উচ্চ শিক্ষার বিষয় যখন আলোর ‘ফোটন’ কণা, ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রয়োজন কোন যোগ্যতার? প্রতীকী চিত্র।
‘ফোটন’ কণা নিয়েও পড়াশোনা করা যায়। বিষয়ের নাম ফোটোনিক্স। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে আলোর মৌলিক কণার খুটিনাটি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে, পড়াশোনার পাশাপাশি, গবেষণা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর চাহিদা যথেষ্ট। কারণ আলোর গতিতে চলতে পারে এমন কণাকে চিকিৎসা, টেলিকমিউনিকেশন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তথ্যের আদান প্রদান এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কোথায় পড়ানো হয়?
রাজ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই একমাত্র এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ১৮টি করে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইআইটি দিল্লি, এনআইটি ওয়ারাঙ্গল, কোচিন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স-সহ বেশ কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সার্কিট তৈরি করা বা ডেটা ট্রান্সমিশনের কাজে ফোটোনিক্সের অবদান রয়েছে।
কারা পড়তে পারবেন?
বিজ্ঞান শাখার বিষয় নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হয়েছেন, এমন পড়ুয়ারা স্নাতক স্তরে পড়ার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশনে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গণিত থাকা প্রয়োজন।
স্নাতকোত্তর স্তরের ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের স্নাতকদের ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিষয়গুলি হল, পদার্থবিদ্যা, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল, অপটোইলেকট্রনিক্স, বায়োমেডিক্যাল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে, এ ক্ষেত্রে তাঁদের গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপটিটিউড টেস্ট (গেট) উত্তীর্ণ হতে হবে।
কোন কোর্স করার সুযোগ?
আইআইটি মাদ্রাজ, আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোরের তরফে অনলাইনে এই বিষয়ে বিশেষ কোর্স করানো হয়।
আর পাঁচটি বিষয়ের থেকে কতটা এগিয়ে এই বিষয়টি?
ফোটোনিক্সের সাহায্যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সার্কিট তৈরি করা বা ডেটা ট্রান্সমিশনের কাজ সহজেই করা সম্ভব। তাই কমিউনিকেশন, প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, এমনকি প্রতিরক্ষা বিভাগের কাজেও এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিতদের চাহিদা রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড অপটিক্স অ্যান্ড ফোটোনিক্স-এর বিভাগীয় প্রধান কল্লোল ভট্টাচার্যের মতে, ফোটোনিক্সের মতো বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির চাহিদা অন্য বিষয়ের তুলনায় খানিকটা হলেও বেশি। কারণ, এই বিশেষ কণার উপরই বিশ্বের প্রযুক্তি বিভাগের অধিকাংশ কাজ নির্ভরশীল।
পড়াশোনার খরচ কেমন?
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে পড়তে চাইলে ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হতে পারে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনার খরচ ২ লক্ষ টাকা কিংবা তার বেশি হতে পারে।
কমিউনিকেশন, প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, এমনকি প্রতিরক্ষা বিভাগের কাজেও এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিতদের চাহিদা রয়েছে।
গবেষণা এবং কাজের সুযোগ:
বায়োমেডিক্যাল, টেলিকমিউনিকেশন, এরোস্পেস বিভাগে ফোটোনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়াও অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবেও কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কল্লোল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ফোটোনিক্স বিষয়ে উচ্চশিক্ষিতদের চাহিদা থাকায় সরকার অধীনস্থ এবং বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় না। তবে, সরকারি ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়াটা আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়।
গবেষণার ক্ষেত্রেও ফেলোশিপ পেয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দেশের পাশাপাশি, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও আবেদন গ্রহণ করে থাকে।
সদ্যই আইআইটি মাদ্রাজের তরফে একটি বিশেষ গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সিলিকন ফোটোনিক্স নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ফোটোনিক্স স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে সামগ্রীর প্রোটোটাইপ তৈরিতে সহায়তা করা হবে। ওই কেন্দ্রে গবেষণার কাজ করছেন রিসার্চ স্কলাররাই।