গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রাজ্যের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে ওঁদের বেড়ে ওঠা। জীবন মানে সংগ্রাম— তা জানেন বিস্তর। লেখাপ়ড়া শেখার স্বপ্ন তবু বিসর্জন দেননি পুরুলিয়ার ইন্দ্রজিৎ বাড়ুই, সুমন মাঝি, সুদর্শন মাঝিরা। আইটিআই-এ পড়ার সময়ই নানা উদ্ভাবনের মধ্যে তাঁরা ভেবেছেন নিজেদের গ্রামের কথা, ভেবেছেন পরিবেশের কথা। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন পুনর্ব্যবহার্য শক্তি কাজে লাগাতে। বৃষ্টির জল জমিয়ে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভাবছেন তাঁরা।
লাগাতার বৃষ্টিতে বিদ্যুৎবিভ্রাট অনিবার্য, দেশের যে কোনও প্রত্যন্ত প্রান্তে। কিন্তু সেই বৃষ্টির জলই যদি বিদ্যুৎ তৈরি করে তা হলে ভালই হয়। তাতেই ঘরে জ্বলবে আলো, ঘুরবে পাখা। আইটিআই পুরুলিয়ার ২০ জন পড়ুয়া নিজেরাই বানিয়েছেন এমন মডেল। চলছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
অযোধ্যা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির জল জমানো হয়। সেই জল থেকেই তুর্গা পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। সেই কেন্দ্রের কর্মপদ্ধতির কথা মাথায় রেখেই বিশেষ মডেল তৈরি করেছেন গর্ভনমেন্ট আইটিআই, পুরুলিয়ার পড়ুয়ারা। এই মডেলটি জমানো বৃষ্টির জল থেকে ১ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
গর্ভনমেন্ট আইটিআই, পুরুলিয়ায় রয়েছে সেই মডেল। ছবি: সংগৃহীত।
সুমন, সুদর্শনেরা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু পরিবারের তেমন সঙ্গতি কোথায়? তাই আইটিআই সেরে ডিপ্লোমা কোর্সই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও চলছে। এই দারিদ্রই তাঁদের শিখিয়েছে বিকল্পের সন্ধান করতে। এখন বহু গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। সে কথা মাথায় রেখেই মডেলটি তৈরি করেছেন তাঁরা, যাতে কম খরচে জেনারেটর, টারবাইন, কিছু সার্কিট ব্যবহার করে জলযন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
সুদর্শন বলেন, “বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটা খরচ আছে, সেটা যদি কম করা যায়, তা হলে আমাদের মতো কত ছেলের পড়াশোনায় সুবিধা হবে। তা ছাড়া পুনর্ব্যবহার্য শক্তির প্রয়োগ বাড়লে আখেরে মানুষেরই লাভ।”
কী ভাবে তৈরি হল এই মডেল?
আইটিআই পড়ুয়াদের বিভিন্ন ট্রেডের অধীনে হাতেকলমে কাজ শেখানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার পর মূল্যায়ন। সে ক্ষেত্রেই এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন অধ্যক্ষ অভিজিৎ কুণ্ডু। সেখানেই ওয়্যারম্যান ট্রেডের ২০ পড়ুয়া বৃষ্টির জল থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার মডেল তৈরি করেন।
হাইড্রলিক পাওয়ার জেনারেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে টারবাইন ঘুরিয়ে দ্রুত গতিতে নেমে আসা জল থেকে শক্তি তৈরি করতে পারে ওই মডেল। এই মডেল তৈরিতে সাহায্য করেছেন ইলেকট্রিশিয়ান ট্রেডের ছাত্ররাও।
ওই মডেলটি নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছেন পুরুলিয়ার আইটিআই পড়ুয়ারা। ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানে ওই মডেলটির সাহায্যে একটি বাড়িতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।
পড়ুয়াদের এই কাজে সাহায্য করেছিলেন শিক্ষক মধুসূদন মাজি। তিনি বলেন, “অযোধ্যা পাহাড়ের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি নিয়ে ওঁদের কিছু নির্দেশ দিয়েছিলাম। আপাতত কলেজেই এই মডেল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। বৃষ্টির জল জমিয়ে আরও বিভিন্ন মডেল তৈরির কাজে পড়ুয়াদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।”