আসিতে আজ্ঞা হউক

যাহার প্রয়োজন ফুরাইয়াছে, তাহাকেও আঁকড়াইয়া বসিয়া থাকা ভারতের স্বভাব। কণাটুকু হারাইলেও তাহার প্রাণ হায় হায় করিয়া উঠে। মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা (যথা, কন্ডোম নহে, যৌনসংযমই এডস প্রতিরোধের সুপথ) হইতে মান্ধাতা আমলের কারখানা (যথা, পশ্চিমবঙ্গের সুপ্রাচীন চটকলের সারি) তাহার চোখে সকলই নবীন, সকলই মহামূল্যবান। সুতরাং বিদায় নীতি নাই। কেহ যদি প্রশ্ন তোলেন, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যোজনা কমিশন কেন রাজধানী আলো করিয়া বিরাজমান, তবে বুঝিতে হইবে, তিনি ভারতীয় সমাজ এবং তাহার সন্তান ভারতীয় রাষ্ট্রকে চেনেন না। কিন্তু অপরিচিতের প্রশ্ন সতত মূল্যবান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

যাহার প্রয়োজন ফুরাইয়াছে, তাহাকেও আঁকড়াইয়া বসিয়া থাকা ভারতের স্বভাব। কণাটুকু হারাইলেও তাহার প্রাণ হায় হায় করিয়া উঠে। মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা (যথা, কন্ডোম নহে, যৌনসংযমই এডস প্রতিরোধের সুপথ) হইতে মান্ধাতা আমলের কারখানা (যথা, পশ্চিমবঙ্গের সুপ্রাচীন চটকলের সারি) তাহার চোখে সকলই নবীন, সকলই মহামূল্যবান। সুতরাং বিদায় নীতি নাই। কেহ যদি প্রশ্ন তোলেন, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যোজনা কমিশন কেন রাজধানী আলো করিয়া বিরাজমান, তবে বুঝিতে হইবে, তিনি ভারতীয় সমাজ এবং তাহার সন্তান ভারতীয় রাষ্ট্রকে চেনেন না। কিন্তু অপরিচিতের প্রশ্ন সতত মূল্যবান। এবং, আশার কথা, নূতন সরকার দিল্লির গদিতে অধিষ্ঠিত হইবার পরে প্রশ্নটি উঠিয়াছে। উঠিয়াই যে তাহা হাওয়ায় মিলায় নাই, সে কথাও ইতিমধ্যে স্পষ্ট, কারণ যোজনা কমিশনের ভূতপূর্ব ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার পদত্যাগের পরে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়া গিয়াছে, নূতন সরকারের বয়স এক মাস পূর্ণ হইয়াছে, তথাপি যোজনা কমিশনের নূতন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা ধার করিয়া বলা চলে, আর নিযুক্ত হইবার প্রয়োজনও নাই। যোজনা কমিশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁহার সরকারের একটিই কর্তব্য: এই কালাতিক্রান্ত এবং অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানটিকেতুলিয়া দেওয়া।

Advertisement

স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিচালনায় যোজনা কমিশনকে যে ভূমিকা দেওয়া হইয়াছিল, পঞ্চবার্ষিক যোজনার যে নীতিকাঠামো গৃহীত হইয়াছিল, তাহা এই দেশের প্রভূত ক্ষতি সাধন করিয়াছে। কিন্তু তাহা বহুচর্চিত। সুখের কথা, ভারত অনেক দেরিতে হইলেও শেষ অবধি, গত শতাব্দীর অন্তিম দশকেই, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কানাগলি হইতে উদার অর্থনীতির রাজপথে উত্তীর্ণ হইয়াছে। এখনও সেই উত্তরণ সম্পূর্ণ নহে, কিন্তু আর্থিক নীতির অভিমুখটি গত দুই দশকে বদলায় নাই। আশা করা যায়, ক্রমশ অর্থনীতির উপর রাষ্ট্রের অনাবশ্যক নিয়ন্ত্রণগুলি দূর হইতে থাকিবে। নরেন্দ্র মোদীর নূতন সরকার হইতে তেমন সুসংকেত মিলিয়াছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া যদি আরও অনেক দিন ধরিয়া চলে, তাহা হইলেও যোজনা কমিশনকে বাঁচাইয়া রাখিবার কিছুমাত্র যুক্তি নাই, পঞ্চবার্ষিক যোজনা নামক বস্তুটিকেও প্রাচীন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় ঠাঁই দেওয়াই সংগত। তাহার সহজ কারণ, একটি মুক্ত অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় যোজনার কোনও স্থান নাই।

যোজনা কমিশন এবং পঞ্চবার্ষিক যোজনার কাঠামোটি কেবল অপ্রয়োজনীয় নহে, তাহা ক্ষতিকর ও অন্যায়। তাহার কারণ, এই ব্যবস্থাটিতে রাজ্যের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের অবাঞ্ছিত ও অনৈতিক প্রভুত্ব কায়েম হইয়া আছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আর্থিক সম্পর্ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অর্থ কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়, বস্তুত সে ক্ষেত্রেও রাজ্যের অধিকার বৃদ্ধি জরুরি। যোজনা কমিশনের কোনও সাংবিধানিক স্বীকৃতিই নাই, ইহা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি ভূমিকা পালন করিয়াছে। সেই কারণেও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রবল প্রচারক প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য তাহাকে বিদায় জানানো। বিদায়ের অর্থ বিদায়। ‘থিংক ট্যাঙ্ক’ হিসাবে তাহার কোনও নূতন অবতারের প্রয়োজন নাই, কমিশনের জ্ঞানভাণ্ডার স্বচ্ছন্দে অন্যত্র স্থানান্তরিত হইতে পারে। শ্বেতহস্তীর দায় বহন করিতে না হইলে সরকারি কোষাগারের বোঝা কমিবে। অরুণ জেটলি তাঁহার নায়ককে ধন্যবাদ দিবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement