সম্পাদকীয় ২

আশাবাদী

রেল বাজেট পেশ করিবার সময় সদানন্দ গৌড়া বলিয়াছিলেন, সংস্কার এমনই এক ঔষধ যাহার স্বাদ তিক্ত। কিন্তু, সেই ঔষধ যখন কার্যকর হয়, তখন তাহাই মিষ্ট লাগে। সংস্কার নামক ঔষধটির অপরিহার্যতা বিষয়ে রাজনীতিকরা অবহিত নহেন, নিন্দুকেও এমন দাবি করিবে না। কিন্তু কটু স্বাদের চৌকাঠে হোঁচট খাইয়া ফের ভোটারের মন ভুলাইবার লজেঞ্চুসের দিকে হাত বাড়াইবার অভ্যাসটিও তাঁহাদের মজ্জাগত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

রেল বাজেট পেশ করিবার সময় সদানন্দ গৌড়া বলিয়াছিলেন, সংস্কার এমনই এক ঔষধ যাহার স্বাদ তিক্ত। কিন্তু, সেই ঔষধ যখন কার্যকর হয়, তখন তাহাই মিষ্ট লাগে। সংস্কার নামক ঔষধটির অপরিহার্যতা বিষয়ে রাজনীতিকরা অবহিত নহেন, নিন্দুকেও এমন দাবি করিবে না। কিন্তু কটু স্বাদের চৌকাঠে হোঁচট খাইয়া ফের ভোটারের মন ভুলাইবার লজেঞ্চুসের দিকে হাত বাড়াইবার অভ্যাসটিও তাঁহাদের মজ্জাগত। ইউপিএ-এর আমলে তাহার বহু নিদর্শন মিলিয়াছে। মনমোহন সিংহ মাঝেমধ্যেই দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কারের কথা বলিতেন বটে, কিন্তু তাহার দৌড় কথা ছাড়িয়া কাজে পৌঁছায় নাই। নরেন্দ্র মোদীও গত এক মাসে বেশ কয়েক বার কঠোর সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বলিয়াছেন। প্রশ্ন হইল, আজ অরুণ জেটলি যে বাজেট পেশ করিবেন, তাহাতে সেই প্রতিশ্রুতির ছাপ থাকিবে কি? ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ নামক নথিটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলে বলিতে হয়, সম্ভাবনা বিলক্ষণ আছে। সত্য, এই বার্ষিক নথিটি চরিত্রে খানিক আশাবাদীই কী করা সম্ভব, তাহার বদলে কী করিলে ভাল হয়, সেই কথা বলিতেই এই নথির বরাবরের আগ্রহ। কিন্তু, এই বত্‌সরের অর্থনৈতিক সমীক্ষার অভিমুখটি সম্পূর্ণত সংস্কারের দিকেই। কাজেই, সমীক্ষার আশাবাদ আংশিক ভাবে বাস্তবায়িত হইলেও তাহা একটি জরুরি পদক্ষেপ হইবে।

Advertisement

অর্থনীতির রোগ আপাতদৃষ্টিতে অনেক। কিন্তু, রোগের শিকড় অনুসন্ধান করিলে যে মূল কারণগুলিতে পৌঁছানো যায়, তাহা হইল, ১) সরকারের আয় ও ব্যয়ের সঙ্গতি নাই; ২) মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নাই; ৩) বিনিয়োগের পরিবেশ নাই। প্রতিটি ব্যাধিরই দাওয়াই সংস্কার। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, আশার কথা, প্রতিটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। যেমন, ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেটারি ম্যানেজমেন্ট (এফআরবিএম) আইনের দাঁত-নখ শক্তিশালী করিবার কথা বলা হইয়াছে। অর্থাত্‌, রাজকোষ ঘাটতির পরোয়া না করিয়া সরকার যাহাতে যথেচ্ছ হরির লুঠের পথে হাঁটিতে না পারে, তাহার ব্যবস্থা। কী ভাবে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যসীমায় বাঁধিয়া রাখা সম্ভব, তাহারও দ্বিমুখী পন্থার কথা বলা হইয়াছে। এক দিকে মোট অভ্যন্তরীণ উত্‌পাদনের অনুপাতে করের পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলা হইয়াছে, যাহা হয়তো প্রত্যক্ষ করবিধি এবং পণ্য ও পরিষেবা করের মাধ্যমে করা সম্ভব। অন্য দিকে, ভর্তুকি সংস্কারের কথাও বলা হইয়াছে। লক্ষণীয়, রাজনৈতিক শুদ্ধতার ধার না ধারিয়া সমীক্ষা বলিয়াছে, গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনা মজুরের ঘাটতি সৃষ্টি করিয়াছে, মজুরির হার বাড়িয়াছে। সম্ভবত এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সংস্কারও হইবে।

রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ কমিলে মূল্যস্ফীতিও আংশিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে আসিবে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ভোগ্যপণ্য মূল্য সূচকের (পাইকারি মূল্য সূচক নহে) নিরিখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করিবার লক্ষ্যে নূতন আর্থিক নীতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলিয়াছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাধ্যবাধকতার কথাও উল্লেখ করা হইয়াছে। এই নূতন নীতির পথে হাঁটাও সংস্কারমনস্কতা। কৃষিপণ্যের মূল্যস্তর ভোগ্যপণ্য সূচকের উপর তাত্‌পর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সমীক্ষায় গোটা দেশে কৃষিপণ্যের অভিন্ন বাজারের কথা বলা হইয়াছে। এপিএমসি আইনের কানাগলি হইতে সরিয়া দাঁড়াইবার এই সদিচ্ছাও সংস্কার বইকী। বাকি থাকিল বিনিয়োগের পরিবেশের প্রশ্ন। সমীক্ষায় বিবিধ সংস্কারের ইঙ্গিত রহিয়াছে। আশা, অরুণ জেটলি প্রশ্নটিকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দিবেন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন