চিত্ত যেথা ভয়শূন্য?

ঘটনাটি শুধুমাত্র ভয়ঙ্কর নহে, প্রতীকীও বটে। প্রতীকী এই কারণে যে, ইহা প্রমাণ করিয়া দেয় দুষ্কৃতীরা কতখানি বেপরোয়া হইলে প্রায় জনসমক্ষে দরজা ভাঙিয়া গণধর্ষণ করিতে সাহস পায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share:

যে কোনও ধর্ষণের অব্যবহিত পরই সমাজের এক শ্রেণি ব্যস্ত হইয়া পড়ে নির্যাতিতার চরিত্র বিশ্লেষণে। তিনি গভীর রাতে বাড়ি ফিরিতেছিলেন কি না, পোশাক আপত্তিকর ছিল কি না, নিয়মিত পুরুষসঙ্গী লইয়া নাইট ক্লাবে যাতায়াত করেন কি না ইত্যাদি। সম্প্রতি দত্তপুকুরের গণধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকেরা এই মুখগুলিকে চুপ করাইয়া দিয়াছে। কারণ সেখানে বর্ষবরণের রাত্রিতে কোনও মহিলাকে রাস্তায় একা পাইয়া গণধর্ষণ হয় নাই। এলাকায় সমাজবিরোধী হিসাবে পরিচিত কয়েক জনের একটি দল পিকনিক-অন্তে মত্ত অবস্থায় বাড়ির দরজা ভাঙিয়া, বাড়ির মালিককে প্রহার করিয়া মহিলাকে যৌন নির্যাতন করিয়াছে।

Advertisement

ঘটনাটি শুধুমাত্র ভয়ঙ্কর নহে, প্রতীকীও বটে। প্রতীকী এই কারণে যে, ইহা প্রমাণ করিয়া দেয় দুষ্কৃতীরা কতখানি বেপরোয়া হইলে প্রায় জনসমক্ষে দরজা ভাঙিয়া গণধর্ষণ করিতে সাহস পায়। এই স্পর্ধা তখনই সম্ভব যখন তাহারা নিশ্চিত, যে কোনও মাত্রার অপরাধ করিলেও তাহাদের কেশাগ্র কেহ স্পর্শ করিবে না। রাজনৈতিক প্রশ্রয় ব্যতীত এমন সাহস হয় কি? রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের অনুমান যে অযৌক্তিক নহে, দত্তপুকুরের ইতিহাসই তাহার প্রমাণ। এই অঞ্চলে দুষ্কৃতী-রাজ হালের ঘটনা নহে। দীর্ঘ দিন ধরিয়াই অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হিসাবে দত্তপুকুর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি চিহ্নিত হইয়া আছে। চোলাইয়ের ব্যবসা, মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা-সহ নানাবিধ অসামাজিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করায় ২০১৪ সালে এই দত্তপুকুরেই খুন হইয়াছিলেন সৌরভ চৌধুরী নামে এক কলেজ-ছাত্র। সেই ঘটনার পর বাসিন্দারা পথে নামিয়াছিলেন, রাত্রিপাহারার ব্যবস্থাও হইয়াছিল। পুলিশ নহে, বাসিন্দাদের উদ্যোগই কিছু দিনের জন্য রুখিয়া দিয়াছিল বেআইনি কাজকর্ম। সম্প্রতি ফের সক্রিয় হইয়া উঠিয়াছে দুষ্কৃতীরা। সৌরভ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রতনই এই গণধর্ষণের ঘটনাতেও প্রধান অভিযুক্ত। অভিযোগ, কিছু মাস পূর্বে সে জেল হইতে ছাড়া পাইবার পরই অঞ্চলে অবৈধ কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাইয়াছে। সুতরাং, প্রশাসন কিছুই জানিত না, ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। বরং বলা যাইতে পারে, পুলিশ-প্রশাসন সব জানিয়া দেখিয়াও চোখ বুজিয়া ছিল। কেন, তাহা অনুমান করা সম্ভব।

বস্তুত, দত্তপুকুর দেখাইয়া দিল রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় দুষ্কৃতীদের লালন করিবার বাম আমলের ধারা এই আমলেও একই ভাবে চলিতেছে। এবং চলিতেছে বলিয়াই একই জায়গা বারংবার নানাবিধ অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য শিরোনামে উঠিয়া আসিতেছে। অপরাধ দমনের সদিচ্ছা থাকিলে অনায়াসেই ওই স্থানগুলির জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা যাইত। সত্য যে, পুলিশের পক্ষে সর্বত্র একই রকম নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নহে। কিন্তু যে সমস্ত স্থান ইতিমধ্যেই অপরাধের আখড়া হিসাবে কুখ্যাত, সেইখানে বিশেষ ব্যবস্থা না করিবার ক্ষেত্রে কোনও কৈফিয়তই খাটিবে না। ইহা একান্ত ভাবেই পুলিশ-প্রশাসনের চূড়ান্ত অপদার্থতা এবং দল-দাসত্বের প্রমাণ। কোনও সুস্থ সমাজে একটি বিশেষ স্থানের বাসিন্দারা দুষ্কৃতীদের ভয়ে দিনের পর দিন জানালা বন্ধ করিয়া থাকিতে পারেন না। এই বাসিন্দাদের অভয় দানের দায়িত্বটি প্রশাসনকেই লইতে হইবে। কী ভাবে, তাহা প্রশাসনই স্থির করুক। অবিলম্বে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন