শিক্ষানবিশ হিসাবে কারা কাজ শেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন? প্রতীকী চিত্র।
সংবাদপত্রে হামেশাই শিক্ষানবিশ (অ্যাপ্রেন্টিসশিপ) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। রেল, ব্যাঙ্ক, প্রতিরক্ষা, উৎপাদন শিল্প, কারখানা, টাঁকশালের মতো একাধিক ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশদের চাহিদাও রয়েছে বিপুল। চলতি মাসেই, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম রেল, হুগলি কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড, হিন্দুস্থান এরোনটিক্স লিমিটেডের মতো বেশ কিছু সংস্থায় শিক্ষানবিশদের আবেদনও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কারা হতে পারেন শিক্ষানবিশ? তাঁদের কোন কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়? তারই বিশদ তথ্য দেওয়া হল।
শিক্ষানবিশ হতে পারেন কারা?
দশম পাশ থেকে শুরু করে স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত— সকলেই শিক্ষানবিশির সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে, এর জন্য রেল, বন্দর, বিমান পরিষেবার মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটস (আইটিআই)-এর বিভিন্ন ট্রেডে শংসাপত্র থাকা প্রয়োজন।
আইটিআই কী?
আইটিআই থেকে সাধারণত যন্ত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কিত বিষয়ে কাজ শেখানো হয়ে থাকে। ফিটার, টার্নার, ওয়েল্ডার, মেকানিস্ট, ইলেক্ট্রিশিয়ান, এয়ার কন্ডিশনার অ্যান্ড রেফ্রিজারেটর মেকানিক - যন্ত্রের একাধিক অংশের মেরামত করা কিংবা তার রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলিই সাধারণত শিক্ষানবিশদের শেখানো হয়। আইটিআই শংসাপত্র অর্জনের পর ন্যাশনাল অ্যাপ্রেন্টিসশিপ ট্রেনিং স্কিমে (ন্যাটস) নাম নথিভুক্ত করতে হয়, যাতে ডিআরডিও, ইসরো, রেল, ব্যাঙ্ক, বন্দরের মতো একাধিক ক্ষেত্রে অ্যাপ্রেন্টিসশিপের জন্য আবেদন করা যায়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন উৎপাদন-নির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ কেমন, কী ধরনের যন্ত্র চালনা করতে হয়, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা, বা সমস্যা হলে তার সমাধান কী ভাবে করা সম্ভব, তারই প্রশিক্ষণ শিক্ষানবিশির সময় দেওয়া হয়ে থাকে।
বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়ারাই শিক্ষানবিশ হতে পারেন?
সাধারণত, বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক বা ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরই যন্ত্র সংক্রান্ত কাজে শিক্ষানবিশ হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি, কলা এবং ম্যানেজমেন্ট শাখার পড়ুয়ারাও অ্যাপ্রেন্টিসশিপের সুযোগ পেতে পারেন। সরকারি সংস্থাগুলিতে মার্কেটিং, ফিনান্সিং, প্রকাশনা, গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষানবিশ বেছে নেওয়া হয়। ডিআরডিও, ইসরো-র মতো সংস্থায় প্রতি বছর এমন ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
সরকারি সুবিধে:
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মোট তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষানবিশদের প্রশিক্ষণ, ভাতা এবং ক্ষেত্র বিশেষ সুবিধে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ন্যাশনাল অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোমোশন স্কিম, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং এবং স্কিল ইন্ডিয়া মিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের শিক্ষানবিশির জন্য আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি, বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে পাঠরতদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন কেন্দ্রের নির্ধারিত অঙ্কের ভাতা প্রত্যেককে দেওয়া হয়। এই মর্মে ৭ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা প্রতি মাসের ভাতা বরাদ্দ থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার শুধুমাত্র ট্রাভেল অ্যালায়োয়েন্সই মেলে।
প্রশিক্ষণের পর চাকরির সুযোগ?
তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে সমস্ত সংস্থার তরফে শিক্ষানিবিশির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই সংস্থাতেই সরাসরি চাকরি পেয়ে যাওয়ার বিষয়টি কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কাজের যাবতীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর সেই সংস্থায় শূন্যপদ থাকলে, সেখানে আলাদা করে আবেদন পাঠাতে হবে। আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে যোগ্যতার বিচারে চাকরি মিলবে।
সাধারণত, শিক্ষানবিশির প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার নিরিখেই ‘বিগিনার লেভেল’-এর কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যায়। রেল, প্রতিরক্ষা বিভাগ, উৎপাদন শিল্পক্ষেত্র, টাঁকশালের মতো জায়গায় এই ধরণের প্রশিক্ষিতদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সরকারি সংস্থাগুলিতে নিয়মিত ভাবে অ্যাপ্রেন্টিসশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আগ্রহীদের ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিসেস (কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত) ওয়েবসাইটেও নজর রাখতে পারেন।