সম্পাদকীয় ২

পুবের যাত্রী

প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সহিত সুসম্পর্ক গড়ার দিশায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গন্তব্য এ বার মায়ানমার, যে-দেশের সহিত স্থলপথে ভারতের অভিন্ন সীমান্ত ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। বস্তুত, ভারতের সহিত দক্ষিণপূর্ব এশীয় রাষ্ট্রজোট ‘আসিয়ান’-এর আর কোনও সদস্যেরই স্থলসীমান্ত নাই, তাই পুবের দিকে যাত্রা করিতে হইলে মায়ানমারের সিংহদুয়ার অতিক্রম করিয়াই অগ্রসর হইতে হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সহিত সুসম্পর্ক গড়ার দিশায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গন্তব্য এ বার মায়ানমার, যে-দেশের সহিত স্থলপথে ভারতের অভিন্ন সীমান্ত ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। বস্তুত, ভারতের সহিত দক্ষিণপূর্ব এশীয় রাষ্ট্রজোট ‘আসিয়ান’-এর আর কোনও সদস্যেরই স্থলসীমান্ত নাই, তাই পুবের দিকে যাত্রা করিতে হইলে মায়ানমারের সিংহদুয়ার অতিক্রম করিয়াই অগ্রসর হইতে হইবে। আসিয়ান-এর ২৫ তম সম্মেলন এবং ভারত-আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকের দ্বাদশ সম্মেলন উপলক্ষেই মোদীর মায়ানমারে আসা। তবে এই বিশেষ দেশটির সহিত নিবিড় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ার তাগিদও বড় কম নয়। ভৌগোলিক ভাবে এত ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মায়ানমারের সহিত ভারতের বার্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন মাত্রই দুই শত কোটি ডলারের। অথচ মায়ানমার প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল এবং অরণ্য-সম্পদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার, যাহার দখল পাইতে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চিন সে দেশে বিনিয়োগের প্লাবন প্রবাহিত করিতেছে। নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে তাই মায়ানমার সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।

Advertisement

মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন মোদীকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাইয়া সে দেশের পরিকাঠামো ও শিল্পক্ষেত্রে ভারতীয় উদ্যোগপতিদের লগ্নি আহ্বান করিয়াছেন। অদূর ভবিষ্যতে কেবল মায়ানমারের সহিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করিতে আলাদা ভাবে সফরের আর্জিও জানাইয়াছেন। মোদী সোত্‌সাহে সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছেন। মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহও মায়ানমার সফরে আসিয়াছিলেন। তাঁহার সরকারের অবস্থান ছিল, দুই দেশের মধ্যে যে সকল প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হইয়াছে (যেমন ভারত হইতে তাইল্যান্ড অবধি ত্রিদেশীয় সড়ক সংযোগ), সেগুলি শেষ হইবার পরই নূতন প্রকল্প হাতে লওয়া হইবে। মোদী কিন্তু জানেন, এই পথ বিপজ্জনক, ভারত যদি শীঘ্র মায়ানমারকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও লগ্নির পাশে জড়াইয়া না ফেলে, তবে চিন তাহা করিবে। তিনি তাই আগামী বছরের শুরুর দিকেই এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সফরের আগ্রহ জ্ঞাপন করিয়াছেন। মায়ানমারের সহিত যোগাযোগব্যবস্থা, বাণিজ্যিক লেনদেন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় উন্নত করার উপর জোর দিতেছেন। দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করিতেও তিনি আগ্রহী। বৌদ্ধ ধর্ম দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র। ভারতের বৌদ্ধ তীর্থগুলিতে পর্যটনের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা ছাড়াও পুনরুজ্জীবিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে মায়ানমারের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার্থে আসাও উত্‌সাহব্যঞ্জক।

মায়ানমারের অগ্নিকন্যা, সে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অবিসংবাদী নেত্রী আঙ সান সু চি-র সহিত সাক্ষাত্‌ করিতেও মোদী ভোলেন নাই। তাঁহাকে ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ আখ্যা দিয়া ভারতে আমন্ত্রণও জানাইয়াছেন। সু চি-ও প্রত্যুত্তরে ভারতকে তাঁহার ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ আখ্যা দিয়া সময় হইলেই সেখানে পদার্পণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করিয়াছেন। সু চি দীর্ঘ কাল সামরিক জুন্টার হাতে স্বগৃহে অন্তরিন থাকিয়াছেন, এখনও প্রাক্তন জেনারেল-শাসিত মায়ানমারের নির্বাচনে তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার নাই। আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে থাইন সেইন-এর সরকার তাঁহার দলকে কিছুটা গণতান্ত্রিক অধিকার দিলেও এখনও মায়ানমার কোনও অবাধ গণতন্ত্র নয়। মোদী বিলক্ষণ তাহা জানেন। তথাপি সু চি-র সহিত সাক্ষাতে তিনি দ্বিধা করেন নাই। ভারত গণতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থাকে কতটা অগ্রাধিকার দেয়, সকল প্রতিবেশীর কাছেই তাহা স্পষ্ট হওয়া দরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement