প্রতীকী ছবি।
কোন পথে চলেছে বাংলা? বাংলার রাজনীতি এ কোন চেহারা নিচ্ছে? রাজনৈতিক হানাহানি যে পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে ক্রমশ, তা কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চাপানউতোরটা বন্ধ করে অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রাশটা টেনে ধরা এখন অত্যন্ত জরুরি। রাজনীতিকে এতটা রক্তাক্ত চেহারায় দেখতে কোনও পক্ষেরই ভাল লাগছে বলে মনে হয় না।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনটে মৃতদেহ উঠল বাংলার রাজনীতির উঠোন থেকে। কুলতলিতে তৃণমূল কর্মী খুন, ক্যানিংয়ে তৃণমূলকর্মীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বহরমপুরে আরও এক তৃণমূল নেতার গুলিতে লুটিয়ে পড়া। একের পর এক হত্যার খবরে রাজনীতি যেন শিহরিত। এই পরিস্থিতি কোনও রাজনৈতিক শিবিরই কি দেখতে চায়? দেখতে যে চায় না, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ কমই। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে উঠছে কী ভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরটা এখনই খোঁজা জরুরি।
ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে রাজনীতির আঙিনায় শোণিতের এই উত্সব, সেই হিসেব কষতে আজ বসিনি। এ রাজ্যের রাজনীতিতে দায়ে ঠেলাঠেলির অভ্যাসটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেই হিসেব কষতে বসলেই আলোচনার উদ্দেশ্যটা গৌণ হয়ে পড়বে, মূল মঞ্চের দখল নেবে বিধেয়। তাই সেই অবকাশ তৈরি হতে না দেওয়াই শ্রেয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পর পর তিন তৃণমূল কর্মীর খুন হয়ে যাওয়া কোনও স্বাভাবিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত যে বহন করছে না, সে কথা নিশ্চয়ই প্রত্যেকেই উপলব্ধি করছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
নিশানায় শুধুমাত্র ছোটখাটো রাজনৈতিক কর্মী বা একেবারে নীচের স্তরের নেতারা রয়েছেন, এমন নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে বিধায়কের গাড়ির উপরে গুলি-বোমা নিয়ে ভয়াবহ হামলার স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। নদিয়ার হাঁসখালিতে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিত্ বিশ্বাসের চমকে দেওয়া হত্যাকাণ্ডের ক্ষত এখনও টাটকা। তাতেও থামানো যাচ্ছে না রক্তপাত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই জেলায় তিন রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়ে গেলেন প্রায় একই কায়দায়! মর্মান্তিক পরিস্থিতি, দুঃসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
আরও পড়ুন: ফের গুলি করে খুন তৃণমূল নেতা, এ বার মুর্শিদাবাদে
প্রায় প্রত্যেকটা খুনের পরেই রাজ্যের শাসক দল আঙুল তুলছে বিজেপির দিকে। বিজেপি তত্ক্ষণাত্ দায় ঝেড়ে দাবি করছে, মৃত্যুর এই মিছিল তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের। আসল কারণ কী, তা তদন্ত সাপেক্ষ। কার অভিযোগ সত্য, কার কথাটা মিথ্যা, কোন পক্ষ বাস্তবতাকে আড়াল করতে চাইছে, যে কোনও নিরপেক্ষ তদন্তেই তা স্পষ্ট হয়ে যেতে সময় লাগবে না। কিন্তু তার আগে এই রক্তস্রোত থামা জরুরি। রাজ্যের রাজনীতির আঙিনা রোজ রক্তে ভিজে যাবে, রোজ রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে স্বজন হারানোর হাহাকার উঠবে— এই দৃশ্য আমরা আর কেউই দেখতে চাই না। দায়টা কিন্তু প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রাণঘাতী হানাহানি ক্রমাগত চলতে থাকা প্রশাসনের পক্ষেও কোনও গৌরবজনক বিজ্ঞাপন নয়। তাই অবিলম্বে পরিস্থিতির রাশটা বজ্রমুষ্টিতে টেনে ধরা দরকার। আর একটাও রাজনৈতিক খুন ঘটতে দেওয়া যাবে না— প্রশাসনের তরফ থেকে এই বার্তা স্পষ্ট করে চারিয়ে দেওয়া জরুরি। রাজনীতির উঠোনটায় আচমকা শুরু হয়ে যাওয়া এই রক্তের উত্সবে এখনই পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়া জরুরি।
রাজ্যবাসীর মধ্যে যে উদ্বেগ চারিয়ে গিয়েছে, প্রশাসন সে উদ্বেগের শরিক নয় এমনটা ভেবে নেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের তরফেও পরিস্থিতির লাগাম হাতে নেওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই হচ্ছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে, এমনটা প্রমাণ করার দায় প্রশাসনেরই।