সঙ্ঘ ও স্বয়ংসেবক
‘শুধু রাজনীতি দিয়ে সঙ্ঘকে বোঝা যায় না’ (বদ্রীনারায়ণ, ২৬-১১) শিরোনামটি যথাযথ। সঙ্ঘ আদৌ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই নয়, এর ঘোষিত এবং একমাত্র উদ্দেশ্য: হিন্দুকে হিন্দু হিসেবে (বাঙালি বা বিহারি, ব্রাহ্মণ বা চণ্ডাল, এই সব হিসেবে নয়) জাগ্রত বা সংগঠিত করা এবং এই আদর্শের ভিত্তিতে ‘মনুষ্য নির্মাণ’। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর এই পরিকল্পনা করেছিলেন যে, সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের মধ্যে যাঁরা রাজনীতি করতে চান, তাঁরা সঙ্ঘের বাইরে গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করুন, যাতে সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে কোনও ভাবে জল না মেশানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানই ভারতীয় জনসঙ্ঘ, যা পরবর্তী কালে ভারতীয় জনতা পার্টির রূপ পেয়েছে। অনুরূপ ভাবে যাঁরা ধর্মীয় ক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তাঁরাও প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ), যাঁরা শ্রমিক আন্দোলনে কাজ করতে চান, তাঁরাও করেন (ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ), যাঁরা ছাত্রকল্যাণের জন্য কাজ করতে চান, তাঁরাও করেন (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ওঠে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সঙ্ঘের সম্পর্ক কী? এর উত্তর, প্রেরণা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যারা স্বয়ংসেবক, তারাই জানি, এই সঙ্ঘের প্রেরণা আমাদের অন্তরে কত দূর প্রোথিত, প্রত্যেক স্বয়ংসেবকের (তা তিনি সঙ্ঘ বা অন্য যে-কোনও প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত হোন না কেন) চিন্তা, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের কত দূর গভীরে এই প্রেরণার শিকড় চলে গিয়েছে। একে আমরা বলি ‘সঙ্ঘের সংস্কার’। প্রসঙ্গত, ‘সঙ্ঘ পরিবার’ কথাটি আমরা স্বয়ংসেবকরা ব্যবহার করি না, এই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘বিবিধ ক্ষেত্র’ বলি। এই প্রেরণা ব্যাপারটা কিন্তু আলোচ্য প্রবন্ধটিতে আদৌ যোগ্য জায়গা পায়নি।
প্রবন্ধটিতে একটি বিচিত্র তত্ত্ব উপস্থাপিত করা হয়েছে: প্রবন্ধকারের ভাষাতেই ‘আরএসএস হল মোদীর রাজনীতির কমপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরক’, ‘ঠিক নরেন্দ্র মোদীর সাবস্টিটিউট বা পরিবর্ত নয়।’ যে প্রতিষ্ঠানটি রাজনীতি করেই না, তার পক্ষে রাজনীতির পরিপূরক বা পরিবর্ত হবার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে? মোদীর ব্যক্তিত্ব ও মোদীর রাজনীতির উৎস, মোদীর মস্তিষ্ক এবং স্বয়ংসেবক হিসেবে, প্রচারক হিসেবে, সেই মস্তিষ্কে সঙ্ঘের প্রেরণা ও সংস্কারে জারিত। ‘মোদীর কাজকর্মে, ভাবনাচিন্তার সঙ্গে কখনও আরএসএস-এর পথ কিছুটা মিলে যায়, আবার কখনও ভিন্ন হয়ে হিন্দুত্বের আলাদা রাজনীতির পথ তৈরি করে’— সম্পূর্ণ অসত্য। একটা উদাহরণ থাকলে এ নিয়ে বিতর্ক করা যেত, কিন্তু সে রকম কিছুই নেই।
প্রবন্ধকার যথানিয়মে এবং চিরাচরিত বাম-নেহরুবাদী পদ্ধতিতে সঙ্ঘকে ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘মুসলমান-বিরোধী’ বলে গাল পেড়েছেন, সে অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু প্রশ্ন করি, যে নির্লজ্জ মুসলমান তোষণের দৃষ্টান্ত আমরা নেহরুর আমল থেকে বর্তমান মমতার আমল পর্যন্ত দেখে আসছি, যার মূলে আছে মুসলমান ভোট কব্জা করার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা, তা কি অসাম্প্রদায়িক, না মুসলমানের দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থের অনুকূলে? মুসলমান ভোটের দিকে তাকিয়ে নেহরু ইউনিফর্ম সিভিল কোড হতে দেননি, নাম্বুদিরিপাদ কেরলে মুসলমান-প্রধান মালাপুরম্ জেলা তৈরি করেছিলেন এবং এঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিজাব চড়িয়ে নমাজের অভিনয় করেন, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সরকারি তহবিল থেকে ভাতা দেবার চেষ্টা করেন, এগুলি অসাম্প্রদায়িক? এর ফলে কি হিন্দু-মুসলমান বিভেদ আরও বাড়ছে না? মুসলমানদের জাতীয় মূলস্রোতে আসা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না?
তথাগত রায়। ভূতপূর্ব সভাপতি, ভারতীয় জনতা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ
‘কুঁড়ো’ নয়
সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা সান্ধ্যকালীন ছবি (‘ধান ঝাড়ার পর কুলোর হাওয়ায় ওড়ানো হচ্ছে ধানের কুঁড়ো’, ২৩-১১) দেখে মুগ্ধ হলাম। গ্রামবাংলার কৃষকদের হৈমন্তিক ফসল গোলায় তোলার এ দৃশ্য আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। প্রযুক্তির কল্যাণে কুলোর জায়গা দখল করেছে মোটরচালিত বৈদ্যুতিক পাখা। যার নিরবচ্ছিন্ন হাওয়ায় অনায়াসে অতি অল্প সময়ে সদ্য-ঝাড়া ধানের— কুঁড়ো নয়— কুটি বা কুটো ওড়ানো যায়। এমনকী চিটে ধানও সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। ‘কুঁড়ো’ হল ধানের তুষ বা খোসা। যা ধান ভানার পরই পাওয়া যায়। ছড়াতেই তো আছে ‘ধান ভানলে কুঁড়ো দেব...।’
ভানুপ্রসাদ ভৌমিক। ডানকুনি, হুগলি