বিমানের যাত্রীদের যাঁরা পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁদের ‘কেবিন ক্রু’ বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত।
বিমান সফরে ‘কেবিন ক্রু’-দের ভূমিকা পাইলট বা ফার্স্ট অফিসারদের মতই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষ কর্মীরা বিমানসেবক বা বিমানসেবিকা হিসাবে বেশি পরিচিত। যাত্রীদের নানা আবদার হাসিমুখে শুনে যথাযথ পরামর্শ দেন, আবার কখনও খুদে যাত্রীদের উড়ানের ভয় কাটাতেও সাহায্য করেন ‘কেবিন ক্রু’-রা।
এয়ারহোস্টেস আর ‘কেবিন ক্রু’ কি এক?
ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট হিসাবে ‘কেবিন ক্রু’ নিয়োগ করা হলেও নিযুক্তরা সাধারণত এয়ারহোস্টেস বা এয়ারহোস্ট নামেই বেশি পরিচিত। কারণ ১৯৩০-এর পর থেকে বেশির ভাগ সময় মহিলারা বিমানসেবিকা হিসাবে কাজ করতেন বলে, ‘এয়ারহোস্টেস’ শব্দবন্ধটি জনপ্রিয় হয়। পরে পুরুষ কর্মীরাও এই কাজে যোগ দিতে শুরু করলে, ‘কেবিন ক্রু’ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে মহিলাদের পাশাপাশি, পুরুষেরাও এই পেশার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ দেখান। বর্তমানে দেশ জুড়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবার সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ হাজার ব্যক্তি কাজ করে থাকেন।
কারা হতে পারবেন?
সাধারণত, ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সি দ্বাদশ উত্তীর্ণদেরই এই কাজে নিয়োগ করা হয়। কারণ, চলন্ত বিমান আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার জন্য শারীরিক সক্ষমতা বিশেষ ভাবে থাকা প্রয়োজন। এর জন্য তরুণ ব্যক্তিদেরই ওই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়। যাতে বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে বিমান চলাচল করে, সেই স্তরে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলেও তাঁরা স্বচ্ছন্দে বিমান পরিষেবা দিতে পারেন। তবে, ২৫ বছরের বেশি বয়সিদের এই কাজের জন্য নিয়োগ করা হয় না।
যাত্রীদের নানা আবদার হাসিমুখে শুনে যথাযথ পরামর্শ দেন ‘কেবিন ক্রু’-রা। প্রতীকী চিত্র।
কোন কোন শর্তে চাকরির সুযোগ?
‘কেবিন ক্রু’-এর কাজ কী?
বেতন এবং কাজের সময়:
এয়ার ইন্ডিয়ার মতো একাধিক বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলিতে শুরুতে ২ লক্ষ টাকা বার্ষিক বেতন হিসাবে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে অভিজ্ঞতার নিরিখে ওই বেতনের অঙ্ক ৮ লক্ষের গণ্ডিও পেরিয়ে যেতে পারে।
তবে, বিমান পরিষেবায় কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকার কারণের ‘ওয়ার্কিং আওয়ার’ নেই। একটি বিমানবন্দর থেকে বিমান উড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অন্যত্র পৌঁছে যাওয়া পর্যন্তই ‘কেবিন ক্রু’দের কাজ করতে হয়। সেই মতো দিনে এক বার যাতায়াত হতে পারে, আবার একাধিক বার একাধিক স্থানেও যেতে হতে পারে।
যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেন ‘কেবিন ক্রু’। প্রতীকী চিত্র।
কোনও কোর্স কি করানো হয়?
রাজ্যে ব্যাচেলর অফ বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ইন এভিয়েশন অপারেশন বিষয়টি বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়। এর মধ্যে সরকারপোষিত মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ম্যাকাউট)-এর সেন্টার অফ কোলাবরেটিভ প্রোগ্রামস-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোর্সটি করানো হয়ে থাকে। ক্লাস করানো হয় জেটি এভিয়েশন কলেজে।
এ ছা়ড়াও রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি, ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় উড়ান অ্যাকাডেমি, পঞ্জাব এয়ারক্রাফ্ট মেনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, তেলঙ্গানা স্টেট এভিয়েশন অ্যাকাডেমির মতো দেশের বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট বা এভিয়েশন অপারেশন বিষয়টি স্নাতক স্তরে পড়ানো হয়ে থাকে। এই বিষয়ের মধ্যেই ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট বা কেবিন ক্রু-এর খুঁটিনাটিও শেখানো হয়।
এ ছাড়াও মিনিস্ট্রি অফ সিভিল এভিয়েশনের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এ দ্বারা স্বীকৃত বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কেবিন ক্রু হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) তরফেও এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
খরচ:
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ৯০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত কোর্সপিছু খরচ হতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি ধার্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও গ্রুমিং, ইউনিফর্ম সংক্রান্ত বিষয়েও আলাদা করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।