সম্পাদকীয় ২

বিজেপি ও কাশ্মীর

জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের লগ্ন যত আসন্ন হইতেছে, ততই সেখানকার বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী রাজনৈতিক জোট গড়ার প্রস্তুতি লইতেছে। এ বারকার কাশ্মীর নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক, দেশের একমাত্র মুসলিম-প্রধান প্রদেশে কেন্দ্রীয় শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠনের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি। রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়ার ফলে কাশ্মীর উপত্যকার রাজনীতিতেও যে শূন্য স্থান তৈয়ার হইয়াছে, বিজেপি স্বভাবতই তাহা পূরণ করিতে ব্যগ্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের লগ্ন যত আসন্ন হইতেছে, ততই সেখানকার বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী রাজনৈতিক জোট গড়ার প্রস্তুতি লইতেছে। এ বারকার কাশ্মীর নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক, দেশের একমাত্র মুসলিম-প্রধান প্রদেশে কেন্দ্রীয় শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠনের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি। রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়ার ফলে কাশ্মীর উপত্যকার রাজনীতিতেও যে শূন্য স্থান তৈয়ার হইয়াছে, বিজেপি স্বভাবতই তাহা পূরণ করিতে ব্যগ্র। আর বিজেপি কেন্দ্রীয় শাসক দল হওয়ায় কাশ্মীরের দল ও সংগঠনগুলিও রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে তাহার সহিত জোটবদ্ধ হইতে উৎসুক। পিপল্স কনফারেন্স দলের নেতা সাজ্জাদ গনি লোনের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহিত সাক্ষাৎকারের পিছনে এই ঔৎসুক্যই সক্রিয়।

Advertisement

ইহা অস্বাভাবিকও নয়। মতাদর্শের রঙে রঞ্জিত হইয়া রাজনীতি করার দিন ক্রমশ গত হইতেছে। এখন যদি কোনও একটি মতাদর্শ ভোটপ্রার্থী রাজনীতিকদের তাড়িত করিতে থাকে, তবে তাহা উন্নয়নের মতাদর্শ। সেই উন্নয়ন কাহার হাত ধরিয়া হইবে, তাহা লইয়া আর বিশেষ কেহ মাথা ঘামায় না। কেননা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষরা যেমন ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়া ভোটব্যাংক হস্তগত করিতে সচেষ্ট, বিপরীতে হিন্দুত্ববাদীদের তরফে উন্নয়নের একমুখী কর্মসূচি রূপায়ণের আগ্রহও জনসাধারণের নজর এড়ায় নাই। কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দোসর ন্যাশনাল কনফারেন্স কংগ্রেসের মতোই জনচক্ষে দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়াছে। বিশেষত ক্ষমতাসীন এই দলের বন্যাবিধ্বস্ত উপত্যকার ত্রাণ ও পুনর্বাসনে হাত গুটাইয়া থাকার এবং কেন্দ্রীয় এনডিএ সরকারের সে-কাজে ঝাঁপাইয়া পড়িতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করার দৃষ্টান্ত সকলের সামনেই উপস্থিত। আবদুল্লা-বিরোধী পিডিপি-ও তাই বিজেপির সহিত গাঁটছড়া বাঁধিতে আগ্রহী। ইতিমধ্যে বিজেপি নেতাদের সহিত পিডিপি নেতৃত্বের কয়েক দফা আলোচনাও হইয়াছে। হুরিয়ত সম্মেলনের শরিক সাজ্জাদ গনি লোন জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরোধী। তাঁহার পিতা আবদুল গনি লোন জেহাদি জঙ্গিদের হাতেই নিহত হন। তিনি গত কিছু কাল যাবৎই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ লইতেছেন। তাঁহার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করার নিহিত তাগিদ বুঝিতে পারা কঠিন নয়।

কংগ্রেস ইহাকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহিত বিজেপির আপসের ‘প্রমাণ’ রূপে বর্ণনা করিয়াছে। কংগ্রেস অনুসৃত নীতিই কিন্তু উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈয়ার করিয়াছিল। কেবল সামরিক বাহিনীর উদ্যত সঙিন দিয়া কাশ্মীরি জাতিসত্তার আত্মশাসনের দাবির মোকাবিলাই সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও আজাদির আন্দোলন তৈরি করে। আজ যদি সেই আন্দোলনের এক কালের শরিকরা সামাজিক বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জাতীয় কর্মসূচির অঙ্গ হইয়া উঠিতে চায়, তবে কংগ্রেস তাহার মধ্যে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ অন্বেষণ করিতেছে কেন? ইহা কি নেহরু-গাঁধী পরিবারের প্রভাব-বলয় হইতে কাশ্মীরের প্রস্থানজনিত ক্ষোভের প্রকাশ? বিজেপি ইতিমধ্যেই জম্মু ও লাদাখে আপন প্রভাব কায়েম করিয়াছে। শ্রীনগর উপত্যকায় মুসলিম-প্রধান দল ও সংগঠনগুলির জোট যদি তাহাকে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি দিতে পারে, তবে সেই সুযোগ গ্রহণের চেষ্টায় রাজনৈতিক বিচক্ষণতাই আছে। চেষ্টা সফল হইলে তাহা কংগ্রেসের পক্ষে দুঃখের, কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের তাহাতে লাভ বই ক্ষতি নাই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement