প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সসেমিরা দশার ঐতিহ্য বহু বছরের পুরনো। মুশকিলটা হল, ক্রমক্ষয়িষ্ণু জনভিত্তির জোরে আওয়াজটাকেও আর বেশি তোলা যায় না, কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা থেকে উত্তরণের দিশাও ক্রমশ বিলীন হতে থাকে। ইতিহাস ত্রমাগত পুনরাবৃত্ত হতে থাকে প্রদেশ কংগ্রেসের দুর্বল হাতকে কেন্দ্র করে।
যেমনটা হচ্ছে এখন। সনিয়া গাঁধীর বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় পর্যায়ে বিজেপি-বিরোধী জোটের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা মমতা যতটা বোঝেন, তার চেয়েও বেশি উপলব্ধি করেন সনিয়া। অতএব, কংগ্রেস সভানেত্রীর তরফে আপ্যায়ণ যে যথোচিত থাকবে, তাতে সংশয়ের অবকাশ নেই। সেই বার্তাটা পেয়েছেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় ফিরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধপর্বটা আপাতত শিকেয় তোলা থাক।
সন্দেহ নেই, দেশব্যাপী বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে সনিয়া গাঁধীর বার্তাও ঠিক একই রকম। সেই বার্তাটুকু শুধু পড়তে চাইছেন না প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। পরম্পরা মেনেই, তাঁরা হাঁকডাক শুরু করেছেন, বিস্তর ঢক্কানিনাদে জানাচ্ছেন, প্রদেশ নেতৃত্বকে যেন জোর করা না হয়, তৃণমূলের সঙ্গে জোট যেন চাপিয়ে দেওয়া না হয় ইত্যাদি। কংগ্রেস রাজনীতির প্রাথমিক পাঠটুকুও যাঁদের রয়েছে, তাঁরা অতীতে হেসেছেন, এখনও হাসছেন। কংগ্রেস রাজনীতির প্রবাহকে হাইকমান্ডের অঙ্গুলিনির্দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। এর অন্যথা যদি কোনও দিন হয়, সেটাও হবে হাইকমান্ডের নির্দেশেই, কংগ্রেস শিবিরে এই রসিকতা অত্যন্ত চালু।
এই সব জেনেও অধীর চৌধুরীদের সামনে অন্য বিকল্প খোলা থাকে না। নিজেদের ভিত্তিকে ক্রমাগত ক্ষয়ে যেতে দেখেও উত্তরণের পথ খুঁজে না-পাওয়া একটা দলের রাজ্য শাখার মতামতের মূল্যও ধীরে কমতে দেখে অসহায়তা থাকে এক দিকে। অন্য দিকে থাকে অস্তিত্ব রক্ষা ও ঘোষণার প্রাণপণ প্রয়াস। এই দুয়ের টানাপড়েনে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। উচ্চকিত ঘোষণায় মরিয়া প্রয়াস, যদি হাইকমান্ডের ওই নির্দেশদানকারী আঙুলকে অন্য দিকে হেলিয়ে দেওয়া যায়। সে কাজ কঠিন, সেটা জেনেও।
সর্বভারতীয় তাগিদ বনাম এই রাজ্যের অস্তিত্বরক্ষা, লড়াইটা ক্রমশই অসম হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের জন্য।