Editorial News

যদি সত্যিই বিপদ ঘনাত, কী কাজে আসত এই নিরাপত্তা বলয়?

অপদার্থতা তো বটেই, এই শৈথিল্য অপরাধমূলকও। বিপদ যে ঘনায়নি, সে সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত ঢিলেমি থাকলে, বিপদ যে ঘনাতে পারে যে কোনও মুহূর্তে, সে আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৬
Share:

লঙ্ঘন: হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে এ ভাবেই মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন রাবেয়া। ফাইল চিত্র।

আচম্বিতে মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন এক মহিলা। ভাষণরত মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে গিয়ে পড়েছিলেন সটান। স্থায়ী চাকরি এবং আরও কিছু চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ছুটেছিলেন হেমতাবাদের বাসিন্দা ওই মহিলা। বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় রুখতে পারেনি তাঁকে। ওই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিপজ্জনক ছিলেন না। যদি সত্যিই বিপজ্জনক কেউ ছুটে যেত মুখ্যমন্ত্রীর দিকে, এই নিরাপত্তা বলয় কী কাজে আসত?

Advertisement

হেমতাবাদের ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাবেয়া-আসনুরা অনেকটা আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পিছু পিছু ঘুরছিলেন। হেমতাবাদের সভাতেই প্রথম বার নয়, তার আগেও অন্যত্র মঞ্চে উঠে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা, সফল হননি। এক সভা থেকে আর এক সভা পর্যন্ত, এক জেলা থেকে আর এক জেলা পর্যন্ত দু’জন ছুটে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর পিছনে পিছনে, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চে উঠে পড়ার, অথচ গোয়েন্দা বাহিনী বা নিরাপত্তা বলয় কিছুই টের পাচ্ছে না— এর চেয়ে বড় অপদার্থতা কমই হয়। কেন কিছুই জানতে বা বুঝতে পারলেন না গোয়েন্দারা, কী ভাবে বেড়া ডিঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের একেবারে সামনের সারিতে পৌঁছে গেলেন দুই বোন, তার পরেও কী ভাবেই বা পৌঁছে গেলেন মঞ্চ পর্যন্ত, সে সব ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। নিরাপত্তাকর্মীদের এত বড় দলটা কী ভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নন, জাতীয় রাজনীতিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী, তিনি তৃণমূলের চেয়ারপার্সন, ভারতের রাজনীতিতে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণের অংশীদার তিনি, কখনও কখনও তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয় জাতীয় রাজনীতির নানা রকম সমীকরণ। প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী বরাদ্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় গোটা রাজ্যের গোয়েন্দা বাহিনীও তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত। দুই মহিলা শুধুমাত্র দৌ়ড় সম্বল করে এত উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা বলয় ভেঙে দিয়ে কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেতে পারেন! কেউ বলছেন রাবেয়া-আসনুরা গেরিলা কায়দায় বেড়া ডিঙিয়েছেন, কেউ বলছেন রাবেয়া-আসনুরার ক্ষিপ্র দৌ়ড় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীদের হার মানিয়েছে, কেউ বলছেন ঘটনার আকস্মিকতা নিরাপত্তারক্ষীদের হকচকিয়ে দিয়েছিল। এ সব কি আদৌ কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা হতে পারে?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন


স্কুলের পোশাকে সভায় যান ২ বোন

হেমতাবাদের ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাটা যে ভাবে ঘটেছে, তাতে উদ্বেগ স্বাভাবিক। গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ ঘিরে ঠিক যেখানে যেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার কথা, সেখানে সেখানে বেষ্টনী ছিল না বলে শোনা যাচ্ছে। দেহরক্ষীরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন না বলেও প্রতীত হচ্ছে। গাফিলতি যে রয়েছে, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তা চিহ্নিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তার পরে গত কয়েক দিনে কাটাছেঁড়া আরও বিশদে হয়েছে হেমতাবাদের ঘটনাটি নিয়ে। তাতেই একে একে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গাফিলতির নানা অভিযোগ। এত উচ্চ নিরাপত্তা যাঁর, এত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি, তাঁকে ঘিরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের এবং গোয়েন্দাদের মধ্যে এতখানি শৈথিল্য কি আশ্চর্যজনক নয়? অপদার্থতা তো বটেই, এই শৈথিল্য অপরাধমূলকও। বিপদ যে ঘনায়নি, সে সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত ঢিলেমি থাকলে, বিপদ যে ঘনাতে পারে যে কোনও মুহূর্তে, সে আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছে। হেমতাবাদের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ঠিকই, কিন্তু নিরাপত্তা বলয় তিনি ঢেলে সাজতে শুরু করেছেন বা দেহরক্ষীদের বদলে ফেলেছেন, এমনটা নয়। হেমতাবাদে নিরাপত্তা বেষ্টনী দুর্ভেদ্য রাখতে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছিলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে এর পরেও তাঁরাই থাকছেন। তাঁরা যে এই গুরুদায়িত্ব পালনে অপারগ নন, তা প্রমাণ করার কোনও অবকাশই আর তাঁরা হাতছাড়া হতে দেবেন না বলে আশা করা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement