উষ্ণায়নের কারণেই এই নীল গ্রহের সুবিশাল জলভাগ এবং তার আকাশের রঙ বদলে যাবে বলে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।
পরিস্থিতিটা বড্ড অদ্ভুত। একটু একটু করে কাছে আসতে থাকা বিপদটা সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই ওয়াকিবহাল। বিপদের কারণগুলোও আমাদের জ্ঞাত। তবু সেই কারণগুলোই ঘটিয়ে চলেছি প্রায় সবাই। নিরন্তর।
আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত লোকজন— এঁদের যে কোনও এক জনকে বা এঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসা করুন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ কথাটার সঙ্গে এঁরা পরিচিত কিনা? দেখবেন, সবারই আলাপ রয়েছে কথাটার সঙ্গে। উষ্ণায়নের কারণ কী, উষ্ণায়নের ফলাফল কী, উষ্ণায়ন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী— এই সব প্রশ্নের উত্তরও অধিকাংশেরই এখন জানা অল্পবিস্তর। অর্থাৎ আমরা জানি, উষ্ণায়ন আমরাই ঘটাচ্ছি এবং উষ্ণায়ন আমরাই রুখতে পারি। তবু আমরা সংযত হচ্ছি না, উষ্ণায়ন সংক্রান্ত সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু করছি না।
আন্তর্জাতিক পর্বত গবেষণা সংস্থার একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, আগামী ৮০ বছরের মধ্যে হিমালয়-হিন্দুকুশের অর্ধেক বরফই গলে যাবে। তার ফলে কী হতে পারে? রিপোর্ট জানাচ্ছে, বরফ দ্রুত গলতে শুরু করার পরে হিমালয়-হিন্দুকুশ থেকে নেমে আসা নদীগুলোর জলস্তর বিপুল ভাবে বেড়ে গিয়ে অববাহিকাগুলো ভয়াবহ বন্যায় বার বার ভেসে যাবে। তার পরে জলস্তর কমতে কমতে নদীগুলো সব শুকিয়ে যাবে। মার্কিন গবেষকদের অন্য একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, ৮০ বছর পরে আকাশটা আর এখনকার মতো নীল থাকবে না। উষ্ণায়নের কারণেই এই নীল গ্রহের সুবিশাল জলভাগ এবং তার আকাশের রঙ বদলে যাবে বলে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপদ অত্যন্ত দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। বহু নদী অবলুপ্ত হয়ে যাবে, মেরু অঞ্চলে এবং অন্যত্র বরফ ও হিমবাহ গলে জল হয়ে যাবে, তা সাগরে মিশে জলস্তর ক্রমশ বাড়িয়ে তুলবে, স্থলভাগ সংকুচিত হতে থাকবে। মহাসাগর রং বদলে ফেলবে, আকাশ আর নীল থাকবে না— পরিস্থিতিটা ঠিক কী রকম হতে চলেছে একটু ভাবব কি আমরা? জীবনযাত্রা কী ভাবে বদলে যাবে, অকল্পনীয় বিপর্যয় মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণের অস্তিত্বকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে, জলবায়ু কতটা বদলে যাবে, বাস্তুতন্ত্রের উপর কী রকম প্রভাব পড়বে, খাদ্যশৃঙ্খল কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে— বিষয়গুলো নিয়ে একটু কি চিন্তা করব?
আরও পড়ুন: আমাদের আকাশের রং বদলে যাবে আগামী শতাব্দীতে! জানাল গবেষণা
সবটা চিন্তাশক্তির ভরসায় বুঝে নিতে হবে, এমনও নয়। গাণিতিক হিসেব কষে বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা ইতিমধ্যেই এ সব নিয়ে লিখে ফেলেছেন অনেক কিছু। আসন্ন পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে অসুবিধা হলে ওই সব লেখা পড়ে দেখা যেতে পারে। তবে পড়ি বা না পড়ি, উষ্ণায়ন এবং তার ফলাফল সম্পর্কে অল্পবিস্তর সকলেই অবহিত আমরা। তা সত্ত্বেও টনক নড়ছে না কেন!
আরও পড়ুন: ৮০ বছরে গলে যাবে হিমালয়ের অর্ধেক বরফ! শুকিয়ে যাবে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র!
চাইলে যে কোনও মুহূর্তে নিজের নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে উষ্ণায়নের কারণগুলোকে একটু একটু করে বাদ দিতে পারি আমরা। কিন্তু আমরা অধিকাংশই সে চেষ্টা করি না, উদাসীন থাকি। ট্র্যাফিক সিগনালে আটকে থাকার সময় গাড়ির ইঞ্জিনটা ক’জন বন্ধ করি? জ্বালানির অপচয় রুখতে ক’জন সংযম দেখাই? গাছ লাগানোর অভ্যাস ক’জনের রয়েছে? গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্য আমাদের মধ্যে ক’জন একটু অন্তত সংযম অভ্যাস করতে শুরু করেছেন? প্রায় কেউ নয়। অথবা হাতে গোনা দু’-একজন।এই ঔদাসীন্য আত্মহত্যার চেয়ে আলাদা কোথায়?
গাছের যে ডালে কালিদাস বসেছিলেন, সেই ডালটাই কালিদাস কাটছিলেন— এই আখ্যান সুবিদিত। কিন্তু সেই কালিদাস তো সরস্বতীর বর পাওয়ার আগের কালিদাস। বিশ্বায়নের সুবাদে আজকের পৃথিবীতে তো ওই রকম কাউকে খুঁজে পাওয়া শক্ত। ইচ্ছা থাকলেই সরস্বতীর সাধনা অল্পবিস্তর সম্ভব প্রায় প্রত্যেকের পক্ষেই আজকের পৃথিবীতে। তা সত্ত্বেও আমরা কালিদাসের প্রথম জীবনে ফিরে যেতে চাইছি কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া ধাঁধার চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।