই। কিন্তু উদয়ন দাসের মতো ভয়ঙ্কর বা অন্যতর ভাবে ভয়াবহ কোনও মানসিকতা যে অন্য কোথাও, কারও মধ্যে লালিত হচ্ছে না, সে কথাও হলফ করে বলা যায় না। আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক হওয়া উচিত। সন্তানের বা পরিবারের যে কোনও সদস্যের আচরণে অসংলগ্নতা দেখলেই সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘ও কিছু না’ বলে উড়িয়ে দিতেই অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অসংলগ্নতা বা অসামাজিকতা যে সব সময় ‘ও কিছু না’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, তা প্রমাণিত হয়ে গেল মর্মান্তিক ভাবে।

অনেকেই অসংলগ্নতাগুলোকে গুরুত্ব দেন না, তাই নিরাময় খোঁজেন না। কেউ আবার লোকলজ্জা বা সামাজিক মানহানি এড়াতে চান, তাই সন্তানকে মন-চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চান না। অঘটন যদি ঘটে, তা হলে অভিভাবকরাও কিন্তু দায়টা এড়াতে পারবেন না। দায় এড়ানো যায় না বলেই নিজেরা খুন হয়ে গিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছেন উদয়ন দাসের মা-বাবা আজ।

সাংবিধানিক আদালতের কাঠগড়ায় উদয়নের বিচার হবে। কঠোর দণ্ডও হবে হয়তো। কিন্তু সামাজিক আদালত শুধু ‘খুনি’ উদয়নকে নয়, খুন হয়ে যাওয়া দাস দম্পতিকেও রেহাই দেবে না। আর কোনও অভিভাবককে যেন এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে না হয়। এই মুহূর্ত থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন