সম্পাদক সমীপেষু

রবীন্দ্রনাথের সমবায়ের ধারণা ভুল নয়

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

রবীন্দ্রনাথের সমবায়ের ধারণা ভুল নয়

Advertisement

স্বাতী ভট্টাচার্য (‘সমবায় ও রাজনীতি: দুটি ব্যাঙ্কের গল্প’, ১০-৭) রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন ও কয়েকটি তথ্য দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের সমবায় কর্মসূচিতে ‘কাণ্ডজ্ঞানের অভাব’ ছিল এবং এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ ‘নোবেল প্রাইজের টাকা খুইয়ে খেসারত দিয়েছিলেন’। এটা ঠিক নয়।

রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর পারিবারিক জমিদারিতে ও শ্রীনিকেতনে সমবায় স্থাপন করে বাংলার চাষিদের ঋণদান সমিতি সহ তাঁদের নানা রকম সহায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হন, তখন রাষ্ট্র বা সমাজ কেউই এগিয়ে আসেনি লেখিকার এ কথা ঠিক। এই সমবায় সমিতির বেশির ভাগ ছিল ঋণদান সমিতি। এখনও তাই। তবে রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন উত্‌পাদকদের সমবায় যাতে অর্থনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়। শ্রীনিকেতনের আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সমাজের একেবারে নীচের তলায় কৃষিমজুরদের জন্য ধর্মগোলা ও লেবার ব্যাঙ্ক স্থাপন।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথের সমবায় চিন্তা ও তার প্রয়োগে কোনও কাণ্ডজ্ঞানের অভাব যে একেবারেই ছিল না, তা তাঁর পল্লি উন্নয়নের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। লেখিকা নিজেই যে উদাহরণ পেশ করেছেন তার থেকেও এই সিদ্ধান্তে আসা কষ্টকর বলে মনে হয় না। পতিসর ব্যাঙ্কে টাকা রাখা কোনও কাণ্ডজ্ঞান অভাবের জন্য ছিল না। বরং তা তাঁর বিষয়বুদ্ধিই নির্দেশ করে। এই টাকা থেকে গ্রামের চাষিদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং এর সুদের টাকা থেকে শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয় ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের কিয়দংশ পাওয়া যেত। নতুন যে তথ্য এখন পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে নোবেল প্রাইজের সব টাকাই পতিসর কৃষিব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখা হয়নি। এই ব্যাঙ্ক তাঁর দ্বারা স্থাপিত সেই সময়ের আর পাঁচটা জমিদারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাঙ্কের মতো ছিল, সমবায় ব্যাঙ্ক ছিল না। গচ্ছিত টাকা খোয়া যায় রবীন্দ্রনাথের কাণ্ডজ্ঞানের অভাবের জন্য নয়। ১৯৩৫ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার বাংলার চাষিদের মহাজনী ঋণের থেকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে ‘বেঙ্গল এগ্রিকালচার ডেটরস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে, তার ফলে পতিসরে ব্যাঙ্ক থেকে যাঁরা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তা মকুব হয়ে যায়।

আর একটি কথা। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে যখন সমবায়ের প্রবর্তন শুরু হয় সেই থেকে এখন পর্যন্ত সমবায়ের প্রসারে রাষ্ট্রের ভূমিকা বরাবর ‘খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না’ পর্যায়েই রয়ে গেছে। ফলে সমবায়ের এই দুরবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আমাদের সমাজে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষের দ্বারা সমবায়ের নিরন্তর অপব্যবহার। দুঃখের বিষয়, রাষ্ট্র এদেরই সহায় হয়ে থেকেছে। এর বিরুদ্ধে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সমাজকে উদ্যোগী হতে আহ্বান করেছিলেন। চেয়েছিলেন, সমবায়ী সমাজ স্থাপন করতে। সেই রুখে দাঁড়াবার সাহস আজ সমাজে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

দীক্ষিত সিংহ। শান্তিনিকেতন

¶ ২ ¶

স্বাতী ভট্টাচার্য জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে বীরভূম জেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া সমবায় ব্যাঙ্কের সুন্দর তুলনা করে জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষেত্রে পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে এমনটি হচ্ছে না কেন? এর জন্য দায়ী কি সমবায় ব্যাঙ্কনীতি না কি রাজনীতি?

১৫ জুন থেকে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে তালা পড়ে গেছে। চাষের সময় চাষি নতুন ঋণ পাচ্ছে না, নতুন খাতা খোলা হচ্ছে না, আমানতকারী তাঁর জমা টাকাও তুলতে পারছেন না। আড়াই লক্ষ মানুষের মাথায় হাত। ৩৩৩টি কৃষি সমবায় দিশাহীন। অথচ প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন এই সমবায় ব্যাঙ্কেই খাতা খুলেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কেন এমন হল? শোনা যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ হয়ে গেছে ৬২ কোটি। আর সেই টাকাটা মাত্র কয়েকটি অ্যাকাউন্টেই উঠে গেছে। সে-ও আবার বাম নেতাদের, মূলত ফরওয়ার্ড ব্লকের এক প্রভাবশালীর অঙ্গুলি হেলনেরই ফল। ২০১২ সালে এই ব্যাঙ্ক তৃণমূলের হাতে আসে। বর্তমান সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী এবং নুরুল ইসলাম দু’বার এই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হন এবং নিজেদের উদ্যোগেই ২০ কোটি টাকা ‘খেলাপি ঋণ’ আদায় করেন। বাকি ৪২ কোটি অনাদায়ী ঋণের এক চতুর্র্থাংশই নিয়েছেন এক কনট্রাক্টর এবং তাঁর ছেলে। অন্যগুলি ব্যাঙ্কেরই আধিকারিকদের যোগসাজশে কয়েক জন নিয়েছেন এবং যথারীতি শোধ দিতে গড়িমসি করছেন। জানা যায়, প্রত্যেকেরই সেই ঋণ পরিশোধের যথেষ্ট সামর্থ আছে এবং একটু চাপ দিলেই তাঁরাও সে সব ঋণ শোধ করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে ‘আইন আইনের পথে চলবে’ বলা নয়, আইনকে একটু বাইরে বেরিয়ে এসে জলপাইগুড়ি মডেলকে মান্যতা দিয়ে সেই সব খেলাপি ঋণ গ্রহীতার নাম ঠিকানা ছবি দিয়ে বড় বড় ফ্লেক্স-লিফলেট ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। আবার যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া ব্যাঙ্কের যে সব আধিকারিক ঋণ দিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা করতে হবে। তাঁদের উত্‌কোচ নেওয়া প্রমাণিত হলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। ষড়যন্ত্রে সাহায্যকারীদেরও গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে, এত দূর যাওয়ার দরকার হবে না বোধ হয়। কারণ, সমাজের সম্মাননীয় ব্যক্তি তাঁরা প্রত্যেকেই। সম্মান যাওয়ার ভয়ে প্রত্যেকেই ঋণ শোধ করবেন। এবং আবার স্বচ্ছন্দে চলতে থাকবে বাংলার গ্রামের নিজস্ব সমবায় ব্যাঙ্কটি।

আদিত্য মুখোপাধ্যায়। কোটাসুর, বীরভূম

অপরিণামদর্শী

‘পুলিশ আদৌ কেন’ সম্পাদকীয়তে (৮-৭) প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে ‘... তাহার তারুণ্যের অপরিণামদর্শিতার কারণেই...’ পাঠ করিয়া মনে পড়িল রবীন্দ্রনাথের ‘সবুজের অভিযান’ কবিতার কথা। কবি সেখানে ‘সবুজ’ তরুণদের অপরিণামদর্শী হওয়ারই আহ্বান জানাইয়াছেন। সৌরভ চৌধুরী শতবর্ষের এই কবিতাটি পড়িয়াছিলেন কি না জানা না যাইলেও কবিতার মর্মবস্তু অনুযায়ী কার্য করিয়াছিলেন বলিয়া শত দুঃখের মধ্যেও আমাদের গর্ব হইতেছে।

শতবর্ষ পূর্বে ১৩২১ (১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দের ১৫ বৈশাখ ‘শান্তিনিকেতন’-এ বসিয়া কবি প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজ পত্র’-র জন্য ইহা লিখিয়াছিলেন। শতবর্ষ ধরিয়া এই কবিতা বাংলা তথা ভারতবর্ষের যুবাদের অন্যতম প্রেরণার উত্‌স। আমাদের রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ পালনের মাধ্যমে বাংলাকে রবীন্দ্রময় করিয়া তুলিয়া অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিতেছেন। বেচারা সৌরভ হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের মাধ্যমেই অনুপ্রাণিত হইয়াছিলেন। এক্ষণে প্রাণ দিয়া তাহার মূল্য মিটাইলেন।

তপোময় ঘোষ। শিবলুন, কাটোয়া, বর্ধমান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন