সম্পাদকীয় ২

পৃথক ফল

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া অসম পর্যন্ত পৌঁছাইয়া থমকিয়াই রহিয়াছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি পরাস্ত হইয়াছে। মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডে একটি করিয়া আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। বিজেপি তিনটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কিন্তু প্রতিটিতেই তাহার পরাজয় ঘটিয়াছে। তাহার মধ্যে মণিপুরের হিয়াংলাম এবং অরুণাচল প্রদেশের কানুবাড়ি আসনে বিজেপির পরাজয় কংগ্রেসের কাছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া অসম পর্যন্ত পৌঁছাইয়া থমকিয়াই রহিয়াছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি পরাস্ত হইয়াছে। মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডে একটি করিয়া আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। বিজেপি তিনটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কিন্তু প্রতিটিতেই তাহার পরাজয় ঘটিয়াছে। তাহার মধ্যে মণিপুরের হিয়াংলাম এবং অরুণাচল প্রদেশের কানুবাড়ি আসনে বিজেপির পরাজয় কংগ্রেসের কাছে। নাগাল্যান্ডের কোহিমায় উত্তর আঙ্গামি-২ আসনটিতে অবশ্য বিজেপি হারিয়াছে তাহারই জোটসঙ্গী এনপিএফ-এর কাছে। শেষোক্ত আসনটিতে তাহার প্রার্থী দিবার যুক্তিও সহজবোধ্য নয়। হয়তো নাগাল্যান্ডের রাজনীতিতে দাগ রাখিবার ব্যাকুলতাই তাহাকে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানিয়া আনিয়াছিল।

Advertisement

অসমে অনুপ্রবেশকারী সমস্যা এবং বাংলাদেশ হইতে বহুসংখ্যক বাংলাভাষী মুসলমানের গণ-অভিবাসন রাজ্যের জনবিন্যাসে যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাইয়াছে, বিজেপির রাজনীতি তাহাতে সহজেই প্রস্ফুটিত হইতে পারিয়াছে। তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্যা ভিন্ন গোত্রের। সেখানে জনজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবোধ অবশিষ্ট ভারতের তথাকথিত মূল ধারার রাজনীতি হইতে নির্বাসনের নিঃসঙ্গতা ও অপ্রাসঙ্গিকতা ভোগ করিয়া আসিয়াছে। কংগ্রেস এই সব রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবেই উপস্থিত থাকিয়াছে। জওহরলাল নেহরু হইতে ইন্দিরা গাঁধী, এমনকী রাজীব গাঁধী পর্যন্ত সকল শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বিভিন্ন সময়ে সফর করিয়াছেন, তাঁহাদের অনুগামীরা স্থানীয় রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুবাদে কেন্দ্রের সহিত দরকষাকষি করার অধিকতর সুযোগ পাইয়াছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে কংগ্রেস তাই কোনও অপরিচিত রাজনৈতিক সত্তা নয়। তুলনায় বিজেপির ভারতদর্শন প্রধানত আর্যাবর্তের হিন্দি বলয়েই কেন্দ্রীভূত ছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রধানত আঞ্চলিক দলগুলির কাঁধে চাপিয়াই বিজেপি সেখানে পা রাখার জমি খুঁজিয়াছে। এই রাজ্যগুলির পরিষদীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করিতে বিজেপির এখনও অনেক সময় লাগিবে।

কামরূপ-সমতটের পূর্বে শাখা বিস্তার করিতে বিজেপির প্রধান সীমাবদ্ধতা হইল জনচক্ষে হিন্দু প্রাধান্যের দল হিসাবে তাহার ভাবমূর্তি। উত্তর-পূর্বের জনজাতিগুলির নিজস্ব লোকাচার হিন্দু ধর্ম ও লোকাচার হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। উপরন্তু ঔপনিবেশিক যুগ হইতে খ্রিস্টান মিশনারিদের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানে পাদ্রি-বিশপদের সেবামূলক ও সদর্থক ভূমিকা এই অঞ্চলের বহুসংখ্যক মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী করিয়া তুলিয়াছে। এই জনসমাজে গ্রহণযোগ্য হইতে হইলে কেবল উন্নয়নের হাতিয়ারই ব্যবহার করিতে হইবে। কিন্তু এই অঞ্চল হইতে কেন্দ্রে নির্বাচিত মন্ত্রী রিজিজু যে ভাবে ‘বিজেপিকে ভোট না দিলে অনগ্রসর জনজাতীয় রাজ্যগুলির উন্নয়ন হইবে না’ বলিয়া হুঁশিয়ারি দিতেছেন, তাহাতে বিপরীত পরিণামের শঙ্কা আছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে রাজনীতিনির্বিশেষে কেন্দ্রের স্বার্থ আছে। এই প্রত্যন্ত প্রান্তিক এলাকাগুলির মানুষদের জাতীয় উন্নয়ন ও আর্থিক সংস্কারের বলয়ে টানিয়া আনার দায় কেন্দ্রেরই। কেন্দ্রীয় শাসক দলকে এলাকার মানুষ ভোট না দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার সে দায় এড়াইতে পারে না। ভোটের অঙ্কে এই অঞ্চলগুলির গুরুত্ব কম। কিন্তু ভোটের অঙ্ক রাজনীতির একমাত্র পরিচয় নহে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন