সম্পাদকীয় ২

ইউজিসি কেন

প্রশ্ন উঠিয়াছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হাতেই আইআইটি-র পাঠ্যক্রম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকা উচিত কি না। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এ বিষয়ে আইআইটি কাউন্সিলের সহিত আলোচনাতে বসিতে রাজি হইয়াছেন। আইআইটি কাউন্সিল দেশের মোট ষোলোটি আইআইটি-র ভারপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। আলোচনার গতি দ্রষ্টব্য। কিন্তু মূল প্রশ্ন একটিই: ইউজিসি প্রতিষ্ঠানটি কেন রহিয়াছে? কী তাহার উদ্দেশ্য, কী তাহার কাজ?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

প্রশ্ন উঠিয়াছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হাতেই আইআইটি-র পাঠ্যক্রম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকা উচিত কি না। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এ বিষয়ে আইআইটি কাউন্সিলের সহিত আলোচনাতে বসিতে রাজি হইয়াছেন। আইআইটি কাউন্সিল দেশের মোট ষোলোটি আইআইটি-র ভারপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। আলোচনার গতি দ্রষ্টব্য। কিন্তু মূল প্রশ্ন একটিই: ইউজিসি প্রতিষ্ঠানটি কেন রহিয়াছে? কী তাহার উদ্দেশ্য, কী তাহার কাজ? বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ছড়ি ঘোরানো, শুধু এইটুকুই? আইআইটি-র মতো শীর্ষ মানের প্রতিষ্ঠান কি নিজের দেখভাল নিজে করিতে পারে না? ভর্তির পরীক্ষা কেমন হইবে, পাঠ্যক্রমে কী থাকিবে, কী প্রক্রিয়ায় পরীক্ষণ পদ্ধতি চলিবে, এইগুলি ঠিক করিতে পারে না? আইআইটি কেন, ছোট-বড় সকল বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ইহা করিতে পারে, তাহাদের এ কাজ করা উচিত। তদুপরি আইআইটি-র ক্ষেত্রে কাউন্সিলের মতো নিবেদিত সংস্থাও রহিয়াছে, প্রয়োজনে যাহারা যথেষ্ট পরামর্শ, সহায়তা দিতে পারে। আরও একটি অভিভাবক কমিশন কেন দরকার? যদি কেহ নিজের প্রতিষ্ঠানের বাঞ্ছিত মান রক্ষা করিতে না পারে, শিক্ষার্থী-সমাজ তাহা বুঝিয়া লইবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বশাসনই উৎকৃষ্ট পন্থা। অন্য কাহারও খবরদারি অপ্রয়োজনীয়। অবাঞ্ছিত।

Advertisement

ভারতীয় ব্যবস্থার বিপদ এই যে, অবাঞ্ছিত খবরদারির ব্যবস্থা তো রহিয়াছেই, এমনকী বহুবচনে রহিয়াছে। উচ্চ শিক্ষা ‘পরিকল্পনা’র জন্য মঞ্জুরি কমিশন আছে, সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ‘পরিকল্পনা’র জন্য যোজনা কমিশন আছে, অন্তত এ-যাবৎ ছিল। প্রথমটির কাজ সব রকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ছড়ি ঘোরানো। দ্বিতীয়টির কাজ সকল মন্ত্রকের কর্মপন্থা নির্ধারণ। অথচ যে যুক্তিতে ইউ জি সি-র অর্থ নাই, সেই যুক্তিতেই যোজনা কমিশনও অর্থহীন। তবে কিনা, এইখানে একটি অতিরিক্ত ও প্রণিধানযোগ্য কথা আছে। যোজনা কমিশন তৈরির পিছনে যদি-বা কোনও যুক্তি থাকেও, ইউজিসি কিন্তু সেই যুক্তিতেও টিকে না। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সমাজ-অর্থনীতিতে যাঁহারা বিশ্বাস করেন, তাঁহারা বলিতে পারেন, যোজনা কমিশন উত্তম বস্তু। যুক্তির খাতিরে স্বীকার্য, অন্তত সেই রাষ্ট্রনীতির দিক হইতে যোজনা কমিশন জরুরি ঠেকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনকী সেই রাষ্ট্রনীতির খাতিরেও কি ইউজিসি-র অর্থ খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব? না। সত্যই যদি সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনায় রাষ্ট্রকে নাক গলাইতে হয়, যোজনা কমিশনে উচ্চ শিক্ষা-বিভাগ তৈরির মাধ্যমেই তো তাহা করা সম্ভব ছিল! আরও একটি অতিরিক্ত সংস্থা কেন?

আশার কথা, অবশেষে যোজনা কমিশন তুলিয়া দিবার সিদ্ধান্ত হইয়াছে। কিন্তু ইউজিসি’কেই বা বিদায় জানানো হইবে না কেন? এই ধরনের সংস্থা শুধু যে কাজের কাজ করে না তাহাই নয়, বিস্তর অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিকতার ফাঁসে কাজের গতি কমাইয়া দেয়, হর্তাকর্তাদের হস্তক্ষেপে অহেতুক নিয়ন্ত্রণ-পরায়ণতা তৈরি করে। বিশেষত উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে, শিক্ষা-বিষয়ে অনধিকারী সরকারি কর্তারা ক্ষমতাপ্রমত্ততায় অনেক সময়েই ভুলিয়া বসেন যে ছড়ি ঘুরাইবার উপযুক্ত জ্ঞানটুকুই তাঁহাদের নাই। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা লইয়া এই ছেলেখেলা উচিত কাজ কি না, সাতষট্টি বৎসরের প্রৌঢ় প্রজাতন্ত্র ভাবিয়া দেখুক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement