সম্পাদকীয় ২...

অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ভারতীয় অর্থনীতির এই দুই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্কটি সহযোগিতার না কি প্রতিস্পর্ধার, কর্তারা সেই বিষয়ে এখনও সহমত হইতে পারিলেন না। পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম যেমন সুযোগ পাইলেই স্মরণ করাইয়া দেন, অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া চলিতে হইবে, রঘুরাম রাজনও বারংবার বলেন যে উভয় প্রতিষ্ঠান নীতিগত ভাবে একই নৌকায় রহিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:৫৫
Share:

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ভারতীয় অর্থনীতির এই দুই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্কটি সহযোগিতার না কি প্রতিস্পর্ধার, কর্তারা সেই বিষয়ে এখনও সহমত হইতে পারিলেন না। পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম যেমন সুযোগ পাইলেই স্মরণ করাইয়া দেন, অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া চলিতে হইবে, রঘুরাম রাজনও বারংবার বলেন যে উভয় প্রতিষ্ঠান নীতিগত ভাবে একই নৌকায় রহিয়াছে। তবুও, উভয়ের অবস্থানের অনমনীয়তা এবং বৈপরীত্যও চোখ এড়াইবার নহে। অর্থমন্ত্রী আয়বৃদ্ধির হার লইয়া উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের মুখে এই পাঁচ শতাংশেরও কম বৃদ্ধির হার লইয়া তিনি কী করিবেন, প্রশ্নটি তাঁহাকে বিলক্ষণ বিচলিত করে। এক দিকে ভোটাররা আর অন্য দিকে শিল্পমহল, উভয়ের চাপই তাঁহার উপর। অন্য দিকে, রাজন, অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ভাবেই, মূল্যস্ফীতির হার লইয়া সর্বাধিক চিন্তিত। ফলে, সাম্প্রতিক অতীতে ঠোকাঠুকি নেহাত কম লাগে নাই। সম্প্রতি যেমন ব্যাঙ্ক ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতি গ্রহণের কথা বলিল এবং অর্থমন্ত্রক আপত্তি জানাইল। অর্থমন্ত্রী বলিয়াই দিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে বৃদ্ধির হার বাড়াইবার ভারসাম্য বজায় রাখিতে হইবে, কথাটি ব্যাঙ্ক যেন না ভোলে।

Advertisement

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রক নীতিগত আপত্তি জানাইতে পারে কি? মন্ত্রকের তৈরি করিয়া দেওয়া বিভিন্ন কমিটিই এই নীতির প্রস্তাব করিয়াছে। পার্সি মিস্ত্রির কমিটি, এবং যোজনা কমিশন নিয়োজিত রঘুরাম রাজন কমিটি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের অভিমুখে নীতি নির্ধারণের সুপারিশ করিয়াছিল। ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচকের স্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতির যে প্রস্তাব উরজিৎ পটেল কমিটি করিয়াছে, ফিনানশিয়াল সেক্টর লেজিসলেটিভ রিফর্মস কমিশনও প্রায় সেই রকম নীতির কথাই বলিয়াছিল। এই কমিশনের তৈরি করিয়া দেওয়া ইন্ডিয়ান ফিনানশিয়াল কোড অর্থ মন্ত্রকের জোরালো সমর্থন পাইয়াছে। নির্বাচনের ঢাকে বোল ফোটামাত্র অর্থমন্ত্রী এই কথাগুলি বিস্মৃত হইলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর কিছু করণীয় থাকে কি?

উরজিৎ পটেল কমিটির যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী মানিতে অসম্মত, তাহার কিছু সুপারিশ সরকার শুনিলে লাভই হইত। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জোগান ব্যবস্থার সংস্কার যে অপরিহার্য, কমিটি তাহা স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। একই সঙ্গে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলিয়াছে, যে ভোগ্যপণ্যগুলির ক্ষেত্রে এখনও বাজারের বাহিরে মূল্য নির্ধারিত হইয়া থাকে, সেই ক্ষেত্রগুলিতে সংস্কারের সুপারিশ করিয়াছে। এবং, ব্যাঙ্কের হাতে থাকা নগদের উপর হইতে স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিয়ো নামক সরকারি স্বত্ব বিলোপ করিয়া সরকারি ঋণপত্রের বাজারটিকে কার্যকর করিয়া তুলিবার কথা বলিয়াছে। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সংস্কারগুলি আবশ্যিক, কমিটি সরকারকে তাহা ফের স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। কোনও সময়ই সংস্কারের এই তিক্ত বটিকা রাজনীতিকদের পছন্দ হইবার কথা নহে, নির্বাচনের প্রাক্কালে তো বটেই। চিদম্বরমও স্বভাবতই ওই পথে হাঁটিতে আগ্রহী নহেন। তিনি দুইটি কথা স্মরণে রাখিতে পারেন। এক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যাহাই করুক, এই সংস্কারগুলি না হইলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসিবে না। এবং দুই, বৃদ্ধির হার বাড়াইতেও এই সংস্কারগুলি জরুরি। ব্যাঙ্ককে তাহার কর্তব্য স্মরণ না করাইয়া অর্থমন্ত্রী নিজে এই কথাগুলি মনে রাখিলে ভাল করিবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement