সম্পাদকীয় ২

স্বাগত জবরদখল

ন রকের পথ শুভেচ্ছা দিয়া বাঁধানো। প্রবচনটি বারংবার সত্য প্রমাণিত হয়। ভাল করিবার ইচ্ছা ক্রমাগত বিপদ ডাকিয়া আনে, সমস্যা বাড়াইয়া তোলে। কলিকাতা পুরসভা গরিবের ভাল করিতে চাহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share:

ন রকের পথ শুভেচ্ছা দিয়া বাঁধানো। প্রবচনটি বারংবার সত্য প্রমাণিত হয়। ভাল করিবার ইচ্ছা ক্রমাগত বিপদ ডাকিয়া আনে, সমস্যা বাড়াইয়া তোলে। কলিকাতা পুরসভা গরিবের ভাল করিতে চাহে। যাঁহারা ফাঁকা জমি দখল করিয়া ঝুপড়ি বাঁধিয়া বসতি গড়িয়াছেন, তাঁহাদের পানীয় জল, আলো, নিকাশি ও সাফাই পরিষেবা সরবরাহ করিতে চাহে। সেই শুভেচ্ছা পূরণের পাকা বন্দোবস্ত করিতে উদ্যোগী হইয়াছে পুরসভা। তাহারা এই বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাইতে চলিয়াছে নবান্নে, অনুমতি পাইলেই ইচ্ছাপূরণের কাজ শুরু হইবে। নবান্নের শীর্ষ হইতে সবুজ সংকেত না লইয়া কলিকাতার মহানাগরিক এমন একটি প্রস্তাব পাঠাইবেন, তাহা অবিশ্বাস্য। সুতরাং, অনুমান করা চলে, নবান্ন তাঁহার শুভেচ্ছায় বলিবে ‘তথাস্তু’। শহরের যেখানে যত জবরদখল ঝুপড়ি আছে, সর্বত্র জল আলো আদি পুর পরিষেবা সরবরাহের উৎসব শুরু হইবে। পুরসভা ও সরকারের নামে ধন্য ধন্য পড়িবে। জনপ্রিয়তার বাজারে দরিদ্রনারায়ণ সেবার কোনও মার নাই।

Advertisement

রাজনীতির কারবারিরা বিশুদ্ধ জনদরদের প্রেরণায় কোনও কাজ করেন, এমন কথা শুনিলে বালকেও হাসিবে। সমস্ত সরকারই ভোটসন্ধানী। তবে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকরা এ বিষয়ে কোনও আড়ালের ধার ধারেন না, পাঁচ রাস্তার মোড়ে দাঁড়াইয়া দুই হাতে প্রসাদ বিতরণ করিয়া ভোটের ঝুলি ভরিয়া রাখিতে চাহেন। সে জন্য নীতি বা আইনের কিছুমাত্র তোয়াক্কা করেন না। করিলে, বেআইনি দখলদারদের পুর-সেবা দিতে চাহিতেন না। বেআইনি ঝুপড়ির বাসিন্দাদের এই পরিষেবা দেওয়া দুই দিক হইতে অন্যায়। এক, এতদ্দ্বারা তাঁহাদের জবরদখলকে এক ধরনের মান্যতা দেওয়া হয়— পরোক্ষে বলা হয়, পুরসভা পরিষেবা দেয়, সুতরাং এই বসতিগুলির অনুমোদন আছে। দুই, এই অন্যায় প্রশ্রয় ও পরিচর্যার আকর্ষণে আরও অনেক মানুষকে ফাঁকা জায়গা দখল করিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। কলিকাতায় জবরদখলের দাপট বহু কালের, ক্রমশ তাহা বাড়িতেছে, ক্রমশ গোটা শহর নরককুণ্ডে পরিণত হইতেছে। পুরসভা সেই নরককে আরও প্রসারিত করিতে চাহিলে পুরজনের দুর্দশা বাড়িবে।

দরিদ্রের পাশে দাঁড়াইবার নামে এই অনাচারকে লালন করিবার নীতি শেষ বিচারে দরিদ্রেরও মঙ্গল করিতে পারে না। যে যেখানে খুশি জমি দখল করিয়া আস্তানা বানাইবে, এমন ব্যবস্থা একটি শহরের সুস্থ স্বাভাবিক উন্নয়নের সম্পূর্ণ প্রতিকূল। এবং উন্নয়নের ক্ষতি করিয়া দরিদ্রের যথার্থ মঙ্গল সাধনের কোনও প্রশ্নই উঠিতে পারে না, তাহা দারিদ্র ও অনুন্নয়নকে জিয়াইয়া রাখিবার একটি পদ্ধতি হইয়া দাঁড়ায়। এই দেশে, বিশেষত এই রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরিয়া দারিদ্রকে দীর্ঘায়িত করিবার আয়োজনই জারি রহিয়াছে। জনমনোরঞ্জনের অদূরদর্শী এবং সংকীর্ণ রাজনীতি এই প্রক্রিয়াকে উত্তরোত্তর পুষ্টি জোগাইয়াছে। দরিদ্রের নামে রাজনীতির সওদাগররা যে কত রকমের অন্যায় চালাইয়া আসিতেছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। শহর জুড়িয়া বেআইনি বসতির প্রসার আরও ব্যাপক, আরও গভীর হইতে চলিয়াছে। মহানগরের নাগরিকরা সেই মহাপ্রস্থানের পথে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে নরক হইতে উন্নততর নরকের দিকে অগ্রসর হইবেন, ইহাই তাঁহাদের গণতন্ত্রসম্মত নিয়তি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন