সম্পাদক সমীপেষু

স্কুলে শাস্তি যে কত রকমের হত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫
Share:

স্কুলে শাস্তি যে কত রকমের হত

Advertisement

আর্যভট্ট খান (‘ইশকুলের শাস্তি’, রবিবাসরীয়, ৭-৯) সত্তর বছর বয়সে আমারও ইশকুলজীবনের নানা স্মৃতিকে উসকে দিলেন। বাড়িতে তখন যেমন শাসন, ইশকুলে গিয়েও শান্তি নেই— সর্বত্রই শাস্তি পাওয়াটা আমাদের যেন অলিখিত নিয়ম ছিল। নয়া পয়সা চালু হওয়ার আগে গ্রামে বাবার কাছে মাত্র এক আনা নিয়ে কিছু কিনতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় সেই পয়সা হারিয়ে যায় ও ধুলোর মধ্যে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই দুঃসংবাদ বাবার কানে আসতেই পিঠে সজনে ডাঁটার কশাঘাত এখনও তো ভুলিনি। আর্যভট্টবাবুর লেখা শাস্তিগুলো আমার পাওয়া শাস্তিগুলোর সঙ্গে কিছু মিলে যাচ্ছে। অঙ্ক-স্যারের হাতে বগলের নীচে চিমটি ও আঙুলের ফাঁকে ষড়ভুজ পেন্সিল ঢুকিয়ে তিনি পেন্সিলটা পাক খাওয়াতে যে আর্তনাদ-সহ যন্ত্রণা— এখন কোনও ছাত্রের হলে কী কাণ্ড যে হত সেটা অনুমান করি।

তবে এর সঙ্গে একটা শাস্তির বিবরণ যোগ করতে ইচ্ছে করছে। পণ্ডিতমশাই বেশ কয়েক পাতা সংস্কৃত হস্তলিপির হোমটাস্ক দিতেন। ক্লাসে ঢুকেই তিনি হুঙ্কার দিতেন— যারা হাতের লেখা নিয়ে যায়নি, তারা যেন বেঞ্চির উপরে দাঁড়ায়। স্বভাবতই পিছনের বেঞ্চের সব ছেলেরাই নীরবে বেঞ্চের ওপর চেপে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সারা পিরিয়ড এ ভাবে থাকার পর শুরু হত অ্যাকশন। দাঁড়িয়ে থাকা এক-এক জনকে চুলের মুঠি ধরে উনি টেনে নামাতেন। ভল্ট দিয়ে যেন আমরা নীচে লাফাতেই পিঠে দুমদাম মার— যেন চোর ধরা পড়েছে। এই আওয়াজ অন্য ক্লাসের ছেলেরা শুনে কৌতূহলী হত। এ ছাড়া, আর্যভট্টবাবুর জ্ঞাতার্থে এক বিশেষ পদ্ধতি, নিলডাউনের কথা না বলে পারছি না— যেটা আমরা হামেশাই ভোগ করেছি। ক্লাসের বাইরে কান ধরে নিলডাউন— হাঁটুর নীচে কাঁকর ছড়ানো। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য অন্য ক্লাসের ছেলেরা দেখার জন্য উঁকি মারলে লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতাম, যাতে তারা আমার মুখটা দেখতে না পায়।

Advertisement

কথা হল, ইশকুলের এই সব লজ্জার ঘটনা বাড়িতে বলতে কুণ্ঠাবোধ করতাম। আর বাড়ির লোক কোনও প্রকারে জানতে পারলে তো আরও কেলেঙ্কারি। দ্বিতীয় দফায় বাড়িতে বাবা ছাড়াও অন্য অভিভাবকদের প্রহার। এখন যেখানে ইশকুলে ছাত্র মার খেলে ‘খবর’ হয়ে যায়, কত কাণ্ড ঘটে বা নিজের একমাত্র ছেলেকেও মারতে দ্বিধাবোধ করি, কারণ সে যদি আত্মঘাতী হয় অথবা নাতিনাতনিদের ধমক দিতেই ভয় হয়, যদি গৃহশান্তির বিঘ্ন হয়— সেখানে আমাদের শাসন-শাস্তিগুলো ভাবলে দুঃখের সঙ্গে একটা মানসিক তৃপ্তিও উপলব্ধি করি।

তন্ময় কাঞ্জিলাল। কলকাতা-৮২

¶ ২ ¶

খ্যাতনামাদের স্মৃতিকথায় সে কালের শিক্ষকদের অম্লমধুর নানান চিত্র আছে। রাজনারায়ণ বসু স্মরণ করেছেন তাঁর শিক্ষকের ভয়ঙ্কর ডাকের কথা— ‘তিনি যদি রাজনারায়ণ বলিয়া আমাকে ডাকিতেন, তখনই আমার আত্মাপুরুষ শুকাইয়া যাইত।’ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে পড়েছে গুরুমশায়ের তৈলসিক্ত বেতটির কথা— ‘তাঁহার একখানি ছোট বেত ছিল, নিজের দেহের সঙ্গে সেটিকেও তিনি সযত্নে তৈল মাখাইতেন।’ প্রমথ চৌধুরীর ভ্রাতাদের ‘শান্তিপুরে ধুতিচাদর আতর গোলাপজলে সৌরভিত’ শিক্ষকের কথা আছে অগ্রজা প্রসন্নময়ী দেবীর স্মৃতিকথায়। আর রসরাজ অমৃতলাল বসু যাঁর কথা লিখেছেন, তিনি তো সকলের চোখ অশ্রুসজল করে তোলেন— ‘এমনি লম্বা চড় তুলতেন, মনে হত এক চপেটাঘাতেই ভূমিসাৎ, কিন্তু নরম হাতখানি পিঠে পড়লেই পিঠ যেন জুড়িয়ে যেত। ছেলেরা কাঁদলেই তিনি কোলে করে বেড়াতেন। পবিত্র দেহমন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের গায়ে কত কত শিশুছাত্র যে মূত্রত্যাগ করেছে, তা বলা যায় না।’

এ তো গেল খ্যাতনামাদের গুরুমশায়ের কথা। খ্যাতনামা শিক্ষক নিজেও যে ছাত্রকে প্রহার করতেন, তারও নজির আছে। শান্তিনিকেতনের এক সময়ের খ্যাতনামা শিক্ষক জগদানন্দ রায়কে একদিন এক ছাত্রকে পেটাতে দেখেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঘরে ফিরেই তিনি জগদানন্দকে একটি চিরকুট পাঠান, যেটি সম্ভবত শিক্ষকশিক্ষিকাদের প্রতি চিরকালীন সতর্কবার্তা। দ্বিজেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন:

শোনো হে জগদানন্দ দাদা—

গাধারে পিটিলে হয় না অশ্ব

অশ্ব পিটিলে হয় যে গাধা।

শৈলেনকুমার দত্ত। শ্রীরামপুর, হুগলি

অন্য দিকটাও

সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (‘কেন ভাবব না’, সম্পাদক সমীপেষু, ৪-৯) পুলিশের যে তিনটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তা সত্যিই যথার্থ। পুলিশও মানুষ। তাই তাঁদের সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য কিছু অত্যাবশ্যক সুযোগসুবিধে প্রয়োজন, যা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।

তবে একই সঙ্গে পুলিশের অন্য কয়েকটি অন্ধকার দিক সম্পর্কে পত্রলেখক চুপ করে থেকেছেন। সেটিও বলা জরুরি। পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি ঘিরে হাত পেতে গাড়িচালকের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, এ দৃশ্য দেখেননি এমন মানুষ বোধ হয় কেউ নেই। আগে এই আদায়ের হার ছিল দশ-কুড়ি টাকা। এখন সম্ভবত তা বেড়ে পঞ্চাশ-একশো টাকাতে পৌঁছেছে। কারণ এখন পুলিশের এই হারে টাকা আদায় নজরে আসছে। তা ছাড়া পুলিশের রূঢ় কর্কশ ব্যবহার সম্পর্কে ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। হয়তো অপরাধীর সঙ্গে কথা বলার অভ্যাসটাই রপ্ত হয়ে থাকে। আর মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মিথ্যা কেস দিতে (অবশ্য যে কোনও শাসক দল ছাড়া) পুলিশের জুড়ি মেলা ভার। আবার টাকার বিনিময়ে সমস্যার রফা করতেও তারা খুবই ওস্তাদ।

সব মিলিয়ে পুলিশের প্রতি সমাজ ও প্রচলিত ব্যবস্থা যেমন অমানবিক, পুলিশও তেমনই অন্যদের প্রতি অমানবিক। দুটো অমানবিকতাই দূর হওয়া দরকার। নইলে পুলিশের বদনাম রদ হওয়ার নয়।

প্রদ্যোত পালুই। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

এই যে এ ক’দিন

কলকাতা কড়চায় (‘কবিতা থেকে গান’, ১৫-৯) দেখলাম, দেবলীনা ঘোষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৭টি কবিতায় সুর করে সিডি করেছেন। এই লেখার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সংবাদ জানাতে চাই। আমার অগ্রজ পরিজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘এই যে এ ক’দিন দেখা নেই কেন’ ২০১০ সালে আমার সুরে গান হিসেবে মেগাফোনের কমল ঘোষের আগ্রহে সিডিতে প্রকাশিত হয়।

দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। হাওড়া-১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন