নিজস্ব চিত্র।
এ বছরই প্রথম সেমেস্টার পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। সেই অনুযায়ী শেষ হয়ে গিয়েছে প্রথম পর্বের পরীক্ষা। আর তার পরই দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত পর্ব নিয়ে ঘনিয়েছে আশঙ্কার কালো মেঘ। বিধানসভা নির্বাচনের কারণে এগিয়ে আনা হচ্ছে পরীক্ষা। অথচ, এখনও শুরু হয়নি ক্লাস, পাঠ্যক্রম বিস্তর। কী ভাবে শেষ হবে এতগুলি বিষয়ের পাঠ, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষকমহল।
২০২৬ সালে রয়েছে এ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। সে কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত সেমেস্টার পরীক্ষা এগিয়ে আনা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। সেমেস্টার পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী, ছ’মাস পঠনপাঠনের পর পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু সে সময় পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গিয়েছে, আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে। এ দিকে প্রায় গোটা অক্টোবরে বন্ধ থাকছে স্কুল। সরকারি ভাবে পঠনপাঠন শুরু হবে চলতি বছর ২৫ অক্টোবর। অর্থাৎ, সাকুল্যে মাস তিনেক সময় পাবেন শিক্ষকেরা। তার মধ্যেও রয়েছে অন্য নানা পরীক্ষা। যার ফলে ব্যাহত হতে পারে দ্বাদশের পঠনপাঠন।
নারায়ণদাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “এখনও পর্যন্ত ক্লাস শুরুই করা যায়নি, সিলেবাস শেষ করা তো দূরের কথা! নভেম্বর থেকে পুরোদমে পঠনপাঠন শুরু হলেও হাতে মাত্র ৯০ দিন সময় পাওয়া যাবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।” শিক্ষকমহলের একাংশ মনে করেন, হয় পাঠ্যক্রমের চাপ কমাতে হবে, অথবা, পরীক্ষা পিছোতে হবে।
হিসাব মতো, ১৬ মার্চের পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। গত ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা। তার পরই পুজোর ছুটি পড়ে গিয়েছে। নভেম্বরে ক্লাস শুরু হলেও নানা কার্যক্রম রয়েছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চলতি বছর ৩-১৩ ই নভেম্বরের সমস্ত স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্ট হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির সামিটিভ পরীক্ষা হবে। ফলে সেই সময়ও ক্লাস বিঘ্নিত হবে বলে মনে করছে স্কুলগুলি। তা ছাড়া, ডিসেম্বরের শেষে পড়বে শীতাবকাশ। জানুয়ারি মাসে রয়েছে যুব দিবস, নেতাজি জয়ন্তী, সাধারণতন্ত্র দিবস-সহ একাধিক সরকারি ছুটি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে সরস্বতী পুজো— সবই থাকবে এই সময়। ফলে পড়ুয়ারা ৭০-৭৫ দিনও সময় পাবে না।
এ প্রসঙ্গে পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “এত কম সময়ের মধ্যে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী প্রাকটিক্যাল ও থিওরির সমস্ত পাঠ শেষ করা কার্যত অসম্ভব। শিক্ষা সংসদের উচিত পড়ুয়াদের কথা ভেবে সিলেবাস ছোট করা।”
তবে, এ বিষয়ে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তাদের ব্যাখ্যা, সরকারের অনুমতি নিয়েই ২০২৬ সালের পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শনী মল্লিক বলেন, “সিলেবাস নিয়ে চিন্তা না করে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করুক। পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে কাউন্সিল সর্বদা লক্ষ্য রাখবে। তবে এই মুহূর্তে পরীক্ষার সময় বা সিলেবাস পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।”
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীনে স্কুল রয়েছে ৬৭৭ টি। কম সময় থাকার জন্য চিন্তিত অভিভাবকেরাও। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ইতিমধ্যেই একাদশ ও দ্বাদশের বিভিন্ন বিষয় পড়াশোনার জন্য ঘণ্টা পিছু ক্লাসের সময়ও বেঁধে দিয়েছে। কোন বিষয়ে কত ঘণ্টা ক্লাস হবে, বা সেই বিষয় থেকে সেমেস্টারে কত নম্বরে প্রশ্ন করতে হবে— তা-ও ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।