সম্পাদকীয় ২

সুস্থতার দিশা

প্রায় সব দেশেই রাজকোষের দশা ন’হাতি কাপড়ের ন্যায়। নেহাত জরুরি জায়গাটুকু পার করিয়া তাহা যখন জবাব দেয়, চাহিদা তখনও বাকি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

প্রায় সব দেশেই রাজকোষের দশা ন’হাতি কাপড়ের ন্যায়। নেহাত জরুরি জায়গাটুকু পার করিয়া তাহা যখন জবাব দেয়, চাহিদা তখনও বাকি। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় সম্পদের অপ্রতুলতার প্রভাব সর্বাধিক। চিকিৎসাশাস্ত্র যত উন্নত হইতেছে, চিকিৎসার খরচ ততই বাড়িতেছে। সম্পদশালী দেশগুলিও নাজেহাল, দরিদ্র দেশের তো কথাই নাই। কী করিয়া কম খরচেও উন্নত চিকিৎসা সম্ভব, সর্বত্র তাহার সন্ধান চলিতেছে। সম্প্রতি ভারতে মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্তদের লইয়া একটি গবেষণা তাহার একটি দিশা দেখাইয়াছে। দুই বৎসরের এই গবেষণায় প্রমাণিত, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার পর স্ট্রোক-আক্রান্তদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বাড়িতেও সমান কার্যকর হইতে পারে। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পরিবারের সদস্যরা যদি ব্যায়াম ও অন্যান্য পদ্ধতি যথাযথ ভাবে পালন করেন, তাহা হইলে ‘থেরাপি’ করাইতে বার বার হাসপাতালে যাইবার সময় ও খরচ বাঁচে। গবেষণায় প্রকাশ, যাঁহারা হাসপাতালে থেরাপি করাইয়াছেন ও যাঁহারা এই বিষয়ে চিকিৎসকদের নির্দেশ বাড়িতে পালন করিয়াছেন, দুই শ্রেণির রোগীরই উন্নতির হার এক। তবে চিকিৎসকদের সহিত সম্পর্ক না রাখিয়া কেবল অপ্রশিক্ষিত আত্মীয়দের সহায়তায় রোগীর তেমন উন্নতি হয় নাই।

Advertisement

এই গবেষণাটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই ‘মডেল’ পুনর্বাসনের কাজে হাসপাতাল বা চিকিৎসককে কেন্দ্রে রাখে নাই। রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাইবার প্রধান কাজ করিবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি। তাহাতে হাসপাতালের উপর চাপ কমিবে, চিকিৎসকের সময়ের ব্যবহার পরিমিত হইবে, পরিবারের ব্যয়ভারও কমিবে। যে ধরনের অসুস্থতার প্রকোপ ক্রমশ বাড়িতেছে, সেই স্ট্রোক, ডায়াবিটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, অস্থিরোগ প্রভৃতি অসুখের চিকিৎসার অন্যতম উদ্দেশ্য রোগীকে সচল, কর্মক্ষম রাখা। চিকিৎসার সহিত পুনর্বাসনও তাই বড় হইয়া উঠিতেছে। সহায়কদের ভূমিকাও তাই সমান জরুরি। এমনকী সমাজকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োজনও যথেষ্ট। অর্থাৎ রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে প্রশিক্ষণের নানা ক্ষেত্রে এবং পেশাদারিত্বের নানা ধাপে নানাবিধ ব্যক্তি থাকিবেন, ইহাই কাম্য। সরকারি নীতিতেও এই সত্যকে গ্রহণ করা প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ ডাক্তার এবং শ’য়ে শ’য়ে অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের অবাস্তব লক্ষ্য না রাখিয়া, সহায়ক স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হউক। তাহা সকল দিক থেকেই লাভজনক। রোগী ও তাহার পরিবার সহজে সহায়তা পাইবে, চিকিৎসার খরচ কমিবে, কর্মক্ষেত্রের প্রসার হইবে এবং সরকারি হাসপাতালের উপর চাপ কমিবে।

চিকিৎসার ব্যয় কমানোর অন্য উপায় অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা কমানো। সম্প্রতি ব্রিটেনের অ্যাকাডেমি অব মেডিক্যাল রয়্যাল কলেজেস চল্লিশটি পরীক্ষা ও প্রক্রিয়ার তালিকা প্রকাশ করিয়াছে। তাহাদের পরামর্শ, বিশেষ কারণ ব্যতীত ডাক্তাররা যেন এগুলি না করেন। সকল কোমর ব্যথাতেই এক্স রে-র প্রয়োজন নাই, সকল হাড় ভাঙায় প্লাস্টার করিতে হয় না। খবরে প্রকাশ, ইহার পর দেড়শোটি পরীক্ষা-প্রক্রিয়ার তালিকা বাহির হইবে। তবে অযৌক্তিক খরচ কমাইতে ডাক্তারের সহিত রোগীরও সচেতনতা প্রয়োজন। ‘না করিলে কী হইবে,’ এই প্রশ্নটি করিতে উৎসাহ দিয়াছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক-নির্ভরতা, হাসপাতাল-নির্ভরতা হইতে বাহির হইয়া পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুস্থ জীবনের দিশা খুঁজিতে হইবে চিকিৎসক ও রোগী, উভয়কেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement