রংহীন জীবন ১৭ বছরের কন্যার কাছে বাধা নয়, শক্তি হয়ে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র দু’বছর বয়সে প্রতিবেশীর অ্যাসিড হামলায় দৃষ্টি হারিয়েছেন। অন্ধকার এবং রংহীন জীবন ১৭ বছরের কন্যার কাছে বাধা নয়, শক্তি হয়ে উঠেছে। চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা কাফি এ বারের সিবিএসই দ্বাদশের পরীক্ষায় পেয়েছেন ৯৫.৬ শতাংশ নম্বর। তাঁর অবসরের সঙ্গী সঙ্গীত এবং ক্রিকেট। তাই প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে মন খারাপ তাঁর। তবে কাফির আশা, এখনও এক দিনের ক্রিকেট, আইপিএলে তাঁকে দেখার সুযোগ থাকছে, সেটাই বা কম কী!
চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ডের ছাত্রী কাফির প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংহ। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমার ‘দেবা দেবা’ গানটি তাঁর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। অবসরে গান শুনতে এবং নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন তিনি। তবে তাঁর আগামীর লক্ষ্য ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস)। প্রাক্তন আইএএস অফিসার বিকাশ দিব্যাকৃতিকে আদর্শ মনে করেন কাফি। তাঁর মতে, আইএএস হলে সমাজের সর্বস্তরের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবেন। এ ছাড়াও তিনি বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে সাহায্য করতে চান, বিশেষ করে যাঁরা পরিবারের সমর্থন পায় না।
মা বাবা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কাফি। ছবি: সংগৃহীত।
তবে এ ক্ষেত্রে কাফির মা বাবা তাঁকে শুরু থেকেই ভীষণ ভাবে সাহস জুগিয়েছেন। পারিবারিক ঝগড়ার কারণে মেয়ের মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেরালেও দাঁতে দাঁতে চেপে লড়াই চালিয়ে গেছেন অটোচালক বাবা পবন। তাঁর কথায়, “আমি গর্বিত। ওই ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে দেখতে পায় না, কিন্তু তার জন্য আমরা সবসময় ওকে সাহস দিয়েছি, যাতে ওর মনোবল ভেঙে না পড়ে।” উল্লেখ্য, প্রতিদিন নিয়ম করে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন কাফি, তবে ভোরের বদলে রাত জেগে পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হত তাঁর।
চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ডের তরফে প্রকাশিত হয়েছে মেধা তালিকা। ছবি: সংগৃহীত।
কাফি হতাশা বা দুশ্চিন্তার বেড়াজাল থেকে মুক্ত সমাজের আশা রাখেন। তিনি বলেন, “ইচ্ছাশক্তিই সব, তাতে ভরসা রাখতেই হবে। পরীক্ষায় ভাল ফল না করা কিংবা শুরুর এক ধাপে পিছিয়ে পড়াই জীবনের শেষ নয়। বরং সেই অধ্যায়ের হাত ধরেই জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হবে।”
শুধুমাত্র কাফি-ই নয়, চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড থেকে সুমন পোদ্দার (৯৪ শতাংশ) এবং গুরশরণ সিংহ (৯৩.৬ শতাংশ) নম্বর পেয়ে সিবিএসই-এর দ্বাদশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।