Editorial News

অধিকার অর্জিত হল, অপব্যবহার রুখতে হবে

অপব্যবহার যে হতে পারে, সে কথা ঠিক। কিন্তু অপব্যবহারের আশঙ্কায় আইনটাই থাকবে না, অপব্যবহার হতে পারে ধরে নিয়ে নাগরিককে সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হবে, এমনটা হতে পারে না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০১:০০
Share:

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে অধিকার মিলল, সে অধিকারে কিছু বিপদও রয়েছে।

লড়াইটা দীর্ঘ দিনের। সম্মানজনক মৃত্যুর জন্য পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারকে স্বীকৃতি দিল আদালত। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এক মাইলফলক আদালতের এই ঘোষণা।

Advertisement

প্রত্যেক নাগরিকের যেমন জীবনের অধিকার রয়েছে, একান্ত প্রয়োজনে তেমনই জীবনটাকে শেষ করে দেওয়ার অধিকারও নাগরিককে দেওয়া উচিত— এ তর্ক দীর্ঘ দিনের। প্রয়োজনভিত্তিক স্বেচ্ছামৃত্যু বা নিষ্কৃতি-মৃত্যুর এই দাবিকে ঘিরে আদালতের ভিতরে-বাইরে দীর্ঘ লড়াই চলছিল। পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আদালতকেও অনেক ভাবনা-চিন্তা করতে হয়েছে। নানা বেদনাদায়ক পরিস্থিতি, নানা যন্ত্রণাদায়ক দৃষ্টান্তের কথা আদালতের গোচরে আনা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু যে অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে, তেমন পরিস্থিতির কথাও সর্বোচ্চ আদালতকে জানানো হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকাটাই যে অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাও আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। তার পরই দী‌র্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি মিলেছে। পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুও যে নাগরিকের অধিকারের মধ্যে পড়ে, আদালত তা মেনে নিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে অধিকার মিলল, সে অধিকারে কিছু বিপদও রয়েছে। পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যু যদি নাগরিকের অধিকার হয়, তা হলে নানা জাগতিক তথা বৈষয়িক তথা অর্থনৈতিক কারণে কাউকে নিষ্কৃতি দিতে বা নিতে চাইবেন অনেকেই। খুব স্পষ্ট করে বললে, পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার অনেককে খুনে প্ররোচিত করতে পারে। সম্পত্তি হাতানোর তাগিদে অসাধুরা অসুস্থ বা বয়স্ক নাগরিকদের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুর বৈধতাকে অনেকে সম্পত্তি হাতানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

অপব্যবহার যে হতে পারে, সে কথা ঠিক। কিন্তু অপব্যবহারের আশঙ্কায় আইনটাই থাকবে না, অপব্যবহার হতে পারে ধরে নিয়ে নাগরিককে সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হবে, এমনটা হতে পারে না।

আরও পড়ুন
জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা, দুর্নীতিও

অধিকারটা পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুর, সে ঠিকই। কিন্তু শুধু মৃত্যুর সঙ্গে নয়, এ অধিকার সম্মানজনক জীবনের সঙ্গেও সম্পর্কিত। শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতা যদি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, বুনিয়াদি সম্মান তথা সম্ভ্রমটুকু বজায় রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট নাগরিকের পক্ষে, তা হলে জীবন অবশ্যই যন্ত্রণাদায়ক। সেই যন্ত্রণার হাত থেকেই নিষ্কৃতি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে এই অধিকারে। যন্ত্রণার জীবনে ইতি টেনে নিষ্কৃতির মৃত্যুকে আপন করে নিতে পারার অধিকারের কথা বলা হয়েছে আদালতের এই রায়ে। অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে, এ কথা মাথায় রেখেও পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকারকে বৈধতা দানকারী এই রায়কে স্বাগত জানাতেই হচ্ছে। নাগরিকের সম্মানজনক যাপনের অধিকারকে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করছে এই রায়। সতর্ক থাকতে হবে সকলকেই। দীর্ঘ লড়াইয়ে যে অধিকার অর্জিত হল, অপব্যবহারের কালিমায় সে অধিকার যাতে নিমজ্জিত না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে প্রশাসনকে, নাগরিককে, আমাদের সবাইকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন