Editorial News

এমন বেনজির পরিস্থিতি কেন? জবাব দিতে হবে কেজরীবালকেই

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাসভবনে দিল্লির মুখ্যসচিব অংশু প্রকাশের হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ বেনজির, অতএব পরিস্থিতিও বেনজির।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৭
Share:

ফাইল চিত্র।

স্তম্ভিত হওয়ার মতো অভিযোগ। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা বা এমন অভিযোগের কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে মধ্যরাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই শাসক দলের বিধায়কদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন মুখ্যসচিব— এমন দৃশ্যের অবতারণাও যে হতে পারে, অভিযোগটা ওঠার আগে তা কারও কল্পনার পরিসরে ছিল বলেও মনে হয় না।

Advertisement

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাসভবনে দিল্লির মুখ্যসচিব অংশু প্রকাশের হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ বেনজির, অতএব পরিস্থিতিও বেনজির। দিল্লির প্রশাসনিক কর্তারা মোমবাতি হাতে রাস্তায় নেমেছেন। সরকারি কর্মীরা ধর্মঘটে চলে গিয়েছেন। প্রশাসনিক শিবির থেকে প্রায় সর্বাত্মক অসহযোগিতার বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক শিবিরে অরবিন্দ কেজরীবালের শুভানুধ্যায়ী বা সহমর্মীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু অভিযোগ এতই গোলমেলে এ বার যে, রাজনৈতিক শিবির থেকেও সে ভাবে কাউকে অরবিন্দ কেজরীবালের হয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়নি এখনও। স্পষ্টতই নিঃসঙ্গ কেজরীবাল। এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে কেজরীবালকেই সর্বাগ্রে মুখ খুলতে হবে।

কেজরীবাল নিজে মুখ না খুললেও তাঁর দল আপ বিবৃতি দিয়েছে। তবে সেই বিবৃতি ধোঁয়াশা কাটাতে পারেনি, বাড়িয়েছে বরং। ধোঁয়াশা প্রথমত তৈরি হয়েছে বৈঠকের আলোচ্য সূচিকে ঘিরে। মুখ্যসচিব বলছেন, সরকারি বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছিল। আপ বলছে, বৈঠক ডাকা হয়েছিল রেশন সংক্রাম্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য। দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন উঠছে বৈঠকের নির্ঘণ্ট নিয়েও। কী এমন আপত্কালীন পরিস্থিতি তৈরি হল যে মধ্যরাতে বৈঠক ডাকতে হল? প্রশ্ন অনেকেরই। আপ বলছে, মধ্যরাতে নয়, বৈঠক ডাকা হয়েছিল রাত ১০টায়, মুখ্যসচিব পৌঁছন দু’ঘণ্টা দেরিতে। প্রশ্ন হল, রাত ১০টাতেই বা বৈঠক ডাকবেন কেন মুখ্যমন্ত্রী? পরিস্থিতি কতটা জরুরি ছিল যে, রাত ১০টায় বৈঠক ডাকতে হল?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট এবং সন্তোষজনক জবাব কিন্তু কেজরীবালকে দিতে হবে। না হলে তাঁকে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে হবে।

কেজরীবালকে এবং তাঁর সরকারকে ঘিরে বিতর্ক কিন্তু এই প্রথম নয়। ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসা ইস্তক একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন কেজরীবাল, বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর দল আপ এবং তাঁর সরকার। কখনও দিল্লির সাফাইকর্মীরা ধর্মঘটে চলে গিয়েছেন, গোটা রাজধানী বেশ কয়েকদিন ধরে আবর্জনার স্তূপ হয়ে থেকেছে। কখনও দিল্লির দুই নগরনিগমের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ মেনে কেজরীবালের দলের ২০ বিধায়ককে রাষ্ট্রপতি বরখাস্ত করেছেন। কিছু দিন আগে দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি-সহ অন্যেরা কেজরীবালের বাড়িতে বৈঠক করতে গিয়ে আপ বিধায়কদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এ বার খোদ মুখ্যসচিব অভিযোগ করলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে শাসকদলের বিধায়কদের হাতে তিনি নিগৃহীত হয়েছেন। এতটা কম সময়ে এত রকম বিতর্কের জন্ম খুব কম সংখ্যক রাজনীতিকই দিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: কেজরীবালের বাড়িতে মুখ্যসচিবকে মারধর! অস্বীকার আপের

বিতর্কের যে পাহাড় জমেছে তাঁকে ঘিরে, সেই পাহাড় সরানোর দায়িত্ব কিন্তু অন্য কেউ নেবেন না, কেজরীবালকেই নিতে হবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন, তাঁকে ঘিরে যা কিছু বিতর্ক, সে সবই কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট। কেজরীবালের দাবি, রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার তিনি। কোনও কোনও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এই রাজনৈতিক চক্রান্তের তত্ত্ব কিছুটা মানছেন। কোনও কোনও পর্যবেক্ষক কেজরীবালদের প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতাকে দায়ী করছেন। তবে দিনের শেষে একথা বোধহয় প্রত্যেককেই মানতে হবে যে, রাজনৈতিক চক্রান্ত প্রায় সব বড় নেতার বিরুদ্ধেই ঘনিয়ে ওঠে, প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতাও ধীরে ধীরেই কাটান অধিকাংশ রাজনীতিক। অতএব, অরবিন্দ কেজরীবালের জন্য পরিস্থিতি অস্বাভাবিক কঠিন ছিল আর অন্যান্যদের পরিস্থিতি অনেক বেশি সহজ সরল হয়, এমন তত্ত্বে সিলমোহর দেওয়া শক্ত।

অরবিন্দ কেজরীবালকে মুখ খুলতেই হবে। এমন বেনজির এক অভিযোগ উঠেছে তাঁর দলের বিধায়কদের বিরুদ্ধে যে, শুধু চাপান-উতোরের পথে হেঁটে এ বিতর্ক সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিই জরুরি। ধোঁয়াশা কাটানোও জরুরি। যে প্রশ্নগুলো উঠেছে কেজরীবালের দল এবং সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে, সে সব প্রশ্নের কতটা সন্তোষজনক জবাব কেজরীবাল দিতে পারেন, ধোঁয়াশাগুলো কতখানি কাটাতে পারেন, গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবিরই এখন সে দিকে তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন