Power is like being a lady...if you have to tell people you are, you aren't.’’
— Margaret Thatcher
নির্বাচনের সবথেকে জরুরি কথা কী? ক্ষমতায়ন। ক্ষমতার সঠিক প্রয়োগ সংসদে দেশের ভাগ্য লেখে। কিন্তু বাদ সাধে ক্ষমতার বিন্যাস। সেই অসাম্যের ধারবাহিকতায় ২০১৯-এর নির্বাচনের আয়োজন যোগ করল নতুন স্বাদ। রাজনৈতিক প্রচারের মুখস্থ ভাষায় বড়সড় ছেদ পড়ল। ‘ভাই ও বোনেরা’ বদলে গিয়ে জায়গা করে নিল ‘বোন ও ভাইয়েরা’। সামান্য অবস্থান পরিবর্তন আসলে সমাজ বদলের বার্তা দিল। নির্বাচন সফরে গুজরাতে দাঁড়িয়ে সেই বার্তা দিলেন স্বয়ং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বিগত দিনে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?— এই প্রশ্ন রাখতে হবে সরকারের কাছে। ঝালিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘‘ভোট তোমাদের অস্ত্র।’’
সাধারণত ‘ভাই’দের হাতে সারাজীবন বিনা বিচারে ক্ষমতা আত্মসমর্পণ করতে হয়। ‘বোন’দের বেলায় চলে আসে রাজনৈতিক প্রতিভার প্রশ্ন। তার পরে আসে ব্যক্তিগত আচরণবিধি ও পোশাকের নিরিখে বিচার। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া এক নেত্রী জিন্স, টি-শার্ট ও বুট পরে টুইটারে ছবি আপলোড করেন। সেই ছবি ঘিরে বিতর্কের তুফান ওঠে। ‘‘ভারী সুন্দর, তার বাইরে কোনও রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেই প্রিয়ঙ্কার’’, ফস করে এই মন্তব্য করে বসেন অন্য এক জাতীয় দলের নেতা।
পোশাক ও চেহারার নিরিখে মেয়েদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত টানার অগভীর ও মূর্খ রেওয়াজে এই ছবি এক রকমের চ্যালেঞ্জ! কর্তব্য, বুদ্ধি, দায়িত্ববোধ নয়, পোশাক নিয়ে কটূক্তি, টিপ্পনি শুধু মেয়েদের বেলায়। আর নেতাদের ধুতি, রঙিন কুর্তা, বাহারি জ্যাকেট, প্যান্ট নিয়ে ঝড় নেই কোথাও। তাঁদের লাগাতার অশিক্ষিত, অসংবেদনশীল উক্তির কোনও বিচার নেই। খুনি, ধর্ষক, চোরাকারবারির নির্বাচনে টিকিট পাওয়া নিয়ে উত্তাল হয় না দেশ। ভোটে জিতে তাঁদের অগাধ অপদার্থতা নিয়ে হয় না কোনও চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু রাজনীতিতে আসা মহিলার পোশাক ও চরিত্রের চর্চায় ছেদ পড়ে না। নাগাড়ে চলে ধিক্কার ও তাচ্ছিল্য।
মার্গারেট থ্যাচার তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘যদি আমার সমালোচকেরা আমায় টেমসের উপর হাঁটতে দেখে তবে তাঁরা বলবে যে, আমি সাঁতার জানি না।’’ আসলে বিশ্বজুড়ে মহিলাদের কাজের সমালোচনায় কাজ নয়, থাকে অবান্তর আক্রমণ। তা কখনও শরীর, কখনও চরিত্র, কখনও পোশাক নিয়ে। এই ধরনের সমালোচনার অভিমুখ রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে বিপজ্জনক। মেয়েদের সামনে এগিয়ে আসার পথে এ এক বড় বাধা। পাড়ার সাবিনা, সবিতা থেকে গাঁধী পরিবারের মা–মেয়ে কারও রেহাই নেই।
এক সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীর রাজনৈতিক দলে সম্ভাব্য যোগদানের খবর নিয়ে এক নেতা মন্তব্য করলেন, ‘‘রাহুলের মা-ও নৃত্যশিল্পী। দু’জনেরই পেশা এক। দু’জনেই নাচের কাজ করেন।’’ মায়াবতী প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করায় তাঁর ফেসিয়াল ও চুলের রং করা নিয়ে কথা ওঠে। চুপ করিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে মহিলাদের চরিত্র ও জীবনচর্চা বরাবরের হাতিয়ার। বাদ যাননি হিলারি ক্লিন্টনও। তাঁর পোশাক নিয়েও চর্চার অন্ত নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র জুতোর পছন্দ নিয়েও হইহই করেছেন অনেকে। কিন্তু পোশাক তো চরিত্র নয়, দেহের আবরণ!
শিক্ষিকা, রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল