Happiness Earns Credits

হাসিখুশি থাকার শিক্ষাতেও মিলবে ক্রেডিট; ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনায় বদল আনতে বিশেষ পদক্ষেপ

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের সফ্‌ট স্কিল শেখাতে ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স হিসাবে ওয়েলবিয়িং, হ্যাপিনেস-এর মতো বিষয় পড়া বাধ্যতামূলক করেছে আইআইটি খড়্গপুর এবং আইআইইএসটি শিবপুর।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:১২
Share:

ছবি: এআই।

ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার পাঠ্যক্রমে যেমন যন্ত্রমেধা, মেশিন লার্নিং, ন্যানো টেকনোলজির মতো বিষয় যোগ হয়েছে, তেমই পড়াশোনা এবং পরীক্ষা পদ্ধতি জটিল হয়ে উঠেছে। পড়ুয়াদের ভাল নম্বর বা চাকরির জন্য শুরুতেই ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে হচ্ছে। আর তাতেই থমকে যাচ্ছেন অনেকে। তাই, দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার বিষয়ে যোগ হয়েছে ভালো থাকার পাঠও। আইআইটি খড়্গপুর এবং আইআইইএসটি শিবপুরের তরফে ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স হিসাবে ওই বিষয়টি পড়ানো হবে। যন্ত্রের কলকব্জার কারিগরি বিদ্যা এবং প্রযুক্তি নিয়ে চর্চার মাঝে এই বিষয়টির সংযোজন কেন?

Advertisement

আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা সুমন চক্রবর্তীর কথায়, স্কুল স্তরের চেনা গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেও নতুন পরিবেশে সব পড়ুয়ারা মানিয়ে নিতে পারেন না। তাই তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় এবং ভাল থাকার কথা মাথায় রেখে কোর্সের ক্লাস করানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের তরফে ‘লাইফ স্কিল’ এবং ‘জয় অ্যান্ড সাক্সেস’ শীর্ষক দু’টি কোর্সের ক্লাস করানো হয়। প্রথমটি স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য বাধ্যতামূলক কোর্স হলেও দ্বিতীয়টি স্নাতকের অন্যান্য বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য ঐচ্ছিক। কোর্সের মাধ্যমে যে কোনও পরিবেশে যে কোনও মানুষের কথা বলতে পারা, সময় মতো সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিতে পারা, দলবদ্ধ ভাবে কাজ করে নেওয়ার মতো ‘সফ্‌ট স্কিল’ তৈরিতে জোর দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, একের পর এক পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরকে। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, জেইই পাশ করে আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার সময়েই একজন পড়ুয়ার মধ্যে কোটি টাকার চাকরি পাওয়ার যে চাহিদা তৈরি করছে, তাতেই সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে বিশেষ কর্মসূচিও শুরু করা হয়েছিল। পঠনপাঠনের পদ্ধতির রদবদল হওয়ায় যাতে পড়ুয়ার ক্লান্ত না হয়ে পড়েন এবং কর্মজীবনের চাপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন, তা-ও শেখাতে চাইছে আইআইটি খড়্গপুর।

Advertisement

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুরেও ‘ওয়েলনেস অ্যান্ড হ্যাপিনেস’ শীর্ষক ভ্যালু অ্যাডেড কোর্সটিও সকল পড়ুয়াদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওই কোর্সের জন্য আলাদা করে ক্রেডিট পয়েন্টও পাবেন পড়ুয়ারা।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের ১২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অধিকর্তা ভিএমএসআর মূর্তি জানিয়েছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী ওই কোর্সটি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “নতুন পরিবেশে থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পড়ুয়াদের মানসিক ভাবে প্রস্তত করতেই ওই কোর্স চালু করা হয়েছে।”

কলেজ কাউন্সেলর সং‌যুক্তা আচার্য কোর্সের ইন্টার‌্যাক্টিভ ক্লাস করান। এ ছাড়াও পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে হিউম্যানিটিজ় অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষকেরাও ক্লাসে পড়াবেন। কী ভাবে খুঁজে নিতে হবে জীবনের আনন্দ, লড়াই করতে হবে দুঃখ-অবসাদের সঙ্গে বা চাকরির জন্য কী ভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে—সবই ওই কোর্সের মাধ্যমে শেখানো হয়।

তবে, এখনই এমন কোনও কোর্স চালু করার কথা ভাবছে না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, পড়ুয়াদের চাপমুক্ত রাখতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট-এর জন্য বিশেষ লেকচার কিংবা কর্মশালা করানো হয়। আলাদা করে কারোর কোনও সমস্যা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টারে গিয়েও কথা বলার সুযোগ রয়েছে।”

আইআইটি মাদ্রাজ-এর সেন্টার ফর দ্য সায়েন্স অব হ্যাপিনেস থেকেও পড়ুয়ারা সুখশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পায়। তবে, এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট পাওয়ার ব্যাপার নেই। যদিও এই সমস্ত কোর্স বা সেন্টারের মূল লক্ষ্য একটাই, সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের উন্নয়ন, মানসিক চেতনার বিকাশ ঘটানো, সৃজনশীল ভাবনার বহিঃপ্রকাশ এবং ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শেখানো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement