প্রবন্ধ ২

সিংহ জাতীয় পশু? কেন?

বাঘ নয়, জাতীয় পশু হোক সিংহ— প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। ভারতে বাঘ আছে সতেরোটি রাজ্যে। সিংহ একটিতে। তবে হ্যাঁ, সেই রাজ্যটির নাম গুজরাত।ন্যা শনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ (এনবিডব্লিউএল) কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। সম্প্রতি রাজ্যসভার এক সদস্য এই প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বাঘের বদলে সিংহকে ভারতের জাতীয় পশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব। দেশের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে ভারত সরকার ১৯৫২ সালে ইন্ডিয়ান বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ নামে একটি উপদেষ্টা গোষ্ঠী গঠন করে, প্রধানমন্ত্রী হন তার চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন প্রণীত হয়।

Advertisement

পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share:

ন্যা শনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ (এনবিডব্লিউএল) কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। সম্প্রতি রাজ্যসভার এক সদস্য এই প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বাঘের বদলে সিংহকে ভারতের জাতীয় পশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব।

Advertisement

দেশের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে ভারত সরকার ১৯৫২ সালে ইন্ডিয়ান বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ নামে একটি উপদেষ্টা গোষ্ঠী গঠন করে, প্রধানমন্ত্রী হন তার চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন প্রণীত হয়। ২০০২ সালে সেই আইন সংশোধন করে একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। সেটিই হল এনবিডব্লিউএল। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই বোর্ডের আনুষ্ঠানিক সূচনা।

গত ১৪ মার্চ পরিবেশ ও বন দফতরের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের পৌরোহিত্যে বোর্ডের স্ট্যান্ডিং কমিটির এক বৈঠক হয়। মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বৈঠকের কার্যবিবরণী নথিভুক্ত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এই বৈঠকে বোর্ডের সদস্য-সচিব জানান যে, সাংসদ পরিমল নাথবানী তাঁদের ‘এশিয়াটিক সিংহকে ভারতের জাতীয় পশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করার’ অনুরোধ জানিয়েছেন। স্ট্যান্ডিং কমিটি আলোচনার পরে মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছে, এ বিষয়ে বৃহত্তর আলাপ আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Advertisement

নাথবানীর বয়স ঊনষাট। তিনি ঝাড়খন্ড থেকে দু’বার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন মার্চ ২০০৮ এবং মার্চ ২০১৪’য়। তিনি মুকেশ অম্বানীর নেতৃত্বাধীন রিলায়ান্স ইনডাস্ট্রিজ-এর অন্যতম কর্মকর্তা। ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোগী হিসেবেই নাকি তাঁর উত্থান। ধীরুভাই অম্বানীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৯৭ সালে তিনি রিলায়ান্স গ্রুপ-এ যোগ দেন এবং ক্রমশ গুরুত্ব অর্জন করেন। জামনগরে তেল শোধনাগারের জমি জোগাড় করার ব্যাপারে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক সহ এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন বড় প্রকল্পেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল।

এশিয়াটিক সিংহের জন্য নাথবানী এই প্রথম দরবার করলেন না। ২০১২ সালেও তিনি একই প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। তত্‌কালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন জানান, সরকার এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে না। মাত্র পাঁচ মাস আগেও, গত ডিসেম্বরে, রাজ্যসভায় নাথবানীর পেশ করা এক প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান মন্ত্রী জাভড়েকর একই কথা বলেছিলেন। স্পষ্টতই, ইতিমধ্যে পরিস্থিতি বদলেছে।

আপন রাজ্যের ‘জঙ্গলের রাজা’ সিংহের প্রতি বরাবরই নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ অনুরাগ আছে। তাতে অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই, তিনি শুধু গুজরাতের মানুষ নন, বারো বছর সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৩’র ৮ এপ্রিল একটি টেলিভিশন চ্যানেল আয়োজিত এক প্রকাশ্য আলোচনাচক্রে তিনি বাঘ সংরক্ষণে (অধুনা বিলুপ্ত) যোজনা কমিশনের আর্থিক সহযোগিতা বিষয়ে কিছু তাত্‌পর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। অন্য একটি প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেল বাঘ সংরক্ষণের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিল। মোদী বলেছিলেন, ‘যোজনা কমিশনে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে।’ এই প্রেক্ষিতেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলটির সম্পর্কেও তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। এবং তার পর তিনি রঙ্গভরে বলেছিলেন, কে জানে, যোজনা কমিশন বাঘকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সিংহকে সাম্প্রদায়িক প্রাণী মনে করে কি না! উপস্থিত শ্রোতারা এ নিয়ে হাসিঠাট্টাও করেছিলেন।

এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না যে, বাঘ ভারতের ‘নিজস্ব’ প্রাণী। বস্তুত, ভারতকে পৃথিবীর একমাত্র দেশ বলে গণ্য করা হয় যেখানে বাঘকে তার প্রাকৃতিক বাসভূমিতে পাওয়া যায়, অন্য যে সব দেশে বাঘ আছে সেখানে তারা ‘বহিরাগত’। এবং ভারতে ১৭টি রাজ্যে বাঘ আছে, সিংহ মাত্র একটিতে। তবে হ্যাঁ, সেই রাজ্যটির নাম গুজরাত। আর সংখ্যা? একটি সাম্প্রতিক সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে বনাঞ্চলে বাঘের মোট সংখ্যা ২২০০-র বেশি, গির অরণ্যে এশিয়াটিক সিংহ আছে আনুমানিক ৪১১টি।

সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার যদি শ্রীযুক্ত নাথবানীর সুপারিশ মেনে নেয়, তা হলে কেবল বাঘকে বাঁচানোর উদ্যোগ ব্যাহত হবে না, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত অভয়ারণ্যগুলি নষ্ট করে শিল্পপ্রকল্প গড়ে তোলার রাস্তা সাফ হতে পারে। আশা করব, এই আশঙ্কা সত্য হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন