সম্পাদক সমীপেষু

ক্ষত যত ক্ষতি যত

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share:

ক্ষত যত ক্ষতি যত

Advertisement

গত বর্ষায় জিটি রোডের যা হাল হয়েছিল তা আর কহতব্য নয়। এখানে ওখানে বড় বড় গর্ত। বাসে যাচ্ছি মনে হচ্ছে নৌকায় চড়েছি। বাস চলছিল হেলেদুলে। পরে কয়েক বার তাপ্পি লাগিয়ে মোটামুুটি চলার মতো হয়েছে। কিন্তু এখনও রাস্তার বেশির ভাগ অংশই এবড়োখেবড়ো। সাইকেল স্কুটার চালাতে মনে হচ্ছে ঢেউখেলানো রাস্তায় চলেছি। জিটি রোডে এখন বড় বড় লরি চলে। দশ চাকা, চোদ্দো চাকার লরি, বিরাট বিরাট কনটেনারও। মালবোঝাই অবস্থায় যখন চলে, তখন এক রকম। খালি অবস্থায় যখন তিন/চারটি ওই রকম লরি সারি সারি চলে, বিশেষত গভীর রাতে, তখন ঝমঝম ঝমঝম করে দারুণ আওয়াজ হয়। মনে হয়, ব্রিজের ওপর দিয়ে মালগাড়ি চলেছে। শব্দদূষণ হয় বিকট ভাবে। দিন নেই রাত নেই যখন বড় বড় গাড়িগুলো যায়, সারা বাড়ি থরথর করে কাঁপতে থাকে। মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। খাটে শুয়ে আছি, খাট কাঁপছে। দু-একটা বাড়িতে ফাটলও ধরেছে। এ রকম অবস্থা আমাদের আর কত দিন সহ্য করতে হবে?

এক সময়ে জিটি রোডে গাড়ির চাপ কমাতে দিল্লি রোড তৈরি হয়েছিল। পরে হল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। গাড়ির চাপ কমেওছিল বেশ কিছু কাল। পরে আবার অবস্থা তথৈবচ। বরং আরও কয়েক গুণ বেশি। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে বাসে রানিহাটি থেকে আমতা ঘুরে এলাম। রাস্তা সরু হলেও একেবারে মসৃণ। ঝড়ের বেগে বাস চলছে অথচ কোনও অসুবিধাই হচ্ছে না। আমাদের জিটি রোডের সংস্কার কি আর হবে না? এখনও মাঝে মাঝেই এখানে ওখানে তাপ্পি লাগানো চলছে। ফলে, ক্রমশ রাস্তার দেহে ক্ষতও বাড়ছে।

Advertisement

তপনকুমার মল্লিক। রিষড়া, হুগলি

‘শুধুমাত্র ধর্ষণ’?

শাশ্বতী ঘোষের (‘ধর্ষণের শাস্তি মানেই ফাঁসি কেন’, ৮-৪) উদ্দেশে কয়েকটি জিজ্ঞাসা। দিল্লির ‘নির্ভয়া’ কাণ্ডের পর ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমত এক মহতী আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। এই আন্দোলনের গভীরতা ও ব্যাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করে একাধিক বার এই ধরনের ঘটনা ঘটালে ‘মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে’ বলে ধারা ৩৭৬-ই যুক্ত হয়। আইনি প্রেক্ষাপটে এটি যথার্থ, অগ্রগতিমূলক, সরলরৈখিক চিন্তার ফসল। এই আইনি বিধানের প্রেক্ষিতে প্রখ্যাত সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমের বক্তব্য “মৃত্যুদণ্ড আবশ্যক। কারণ, মেয়েটি তার ‘কৌমার্য’ আর ‘সম্মান’ হারিয়ে আর কখনও তার পুরনো সত্ত্বাটিকে ফিরে পাবে না”। আইনের এই নতুন ধারা ও আইনজীবীর আইনি ভাষা সম্পর্কে লেখিকার সমালোচনা কি যথার্থ?

প্রথমত, একে লেখিকা শরীরের শুদ্ধতা ও সম্মানের প্রশ্নে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের পুনঃপ্রকাশ হিসাবে দেখছেন। এটি তো সামাজিক সমস্যা। ধর্ষণের ফলে মেয়েদের শারীরিক ‘অশুদ্ধতা’ ও পরিবারের ‘সম্মান হানি’র সমস্যা কি আইনের প্রাঙ্গণে সমাধান সম্ভব? লেখিকা আইনের এই পদক্ষেপকে ‘আদালতের সিলমোহর’ হিসাবে বর্ণনা করছেন। কথাটা কি যুক্তিযুক্ত?

উজ্জ্বল নিকমের যুক্তি, ‘কৌমার্য’ ও ‘সম্মান’ ধর্ষণকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডকে প্রমাণ করার হাতিয়ার। এক জন বিবাহিতা মহিলা ধর্ষিত হলে উজ্জল নিশ্চয়ই কৌমার্যের যুক্তি উত্থাপন করবেন না। আর ধর্ষিতা মেয়েকে নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া, বন্ধুবান্ধব সকলে মিলে তাকে আগলে রাখা সামাজিক দায়। সে দায় আমার, আপনার, লেখিকার। তা-ই নয় কী? এর জন্য ৩৭৬-ই অথবা উজ্জ্বল নিকমের টুইটার দায়ী হবে কেন?

লেখিকার বক্তব্য ‘শুধুমাত্র ধর্ষণের জন্য প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াকেই শ্লথ করে দেবে” ঠিক কি? যে কোনও বিচারেই উচ্চ থেকে উচ্চতর আদালতে আপিলের সম্ভাবনা থাকছে। আর, ‘শুধুমাত্র ধর্ষণ’ বলে লেখিকা ধর্ষণের অপরাধের গুরুত্ব লঘু করে ফেলছেন না কি? হয়তো নিজের অজান্তেই?

তবে ‘যৌনহিংসার সমস্ত ঘটনায় দ্রুত, যথাযথ তদন্ত ও বিচার হোক, কেন্দ্রীয় সরকার যে নিয়মবিধি প্রস্তাব করেছে সেটি প্রচারিত হোক, আর সর্বস্তরে তা মান্য হোক’ লেখিকার এই মত যথার্থ। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অথচ তিরিশ বছর বন্দি লেখিকার সঙ্গে সহমত হয়ে বলছি এ হল বিচারের প্রহসন।

মধুসূদন সাহা। কলকাতা-৩২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন