সম্পাদকীয় ২

যুগান্তর

ইরানের সহিত কিউবা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিদেশ নীতির চিরাচরিত ছকটি ভাঙিয়া নূতন পথে পদক্ষেপ করিতে পুনরায় উদ্যোগী। ১৯৫৯ সাল হইতে সম্পর্কচ্ছেদ এবং তীব্র, বিষাক্ত ধারাবাহিক শত্রুতার পর ফ্লোরিডা হইতে নব্বই মাইল দূরে অবস্থিত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত লইয়াছেন ওবামা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

ইরানের সহিত কিউবা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিদেশ নীতির চিরাচরিত ছকটি ভাঙিয়া নূতন পথে পদক্ষেপ করিতে পুনরায় উদ্যোগী। ১৯৫৯ সাল হইতে সম্পর্কচ্ছেদ এবং তীব্র, বিষাক্ত ধারাবাহিক শত্রুতার পর ফ্লোরিডা হইতে নব্বই মাইল দূরে অবস্থিত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত লইয়াছেন ওবামা। পানামায় দুই আমেরিকা মহাদেশের রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ সম্মেলনে কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর সহিত তাঁহার করমর্দন তাই ঐতিহাসিক। শেষ যখন কিউবা-আমেরিকা সম্পর্ক সুনিবিড় ছিল, হোয়াইট হাউসে তখন ডুইট আইসেনহাওয়ার, আর হাভানায় ফুলহেনসিয়া বাতিস্তা। বাতিস্তার স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করিয়া বিদ্রোহী ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতা দখল করার পর হইতেই এই দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুরু হয় মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধ। অতঃপর ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে সোভিয়েত ছত্রছায়ায় চলিয়া যাওয়া কিউবাকে নানা ভাবে ধ্বংস করার, এমনকী প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোকে গুপ্তহত্যার অগণিত অপপ্রয়াসও আজ ইতিহাস। কিউবায় মোতায়েন সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রকে কেন্দ্র করিয়া দুই বৃহৎশক্তির রণহুঙ্কার প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনাইয়া তুলিয়াছিল। কাস্ত্রো-ওবামা করমর্দন তাই এক নূতন ইতিহাসের সূচনা।

Advertisement

প্রেসিডেন্ট ওবামা কেবল কূটনীতি পুনরুজ্জীবিত করেন নাই, কিউবাকে সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রের তালিকা হইতে বাহির করার সিদ্ধান্ত লইয়া সেই সম্পর্ককে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অনুকূল ও সহযোগিতার সোপানে পরিণত করিয়াছেন। কিউবায় লগ্নি করার যে তাগিদ মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রবল, তাহা নিশ্চয় দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করিতে সহায়ক হইয়াছে। বৃদ্ধ ফিদেলের স্বেচ্ছাবসর বা অপসারণ এবং তাঁহার স্থলে গত চার বছর ধরিয়া তাঁহারই ভ্রাতা রাউলের অপেক্ষাকৃত পশ্চিম-ঘেঁষা ও সংস্কারপন্থী আর্থিক নীতির অনুসরণও পর্বান্তরে সহায়ক হইয়াছে। ফ্লোরিডা প্রদেশের ভিতরে এবং বাহিরেও এই বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে মার্কিন জনমত সংগঠিত করার মতো রাজনীতিকরা রহিয়াছেন, যাঁহারা ইরান নীতির মতোই ওবামার কিউবা নীতির বিরুদ্ধাচরণ করিতে সেনেটকে প্রভাবিত করিতে উদ্‌গ্রীব। তাঁহাদের মধ্যে কিউবার কাস্ত্রো-বিরোধী উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেলরাও আছেন, যাঁহারা এখনও হাভানায় তাঁহাদের হৃত সাম্রাজ্যের পুনরুদ্ধারের দিবাস্বপ্ন দেখেন। ফ্লোরিডার ‘গণতন্ত্রী’দের প্রভাবিত করার ক্ষমতা তাঁহাদের এখনও সম্পূর্ণ নিঃশেষিত হয় নাই।

কিন্তু তাঁহারা ইতিহাসের লিখন পড়িতে পারিতেছেন না। ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ অবসিত হইয়াছে বেশ কিছু কাল। সেই যুগের বিকৃতি ও অস্বাভাবিকতাগুলিকে আঁকড়াইয়া থাকার প্রচেষ্টা অর্থহীন ও হাস্যকর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যেমন তাহার বৃহৎশক্তিসুলভ দম্ভ ও যথেচ্ছাচার, অন্য দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার অভিপ্রায়, প্রক্সি লড়াইয়ের ঐতিহ্য পরিহার করার সময় আসিয়াছে, মার্কিন-বিরোধী সাবেক সোভিয়েতপন্থী দেশগুলিরও তেমনই ‘সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা’র দন কিহোতে-সুলভ আস্ফালন ছাড়িয়া নিজেদের উন্নয়ন ও বিকাশের স্বার্থেই মার্কিন তথা পশ্চিমী প্রযুক্তি ও পুঁজির বিনিয়োগ আকর্ষণ করার বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। বাধ্যতা বা দায় এ ক্ষেত্রে উভয়ত, কেহ কাহাকেও দয়াদাক্ষিণ্য করিয়া কিছু করিতেছে না। অনেক আগেই মার্কিন বিদেশনীতিতে অগ্রাধিকারের এই পরিবর্তন সূচিত হওয়া প্রয়োজন ছিল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন