সম্পাদক সমীপেষু

রাজারহাট-নিউটাউনকে নাকি স্মার্ট সিটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই উপলক্ষে নানা সেমিনার হচ্ছে, জনমত নেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে গেলে কী কী সুযোগসুবিধা থাকা দরকার, সে সব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সবই ভাল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

এ জীবনে বাড়ি পাব বলে ভরসা নেই

Advertisement

রাজারহাট-নিউটাউনকে নাকি স্মার্ট সিটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই উপলক্ষে নানা সেমিনার হচ্ছে, জনমত নেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে গেলে কী কী সুযোগসুবিধা থাকা দরকার, সে সব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সবই ভাল। তবে যেটা একেবারে প্রাথমিক শর্ত হওয়া উচিত, অর্থাৎ স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে গেলে প্রথমে যে স্মার্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গড়ে তোলার দরকার পড়ে, সে ব্যাপারে কেউ কোনও আলোচনার মধ্যে যাচ্ছে না।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এক বার দেখে নেওয়া যেতে পারে আমাদের সাধের রাজারহাটের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঠিক কতটা স্মার্ট। ১৯৯৯ সালে সেল-এর ৩২ জন অফিসার মিলে কো-অপারেটিভ তৈরি করে জমির জন্য হিডকো-র কাছে দরখাস্ত জমা দিই, ২০০০ সালে জমির অ্যালটমেন্ট লেটার যাতে পাই। এর পর খুব দ্রুতই মোট চারটি ইনস্টলমেন্টে জমির ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ দাম (২০০০ সালে লক্ষাধিক টাকা কাঠা দরে) নিয়ে নেওয়া হয়। এর পর শুরু হয় শবরীর প্রতীক্ষা।

Advertisement

বছরের পর বছর অপেক্ষা করে করে জমির কথা যখন প্রায় ভুলতে বসেছি, তখন দীর্ঘ ন’বছর বাদে ২০০৯ সালে হিডকো-র কাছ থেকে জমি হাতে পাই। কোনও রকম দেরি না করে বাড়ি তৈরি করার কাজে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং তার পরেই বুঝতে পারি সেই প্রবাদটার মর্মার্থ: ‘কারও সর্বনাশ করতে চাইলে তাকে একটা বাড়ি তৈরি করার উপদেশ দাও।’

বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি, কোথাও কোথাও তার জন্য বিশেষ দক্ষিণা দেওয়া (নিতান্ত বাধ্য হয়ে), স্থানীয় যুবকদের সাহায্যার্থে তাদের কাছ থেকে ‘বিশেষ দরে’ বাড়ি তৈরির জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য হওয়া, ভুল হয়ে গেলে তার জন্য তাদের কাছে বিশেষ জরিমানা দেওয়া ইত্যাদি হাজার রকমের ঝামেলা সামলে উঠে সবশেষে যখন এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাড়িটা কোনও রকমে দাঁড় করানো গেল, তখন ভাবলাম যুদ্ধ জয় করে উঠলাম। সে আনন্দ অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হল না, যখন শুনলাম কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পেতে গেলে লিফট ও ফায়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে ছাড়পত্র আনতে হবে। কিছু দিন দৌড়াদৌড়ির পর লিফট-এর ছাড়পত্র পাওয়া গেল। এ বার ফায়ার-এর পালা। পরিদর্শক মহাশয় এসে অনেক রকম সুপারিশ করে গেলেন। তিন মাস লেগে গেল তাঁর কথা মতো সব ব্যবস্থা করতে। অবশেষে সেপ্টেম্বরে ফাইনাল ইন্সপেকশন করানো গেল। পরিদর্শক বলে গেলেন, ‘‘আমি আমার সুপারিশ জমা দিচ্ছি, এ বার বিশেষ কমিটি সেটা পাশ করবে।’’

সেই বিশেষ কমিটি সেপ্টেম্বর মাসের শেষে বোধহয় শেষ বারের মতো বসেছিল। সেই থেকে আমরাও বসেই আছি। এই আশায় যে, কোনও এক দিন সেই কমিটি নিশ্চয়ই আবার বসবে। ডিসেম্বর পার হল। শুনলাম, কমিটির এখনও বসার সময় হয়নি।

২০০০ সালে জমি বরাদ্দ হওয়ার পর ২০১৬ এসে পড়ল। ইতিমধ্যে আমাদের ৩২ জনের মধ্যে দু’জন সদস্য বাড়ির মায়া চিরতরে ত্যাগ করেছেন। তাঁদের ছেলেদের অবশ্য বয়স কম। তাঁরা আশা রাখেন যে, কোনও-না-কোনও এক দিন এই স্মার্ট সিটি-তে তাঁরা তাঁদের নতুন বাড়িতে (যদি তত দিন নতুন থাকে) পা দেবেন। আরও প্রায় পনেরো জন সদস্য এই ১৬ বছরের মধ্যে রিটায়ার করেছেন এবং নিজের বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও জীবনের শেষ সঞ্চয় থেকে মাসে মাসে মোটা টাকা খরচ করে ভাড়াবাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কমিটি কবে র‌্যাপিড ফায়ার করবে, কবে হিডকো কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেবে, তার পরে কবে ইলেকট্রিক মিটার পাব, কিছুই জানি না। শুধু একটা কথাই জানি, আমাদের রাজারহাট এখন স্মার্ট সিটি। সৌজন্য হিডকো।

ইন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। দুর্গাপুর পার্ক হাউসিং কো-অপ সোসাইটি লিমিটেড

তন্ত্র-রহস্য

চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় (‘কালীমূর্তি, তন্ত্র এবং স্বপ্ন’, সম্পাদক সমীপেষু, ১৭-১২) জানতে চেয়েছেন, শায়িত শিবের বুকে পা দিয়ে জিভ বার করা কালীমূর্তির বর্ণনা কোন তন্ত্রে আছে।

আমার পূর্ববর্তী চিঠিতে (‘কালী তুমি কোথা হইতে’, ৩০-১১) কালীতন্ত্রের ‘করালবদনাং ঘোরাং...’ ইত্যাদি নয়টি শ্লোকের উল্লেখ করেছি। ওইগুলি হচ্ছে কালীতন্ত্রের প্রথম পটলের ২৭ থেকে ৩৫ নম্বর শ্লোক। এদের মধ্যে ৩৪ নম্বর শ্লোকে ‘শবরূপ-মহাদেব-হৃদয়োপরি সংস্থিতাম্’ কথাটি রয়েছে। এর বাংলা মানে হল: শবরূপ শিবের হৃদয়ের উপর কালী অধিষ্ঠিতা।

স্বতন্ত্র-তন্ত্রে ‘মহাকাল-হৃদম্ভোজ-স্থিতাং’ কথাটি রয়েছে। এর বাংলা অর্থ, মহাকাল শিবের হৃৎপদ্মের উপর কালী আসীনা।

এই দুটি তন্ত্রগ্রন্থ থেকে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ শিবের বুকের উপর কালীর অবস্থানের চিত্র পেয়ে গেলেন এবং সেই বর্ণনা গ্রহণ করলেন। উক্ত তন্ত্র দুটিতে বিপরীত রতির কথাও বলা আছে। কালীমূর্তি গঠনের ব্যাপারে কৃষ্ণানন্দ সেই অংশটি বর্জন করলেন জনরুচির স্বার্থে।

কালীতন্ত্রের দশম পটলে ৩৩ সংখ্যক শ্লোকে কালীকে ‘আলীঢ়পাদা’ বলা আছে। এই শব্দটির বাংলা অর্থ হল ডান পা বাড়িয়ে দাঁড়ানো। কোনও কোনও তন্ত্রগ্রন্থে কালীকে প্রত্যালীঢ়পাদা অর্থাৎ বাঁ পা বাড়িয়ে দণ্ডায়মানাও বলা আছে।

এ বারে কালীর জিভ বার করার প্রসঙ্গ। কালীতন্ত্রের ষষ্ঠ পটলে ১৫ সংখ্যক শ্লোকে ও ২৬ সংখ্যক শ্লোকে কালীকে ‘ললজিহ্বাং’ বলা আছে। যার অর্থ নৃত্যরত-জিহ্বাযুক্তা। এবং দশম পটলে ৩৩ সংখ্যক শ্লোকে দীর্ঘ জিহ্বা বলা আছে। অর্থাৎ কালীর জিভ বার করা মূর্তির বর্ণনা বিদ্যমান।

শুধুমাত্র কালীতন্ত্র গ্রন্থের নানা শ্লোক থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কালী দেবী জিভ বার করে শবের মতো শায়িত মহাদেবের বুকে পা রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। এ ছাড়া মহানির্বাণ তন্ত্রে ও অন্যান্য তন্ত্রে কালীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যায়। নগ্না, নৃমুণ্ডমালিনী প্রভৃতি। উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ এই সব বর্ণনা থেকে কিছু গ্রহণ করে কিছু বর্জন করে কালীমূর্তি সৃষ্টি করেন। তাই আমি লিখেছি যে কৃষ্ণানন্দ বিশেষ কোনও মহিলার মুখচ্ছবি অবলম্বনে কালীমূর্তি গড়েছেন, এটি উর্বর কল্পনা।

তন্ত্রশাস্ত্র বিশাল ও সুগভীর। সব তন্ত্র-গ্রন্থ আজকাল পাওয়াও য়ায় না। যদি আমরা প্রাপ্তব্য তন্ত্র-গ্রন্থগুলি সংস্কৃতে অধ্যয়ন করে তার প্রতিটি শব্দের বাংলা মানে বুঝতে পারি, তা হলে তন্ত্র ঘিরে যে সব রহস্যময়তা ও কল্পনা-কথা প্রচলিত আছে, তাদের অবসান ঘটবে।

শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য। কলকাতা-৩৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন