জট অব্যাহত! নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগের জট কি এত সহজে কাটবে? প্রশ্নটা অনেক দিন আগেই উঠেছিল এ রাজ্যে। এ বার বাস্তব হয়ে দেখা দিল সেটাই। স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ পেতেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
অভিযোগ, পূর্ণ নম্বর পাওয়ার পরও ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাননি বহু চাকরিপ্রার্থী। কারণ তাঁরা এই প্রথম পরীক্ষায় বসছেন। কেউ এর আগে পরীক্ষা দিলেও চাকরির সুযোগ পাননি। তাই অভিজ্ঞতার জন্য দেওয়া ১০ নম্বর পাননি কেউই।
গত ৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন অনেক নতুন প্রার্থীই। তাঁদের অনেকেই পূর্ণমান ৬০-এর মধ্যে পেয়েছেন ৬০। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের জন্য যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে তাঁদের নাম নেই। অর্থাৎ, যথার্থ যোগ্য হয়েও তাঁরা এ বার শিক্ষকতার চাকরিটি জোটাতে পারলেন না।
ইন্টারভিউয়ে জন্য ডাক না পেয়ে ক্ষুব্ধ এই নবীন চাকরিপ্রার্থীরা। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী তাঁরা সোমবার সকালে করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন অভিযান শুরু করেছেন। দাবি, ইন্টারভিউয়ের আগে অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া আরও ১ লক্ষ শূন্যপদ তৈরি করতে হবে, যাতে নতুন প্রার্থীরাও চাকরি পান।
এ দাবি অবশ্য নতুন নয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বার বার এই দাবি নিয়ে পথে নেমেছেন নতুন চাকরিপ্রার্থীরা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বাতিল হওয়া ২০১৬-র প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের সকলকে বরখাস্ত করা হয়। তবে সকলেই যে দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছিলেন তা নয়। তাই প্রকাশ করা হয় ‘যোগ্য’দের তালিকা। আর তাঁদেরই অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার কথা ঘোষণা করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
নতুন চাকরিপ্রার্থীরা প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন। সোমবার পথে নেমেছিলেন মালদার বাসিন্দা মোক্তার আহমেদ খান। তিনি বলেন, “আমি ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, লিখিত পরীক্ষায় ৬০-এর মধ্যে ৬০ নম্বরই পেয়েছি। আর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার জন্য ১০ নম্বর দেওয়া হয়েছে। অথচ কাট অফ মার্কসের বিচারে আমি পাশ করিনি। অন্য দিকে ওই ১০ নম্বরের জন্যই এগিয়ে গেছেন অনেকেই। এই ভাবে কেন বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে যোগ্যদের?”
যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, অনলাইনে জমা দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে এবং ৬০ নম্বর লিখিত পরীক্ষার মার্কস যোগ করে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। এই তালিকা থেকেই নথি এবং শংসাপত্র যাচাই করে চূড়ান্ত পর্বের অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারভিউ লিস্ট প্রকাশ করা হবে।
তাই নথি যাচাই করার সময় যদি কোনও ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর নাম সেই তালিকায় থাকে, তা হলে তা বাদ দেওয়া হবে। সেই ক্ষমতা কমিশনের হাতেই রয়েছে। তবে, কমিশন এ-ও জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনেই বিশেষ ভাবে সক্ষম প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, তা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ দিকে এ দিনই ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অভিজ্ঞতার অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টি উঠেছে হাইকোর্টে।